ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),সুনামগঞ্জের ছাতক প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫ || জ্যৈষ্ঠ ২২ ১৪৩২ :
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় চাচাদের কাছে ইউরোপে যাওয়ার টাকা চেয়ে না পাওয়ায় নিজ সন্তানকে লুকিয়ে রেখে দুই চাচা ও এক চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করার অভিযোগ উঠেছে চাচাতো বোন সাহানা জাহান পলি ও তার স্বামী দেলোয়ার মাহমুদ জুয়েল বক্সের বিরুদ্ধে।
Advertisement
ছাতক উপজেলার জাউয়া বাজারের পলি ও তার স্বামী দেলোয়ার মাহমুদ জুয়েল বক্সের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করছেন চাচাতো ভাই ইকবাল হোসেন।
সাহানা জাহান পলির দুই চাচা হলেন, নুরুল ইসলাম, তিনি জাউয়াবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। অপরজন হলেন, মো. সৈয়দুল ইসলাম। আর ইকবাল হোসেন হলেন নুরুল ইসলামের ছেলে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০৬ সালে ছাতক পৌর শহরের বাগবাড়ি মহল্লার মৃত মাহমুদ আলী বক্স এর ছেলে উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি দেলোয়ার মাহমুদ জুয়েল বক্সকে পরিবারের অমতে গিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন সাহানা জাহান পলি। সে ছাতক পৌরসভার নোয়ারাই ইসলামপুর এলাকার মৃত শাহজাহান মিয়ার কন্যা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুটি ছেলে ও একটি কন্যা সন্তান নিয়ে তারা সিলেট শহরের এয়ারপোর্ট থানাধীন খাসদবির বন্ধন বি-৫ এর ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে যৌতুকের দাবিতে স্বামী তাকে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে পলি বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। পরে পলি স্বামীর বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ আদালতে নারীও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় স্বামী জুয়েল ২২ দিন জেল খাটেন। গত ২৬ নভেম্বর ২০২৪ সালে সুনামগঞ্জ আদালতে উপস্থিত হয়ে স্বামীকে তালাকের নোটিশও দেন স্ত্রী।
ইকবাল হোসেন বলেন, জুয়েল কারাভোগের পর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। নতুন এক ফন্দি আঁটেন তিনি। তার স্কুল পড়ুয়া ছেলে তাহসিন বক্সকে লুকিয়ে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।এবং পুলিশের সহযোগিতা পেতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি অব্যহত রাখেন। কিন্তু পুলিশ তার এই নাটকীয়তা বুঝতে পেরে মামলা নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ নিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে ছাতক প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে পলি জানায় ১৩ বছরের ছেলেকে লুকিয়ে তার চাচাসহ স্বজনদের অপহরণ মামলা করে ফাঁসাতে মরিয়া হয়ে উঠছেন। নারী নির্যাতন মামলা তুলে নিতেই মুলত এ নাটকের অবতারণা করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।পরে পলি ছেলে উদ্ধারে ১০০ ধারায় একটি পিটিশন করেন আদালতে। পিটিশন দায়েরের পরই তার স্বামী গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেন। পরে দু’পক্ষ বসে ঘটনার মিমাংসা হয়। এবং পলি ছেলেকেও ফিরে পেয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেন। স্বামী স্ত্রী একসাথে সংসার করা শুরু করেন।
ইকবাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্বামী, স্ত্রী মিল হওয়ার পর আমার চাচা সৈয়দুল ইসলামের কাছে আসে পলি। চাচাকে পরিবারসহ ইউরোপে যাওয়ার কথা বলে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। স্বামীর কথায় পলি এসে এসব বলছেন এমনটি ভেবে চাচা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। টাকা না দেয়ায় স্বামী, স্ত্রী মিলে আবারও সাজায় ছেলে তাহসিনকে দিয়ে অপহরণের নাটক। পরে পলি বাদি হয়ে সিলেটের আদালতে অপহরণ মামলা দায়ের করে চাচা সৈয়দুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। মামলাটি বর্তমানে সিলেট সিআইডিতে তদন্তাধীন আছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “মিথ্যা অপহরণ মামলা করে আমার চাচাসহ আত্নীয় স্বজনকে হয়রানি করছে চাচাতো বোন। তাদেরকে টাকা না দেয়ায় এ মামলা করা হয়েছে। এ মামলার নাটের গুরু তার স্বামী। আমরা চাই ঘটনার তদন্ত করে আসল রহস্য খুঁজে বের করা হোক। এবং আমার চাচাসহ যাদের বিরুদ্ধে এ অপহরণ মামলা সাজানো হয়েছে তাদেরকে ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।”
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাউয়াবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও তার ভাই মো. সৈয়দুল ইসলাম। তাদের দাবি স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে সাহানা জাহান পলির স্বামী দেলোয়ার মাহমুদ জুয়েল বক্স বলেন, “এসব মিথ্যা অভিযোগ, তারা আমার সন্তানকে অপহরণ করেছে এটা সত্য, আমরা মামলাও করেছি এটাও সত্য। এবং গত ২৮ অক্টোবর আমার স্ত্রীকেও তাদের বাড়িতে আটকে রাখে। পরর্বতীতে আমার স্ত্রীকে ভুল বুজিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করে এবং আমাকে কারাভোগ করতে হয়। পরে আমার স্ত্রী আদালতে আমার ঘর করবে বলে জানিয়ে আবার সে আমার সাথে সংসার করে।”
Advertisement
তিনি আরও বলেন, “তারা আমার সন্তানকে অপহরণ করেছিল, অপহরণের ৪ মাস পর বিশ্বম্ভর পুর উপজেলার ধনপুর থেকে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করা হয়। আমি এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করেছি। মামলা সিআইডি তদন্তে করছে। চাচার কাছে বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকার চাওয়ার ব্যাপারে বলেন, এসব মিথ্যে, তাদের এতো টাকা কোথায় পাবে, বরং তারা ( সৈয়দুল ইসলাম) আমার কাছে ৫লাখ টাকা চেয়েছিল।”