ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫ || জ্যৈষ্ঠ ২২ ১৪৩২ :
দেশের তিন জেলা- মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ফেনী সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ ৬৪ জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে (পুশইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এছাড়া বুধবারে (২৮ মে) কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পুশইনে ব্যর্থ হয়ে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ উঠেছে বিএসএফের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাতে ও শুক্রবার সকালে বাংলাদেশে পুশইন করা হয় তাদের।
মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার মৌলভীবাজারের জুড়ি ও কমলগঞ্জ উপজেলার তিন সীমান্ত দিয়ে ২৯ জনকে পুশইন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিএসএফ)। জুড়ির রাজকি ও কমলগঞ্জের বিওপির সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ভোর ৪ টার দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের বাগীছড়া থেকে ৫ জন ও চাম্পাছড়া এলাকা থেকে ১৪ জনকে আটক করা হয়।
এছাড়া, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজকি সীমান্ত দিয়ে নারী পুরুষ ও শিশুসহ ১০ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে স্থানীয় ক্যাম্পে নিয়ে যায় বিজিবি।
Advertisement
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তারা সবাই কুড়িগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সংশ্লিষ্ট থানায় তাদের হস্তান্তর করা হবে। কাজের সন্ধানে তারা অবৈধভাবে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিল।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম আকনজী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিজিবির হাতে আটক ১৯ জনকে এখনও থানায় হস্তান্তর করা হয়নি।
বিজিবি ৪৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো জাকারিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, ১০ জন আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিজিবি রাজকি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবুল হাশেম।
চুনারুঘাট সীমান্তে শিশুসহ ২২ জনকে পুশইন
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সীমান্তে আবারও ২২ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে বিএসএফ। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার রেমা বিওপির আওতাধীন ডেবরাবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয় তাদের। শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে ৯ জন পুরুষ, ৮ জন নারী এবং ৫ জন শিশুকে বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়নের টহল দল আটক করে।
আটকরা হলেন- কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ এলাকার মৃত ওসমান মিয়ার ছেলে জোহর আলী (৮০), তার স্ত্রী আছিয়া বেগম (৬০), তাদের ছেলে মো. আরিফ (১৯), মো. আসাদুল (৩০), একই উপজেলার মন্ডলগড়া এলাকার মৃত আকবর আলীর ছেলে মো. আশরাফুল (৩৫), তার স্ত্রী মোছা. জাহানারা (৩০), মেয়ে মোছা. কাকলী (১০) ও মোছা. আশরাফী (৬), কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার স্বাধীর গ্রামের মৃত নবাব উদ্দিনের ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম (৩৫) ও তার স্ত্রী মোছা. আফরোজা (২৪), ফুলবাড়িয়া উপজেলার মৃত শাহনবী এলাকার মো. আ. হামিদ (৪২), মোছা. রেহানা বেগম (৪০), তাদের ছেলে মো. সুজন (২২), মেয়ে মোছা. হাসি খাতুন (১৮), একই এলাকার মো. সুজন মিয়ার স্ত্রী মোছা. পারভীন বেগম (২১), আব্দুল হামিদের ছেলে মো. শাহিনুর (৩), মো. হাসানুর (৭), ফুলবাড়িয়া উপজেলার মৃত স্বরেশ আলীর ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৫০), তার স্ত্রী মোছা. ফাতেমা বেগম (৪৭), ছেলে মো. ইমরান হোসেন, মো. ইমরান হোসেনের স্ত্রী মোছা. সাবিনা (২০), একই উপজেলার কাশিপুর এলাকার ইমরান হোসেনের ছেলে (২২) মো. ইসমাইল হোসেন (২)।
বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজিলুর রহমান জানান, তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা এবং বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করেছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তাদের নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চুনারুঘাট থানায় তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে গত ২৬ মে, একই উপজেলার কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ ১৯ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করেছিল বিএসএফ।
ছাগলনাইয়া সীমান্তে পরিত্যক্ত ঘরে শিশুসহ ১৩ জন
ফেনী সংবাদদাতা জানান, ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্তে ১৩ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে বিএসএফ। শুক্রবার ভোরে ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে পুশইন করা হয় তাদের। শুক্রবার দুপুরে ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিজিবি জানায়, শুক্রবার (৩০ মে) সকাল ৯টায় ছাগলনাইয়া বিওপির টহল দল মথুয়া এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ঘরের মধ্যে শিশুসহ ১৩ জনকে দেখে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদের। তাদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ, ৩ জন মহিলা এবং ৬ জন শিশু রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিভিন্ন সময় ইট ভাটার কাজ করার জন্য ভারতে যান তারা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সীমান্ত দিয়ে প্রথমে তাদের হাত ও চোখ বেঁধে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যায় বিএসএফ। পরে হাত ও চোখের বাঁধন খুলে পুশইন করে বাংলাদেশে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও অন্ধকারের কারণে মথুয়া এলাকায় পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে অবস্থান করে তারা। তারা সকলেই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা।
Advertisement
তারা হলেন- কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী থানার নাগদেহ গ্রামের মো. হোসেন আলীর ছেলে মো. আলতাফ (৩৯), আলতাফ হোসেনের স্ত্রী মোমিনা বেগম (৩২)। একই পরিবারের অন্য পাঁচজন হলেন, ফুলবাড়ী থানার পানি মাছ কুটি গ্রামের জকিরল হকের ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম (৩৮), মো. আমিনুলের স্ত্রী উর্মি বেগম (২৯), মো. আমিনুলের ছেলে ওহিদুল ইসলাম (১১), মো. রেজাউল হক (৯), আরিফা আক্তার (৩)। একই পরিবার আরও ৫ জন হলেন- ফুলবাড়ী থানার পানি মাছ কুটি গ্রামের জকিরুল হকের ছেলে মোমিনুল হক (৩৫), মোমিনুল হকের স্ত্রী শেফালী বেগম (৩০), মোমিনুল হকের মেয়ে মনিজা আক্তার (১৩), মনজু আক্তার (১০), মোমিনুল হকের ছেলে রমজান আলী (৩ মাস)। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানার ছোট ধনিসরকাটা গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে মো. ইশরাক হোসেন (৪০)।
ফেনী-৪ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে কমান্ডারের কাছে মৌখিক প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার।