বিএনপি’র জোট থেকে জামায়াত বাদ!

SHARE

 ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১৯ মার্চ : যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে বিচারের কাঠগড়ায় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বাংলাদেশ-জামায়াতে ইসলামী। ২০-দলীয় জোটের শক্ত খুঁটি হিসেবে পরিচিত এই শক্তিকে শতকথা, সমালোচনায়ও ছাড়েননি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

কিন্তু ইদানিং কী জামায়াতই ছেড়ে দিচ্ছে বিএনপিকে?

নানা আচার-আচরণ থেকে তেমনটাই ধারণা করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে- যখনই কোনও ভোটের ইস্যু আসছে জামায়াত তখন জোটের সঙ্গে থাকছে না।

দীর্ঘদিন ধরেই এমনটা চলছে। অথচ ২০০১ সালের নির্বাচনে এই জামায়াতের সাথে জোট করে ভোটে বড় জয় নিশ্চিত করে বিএনপি। সে জোটের বদৌলতে সরকার গঠনতো বটেই, স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে ওঠে জাতীয় পতাকা। কিন্তু হঠাৎ কি এমন হলো যে জামায়াত এখন ভোটের ইস্যুতে জোট থেকে দূরে থাকছে?

সকলেরই জানা, নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন হারিয়ে রাজনৈতিক দল থেকে সাধারণ সংগঠনে পরিণত হয়েছে জামায়াত। আজ ২০ দলীয় জোটে বাকিরা ছোট হোক বড় হোক সকলেই রাজনৈতিক দল। ফলে জোটে বেমানানও হয়ে গেছে জামায়াত।

আর যুদ্ধাপরাধের বিচারে একের পর এক ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলছে জামায়াতি নেতারা। ফলে সাংগঠনিক দুর্বলতাও রয়েছে। সেসব কারণেই অনেকটা স্বেচ্ছায় জোটের নির্বাচনী আলোচনা, বৈঠক ও যৌথসভাগুলো এড়িয়ে চলছে বলে জানাচ্ছে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো।

এদিকে, জামায়াতের প্রতি বিএনপি’র প্রীতি পুরোনো ও বেশ শক্ত। দলটি জানে তাদেরও রাজনীতিতে টিকে থাকতে জামায়াতের সহযোগিতা প্রয়োজন। সে কারণে জামায়াতকে কাছে টেনে রাখার চেষ্টার কমতি নেই এই দলে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে টুকটাক পেলেও নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি মোটেই পাচ্ছে না জামায়াতকে। বার বার চেষ্টা করেও তাদেরকে নির্বাচনী কোনো কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারছে না।

এ নিয়ে জোটের অন্য দলগুলোর মধ্যে কানাঘুষা রয়েছে। তারা অবশ্য জামায়াত-বিএনপি সখ্যে চির ধরছে এমনটা বিশ্বাস করতে চান না। তাই জোটের কোনো কোনো শরিক মনে করছে, প্রকাশ্যে না এলেও বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পর্দার অন্তরালে কাজ করে যাচ্ছে জামায়াত।

জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০১০ সালে প্রধানসারির নেতারা যুদ্ধাপরাধে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতারা দ্রুত চলে যান আত্মগোপনে। পরে শীর্ষ নেতাদের প্রায় সকলে ফাঁসিতে ঝোলার এবং বাকিদের আজীবন জেলে অবস্থান ও দু-তিন জনের জেলেই মৃত্যুর পর আত্মগোপনকারীরা আর প্রকাশ্য হননি।

এর ফলে দলের চতুর্থ সারির নেতা মাওলানা আব্দুল হালিম, ডা. রেদওয়ান উল্লাহ শাহেদী, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, সেলিম উদ্দীন আহমেদ ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করতে শুরু করেন। ৮/৯ মাস আগে অধ্যাপক আমিনুল মারা যান। জোটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও বৈঠকগুলোতে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পরে বাকি তিন জনের ওপর।

জোটের যে কোনো ধরনের বৈঠকে জামায়াতের চতুর্থ সারির এই তিন নেতা হাজির হলে বিএনপির কাছে অন্য শরিক দলগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের চেয়ে বেশি মূল্যায়ন পেয়ে থাকেন। বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখারও সুযোগ পান তারা।

