ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ময়মনসিংহের গৌরীপুর প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার , ২১ আগস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২৬ সফর ১৪৪৭ :
এক সময় গ্রামাঞ্চলের পথঘাট ও ঝোপঝাড়ে পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে উঠতো কাঁটা বেগুনের গাছ। আগাছা হিসেবে পরিচিত সেই গাছকেই কাজে লাগিয়ে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে বাজিমাত করেছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরের কৃষক মো. শহীদুল্লাহ।
গ্রাফটিং পদ্ধতিতে বেগুন গাছে টমেটোর ভালো ফলন পেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বাজারে ভালো দাম থাকায় মাত্র দুই মাসে ১৮ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে লাখ টাকার বেশি টমেটো বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন শহীদুল্লাহ।
Advertisement
স্থানীয়রা জানান, টমেটো মূলত শীতকালীন সবজি। তবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির কারণে এখন গ্রীষ্মকালেও বেগুন গাছে টমেটো উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। শহীদুল্লাহর সাফল্য দেখে এলাকায় অনেক কৃষকই গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা জানান, কাঁটা বেগুন চারার গোড়ার অংশের সঙ্গে টমেটোর চারার ওপরের অংশ জোড়া দিয়ে গ্রাফটিং করা হয়। এতে গাছ ঢলে পড়ে না, রোগবালাইও কম হয়। সাধারণ গাছে যেখানে ৫ থেকে ১০ কেজি টমেটো পাওয়া যায়, গ্রাফটিং পদ্ধতিতে চাষ করা প্রতিটি গাছে আরও বেশি ফলন হয়।
শহীদুল্লাহর বাড়ি ডৌহাখলা ইউনিয়নের তাঁতকুড়া গ্রামে। তিনি প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন সবজি চাষ করেন। নানা স্থানে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের খবর শোনার পর উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি ও উপসহকারী কৃষি অফিসার সুমন চন্দ্র সরকারের পরামর্শে তিনি কাঁটা বেগুন ও বারি-৮ জাতের টমেটোর বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করেন। ২০২৪ সালে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় তাঁতকুড়া গ্রামে তার জন্য একটি পলিনেট হাউস তৈরি করে দেয় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
চলতি বছরের জুন মাসে ওই পলিনেট হাউসে কাঁটা বেগুনের চারার সঙ্গে বারি-৮ জাতের টমেটো চারা গ্রাফটিং করে তিনি এক হাজার গাছ রোপণ করেন। সঠিক পরিচর্যায় আগস্টের শুরু থেকে বেগুন গাছে টমেটো ফলতে শুরু করে। বর্তমানে প্রতি কেজি টমেটো পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। ইতিমধ্যে প্রথম দফায় তিনি ৭০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। আরও ৪০-৪৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রির আশা করছেন।
শহীদুল্লাহ জানান, ১০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। লাগানো হয়েছিল ৫ জুন, আর উত্তোলন শুরু হয়েছে ১২ আগস্টে মাত্র ৬৭ দিনে টমেটো উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
উপসহকারী কৃষি অফিসার সুমন চন্দ্র সরকার জানান, পলিনেট ব্যবহারের কারণে ফসল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষিত থাকে, সার ও কীটনাশকের খরচ কমে যায়, পোকামাকড়ের আক্রমণও হয় না। এ সময় টমেটো চাষের প্রধান শত্রু হলো ‘ঢলে পড়া’ রোগ। কিন্তু গ্রাফটিং পদ্ধতিতে শতভাগ ফলন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। শহীদুল্লাহর এক হাজার গাছের মধ্যে ৯৯৮টিতেই সফলভাবে টমেটো উৎপাদন হয়েছে।
Advertisement
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি বলেন, ‘কৃষকেরা আগে জানতেন না বেগুন গাছে টমেটো চাষ করা যায়। আমরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিয়ে মাঠে সার্বক্ষণিক তদারকি করেছি। এ সময়ে টমেটো চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। শহীদুল্লাহর খেতে গিয়ে আমিও বিস্মিত হয়েছি; ব্যাপক ফলন হয়েছে।’

বেগুন গাছে টমেটো চাষ দেখে অনেকেই বিস্মিত। ছবি: ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)