ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি, বুধবার ০৪ জুন ২০২৫ || জ্যৈষ্ঠ ২১ ১৪৩২ :
নাটোরে মামলা থেকে নাম বাদ দিতে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছে এক পুলিশ কর্মকর্তা। এ ঘটনার অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। এরই মধ্যে প্রাথমিক সত্যতা মেলায় ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নাগরিক সমাজের দাবি তদন্ত করে আরও যারা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
বুধবার (৪ জুন) সকালে নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগ পাওয়ার পর মঙ্গলবারই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই পুলিশ সদস্যকে রাতেই প্রাথমিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া গুরুদাসপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে নাটোর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।’
এদিকে, মোবাইল ফোনে ঘুষ দাবির একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছড়িয়ে পড়া ওই অডিওতে কথোপকথনের এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য আবু জাফরকে বলতে শোনা যায়, ‘মামলা থেকে নাম বাদ দিতে, ‘সম্পূর্ণ কমপ্লিট করতে ৫ লাখ টাকার নিচে হবে না। আপনি জানেন চার পাঁচটা দপ্তরে টাকা দিতে হবে। আমি তো একা নাম কাটতে পারবো না। নাম বাদ দিতে গেলে এসপি স্যার, সার্কেল স্যার, ওসি স্যার আমাকে ডাকতে পারে। ঈদের আগে আপাতত ১ লাখ টাকা দিবেন।’ আসামীর বাড়িতে পুলিশ যাবেনা। আমি মামলার আয়ু আমিও যাবনা। মনে করলে একবারেও টাকা দিতে পারেন। কত টাকা দিতে পারবেন বলেন। হলে হবে না হলে নাই। মামলা থেকে নাম বাদ দিতে গেলে আমি একা পরবো না।’
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে নাটোরের পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা গোলাম রাব্বি। গোলাম রাব্বি গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দ নগর মহল্লার রবিউল করিমের ছেলে। ঘুষ দাবির ওই অডিও ক্লিপে গোলাম রাব্বির সঙ্গে সোমবার বিকেলে এবং রাতে এস আই আবু জাফরকে দুই দফায় ৫ মিনিট কথা বলতে শোনা যায়।
প্রবাসী রাসেল হোসাইন উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের খাকড়াদহ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ রবিউল করিমের ছেলে। রাসেল দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় থাকেন। তবে গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারে ‘রাশ আবরান স্টাইল শপিং মল’ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। ওই প্রতিষ্ঠানেই ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেন গোলাম রাব্বি।
পুরনো কোন্দলের জেরে সম্প্রতি রুবেলকে মারধর করা হয়। রুবেল আমেরিকা প্রবাসী রাসেলেরই বন্ধু। ওই ঘটনার জেরে রাসেলকে ১ নম্বর আসামি করে গুরুদাসপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন রুবেলের বাবা ফরিদ মোল্লা। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান গুরুদাসপুর থানার এসআই আবু জাফর মৃধা।
গতকাল সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে গোলাম রাব্বি জানান, প্রবাসী রাসেলের দোকানের কর্মচারী হিসেবে তিনি মামলার বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। কয়েকদিন ধরেই এস আই জাফর বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলেন। সবশেষ সোমবার ৫ লাখ টাকা দাবি করেন এসআই। সেই প্রস্তাবে তারা রাজি হননি। কৌশলে এস আইয়ের কথোপথন রেকর্ড করেন তিনি। সেসব প্রমাণাদিসহ প্রতিকার পেতে তিনি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আমেরিকা প্রবাসী রাসেল হোসাইন আমেরিকা থেকে মুঠোফোনে জানান, বিদেশে থেকেও তিনি মারামারি মামলার আসামি হয়েছেন। অথচ নাম কাটতে পুলিশ কর্মকর্তা ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে ঘুষের প্রস্তাব পেয়ে লজ্জিত এবং ব্যথিত। তিনি ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে এসআই আবু জাফরের মতো দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তার বিচার দাবি করেন।
অভিযুক্ত এসআই আবু জাফর মৃধা ঘুষ দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘মামলা থেকে নাম কাটার বিষয়ে আমি কারো কাছে টাকা চাইনি। এসব অভিযোগ সত্য নয়।’
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসমাউল হক ‘বিষয়টি নিয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার সাহেবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। অডিও ক্লিপে ওসির নামটিও উঠে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।
Advertisement
নাটোরের সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক বুলবুল আহমেদ জানান, পুলিশ কর্মকর্তার এমন ঘুষ নেয়ার ঘটনা নাটোরে নতুন নয় এর আগেও গত জানুয়ারি মাসে এমনই একটি ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। এবার ঘুষ চাওয়ার ভিডিও অডিও ভাইরাল হল। এ বিষয়ে পুলিশ সঠিক তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে সত্য মনে হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে অন্যান্য তদন্ত শেষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গুরুদাসপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর মৃধা।