সেভাবেই চলছিলো। কিন্তু নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন হারানোর পর নির্বাচন ইস্যুতে জোটের বৈঠকগুলোতে ধীরে ধীরে আসা বন্ধ করে দেন জামায়াতের প্রতিনিধিরা। অন্য বৈঠকগুলোতে নিয়মিত হাজির হলেও নির্বাচন সংক্রান্ত বৈঠকগুলোতে তাদের উপস্থিতি এখন নেই বললেই চলে।

গত ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট মনোনিত বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালানোর জন্য জোটের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। ওই সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক করা হয় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারকে এবং সদস্য সচিব করা হয় বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়াকে।

সে সময় জোটের ২০ দল নিয়ে কয়েকটি টিম গঠন করা হয়। কিন্তু কোনো টিমেই থাকেনি জামায়াত।

জামায়াতের না থাকার কারণ জানতে চাইলে ওই সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছিলেন- ‘উনাদের কেউ কোনো প্রতিনিধি মিটিংয়ে উপস্তিত না থাকায় কোনো টিমে তাদের নাম রাখা হয়নি। পরে উনাদের নাম অন্তুর্ভুক্ত করা হবে।’ কিন্তু পরে আর করা হয়েছে বলে জানা যায়নি।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ২০ দল মনোনীত বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর জন্যও গঠন করা হয়েছে সমন্বয় কমিটি। এ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করছেন জোটের অন্যতম শরিক ড. রেদওয়ান আহমেদ। এখানেও জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি নেই। নির্বাচন নিয়ে এ পযর্ন্ত অনুষ্ঠিত জোটের সমন্বয় সভায় উপস্থিত হননি জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি।

সূত্রমতে, নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন হারিয়ে জামায়াত কিছুটা হতাশ। বিষয়টিকে তারা প্রেসটিজ ইস্যু হিসেবে দেখছে। যেখানে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ নেই, সেখানে নির্বাচন ইস্যুতে জোটে ভূমিকাও রাখতে চায় না জামায়াত।

জামায়াতের যে কয়েকজন নেতা জোটের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে মোবাইলফোনে হলেও যোগাযোগ রাখতেন তাদেরকে এখন ফোন দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। কুশিক নির্বাচনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া এলডিপির মহাসচিব ড. রেদওয়ান আহমেদ এ নিয়ে কিছুটা ক্ষুব্ধ বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র মতে, বাইরে যে কথাই বলুক আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পাক্কা সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বিএনপি। সে নিয়ে কাজও শুরু হয়েছে। যাতে তাদের এখন থেকেই জামায়াতের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ নিয়ে বিএনপি ও অন্য শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, সেমিনারে কথা বললেও জামায়াতের কোনো নড়াচড়া নেই।

সাধারণত তাদের বক্তব্যগুলো বিবৃতিতের মাধ্যমে হলেও মিডিয়াতে আসে। নির্বাচন ইস্যুতে তাও আসছে না।

সূত্রমতে, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ চেয়ে চিঠি দেওয়ার পর তাতে কোনো সাড়া না পেয়ে আরো বেশি চুপষে গেছে জামায়াত। তারা যেনো ধন্র্বুন্ধ পণ ধরেছেন- পরিস্থিতি নিজেদের অনুকুলে না যাওয়া পর‌্যন্ত নির্বাচন ইস্যুতে কোনো কথা বলবেন না।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জামায়াতের ওই তিন চতূর্থ সারির নেতার সব ক’জনকে ফোন করে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। দপ্তরগুলো বন্ধ থাকায় সরসারি যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২০ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা বাংলানিউজকে বলেন, প্রকাশ্যে না করলেও সব নির্বাচনেই বিএনপির সঙ্গে শলাপরামর্শের মাধ্যমে ভেতরে ভেতরে কাজ করছে জামায়াত।

অবশ্য জোটের ওই শীর্ষ নেতার বক্তব্যের সঙ্গে এক মত হতে পারেন নি জোটের আরেক শীর্ষ নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নিজেদের প্রার্থী থাকবে না, কেবল বিএনপির প্রার্থীর জন্য মাঠে নেমে কাজ করবে জামায়াত, এতটা উদার তারা নয়।

বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে নিজেদের আখের গোছানোই জামায়াতের রাজনীতি, বলেন এই নেতা।