ঘুস দাবিসহ নানান হয়রানির বেড়াজালে বিদ্যুতের গ্রাহকরা (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ : অকারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন, নতুন সংযোগ বা মিটার পেতে ঘুস দাবিসহ নানানভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। হাজারও অভিযোগের দরখাস্ত ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে। গ্রাহকসেবা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

খায়রুল আলম, বাড়িতে মিটার নেওয়ার জন্য দুই মাস ধরে ঘুরেছেন কলাতিয়া জোনাল অফিসে।

মিটার না পেয়ে এসেছেন কেরানীগঞ্জের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪-এর অফিসে। ঘুস না দেওয়ায় মিটার দেওয়া হচ্ছে না বলে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এমন নানান অভিযোগ নিয়ে এসছেন অনেকে।

খায়রুল আলম বলেন, যেগুলোর টাকা পাচ্ছেন, সেগুলো তাড়াতাড়ি লাগাচ্ছেন। যেগুলোর টাকা পাচ্ছেন না, সেগুলো তারা আটকিয়ে হয়রানি করছেন।

খায়রুল আলমের অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, ওইদিন ওই এলাকার সবার মিটার লাগছে। শুধু তারটা লাগেনি। তাকে বলা হয়েছিল, আমাকে দুইটা দিন সময় দেন। আমি একটু জনবল নিয়ে ঝামেলায় আছি।

গেল মাসে বিনাকারণে সংযোগ কেটে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ করেন ডিপিডিসির এক গ্রাহক। তার অভিযোগ, খিলগাঁও সাব-স্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর মির্জা সাইফুল কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তার সংযোগ কেটে দেন। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিযোগটি দুই দিনের মধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিলেও এক সপ্তাহেও এর সুরাহা হয়নি।

খিলগাঁও সাব-স্টেশনে গেলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। অভিযোগ পাওয়া যায়, কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রায় ২০ বছর ধরে এই স্থানে কর্মরত আছেন মির্জা সাইফুল। এ কথা স্বীকার করলেও ওই গ্রাহকের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমাকে যদি কর্তৃপক্ষ বদলি না করে, তাহলে আমি কীভাবে বদলি হব? কারণ, আমি কাজ করি নিষ্ঠার সঙ্গে। আমি অনেক দিন আছি, আমার বিরুদ্ধে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে।

এ ছাড়া কাজলা ডিভিশনের সাবেক উপবিভাগীয় প্রকৌশলী তারেক তুষার এবং উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুলের বিরুদ্ধে ছয় মাস আগে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ উঠলেও এখনও তার সুরাহা হয়নি।

এক কর্মকর্তা বলেন, আমি এগুলো শুনেছি। কিন্তু এগুলো এখনও তদন্ত হয়নি।

এ ছাড়াও বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অভিযোগ আছে হাজারও। গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ রয়েছে সবগুলো সংস্থার বিরুদ্ধেই।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ বেশি পাই নতুন সংযোগে। এটা হতে পারে আমাদের গ্যাপ আছে। আমাদের ফিল্ড লেভেলে সবাই যে এমন করে তা না।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সেলিম উদ্দিন বলেন, যেকোনো অভিযোগ আসুক না কেন, সেগুলো আমরা তদন্ত করি এবং তদন্তসাপেক্ষে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

অভিযোগগুলো সুরাহা না করার কারণেই বন্ধ করা যাচ্ছে না গ্রাহক হয়রানি, আর ঘুসবাণিজ্য।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। সেটি না করতে পারলে দুর্নীতি-অনিয়ম আরও বেশি প্রসার লাভ করবে। গ্রাহকদের হয়রানি বাড়বে।

গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়কে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।