ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজনীতি প্রতিনিধি, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫ || আষাঢ় ২৫ ১৪৩২ :
তাসনিম জারা একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক, গবেষক, উদ্যোক্তা এবং রাজনৈতিক নেত্রী।[১] ২০২১ সালে, যুক্তরাজ্য সরকার তাকে “ভ্যাকসিন লুমিনারি” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। জনসচেতনতা গড়ে তোলা এবং টিকা গ্রহণে জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকার জন্য তিনি এ সম্মাননা লাভ করেন।[২] তিনি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।[৩]
Advertisement
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
তাসনিম জারা বাংলাদেশের ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠেন। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।

পরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।[৪]
এরপর তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এভিডেন্স-বেইজড হেলথ কেয়ার বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন।[৫]
চিকিৎসা ও পেশাগত জীবন
তাসনিম জারা তার চিকিৎসাজীবন শুরু করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে। এরপর তিনি ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে যান এবং এনএইচএসে জরুরি চিকিৎসা বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন।[৬]
২০২১ সাল থেকে তিনি ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালসমূহে অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা বিষয়ে রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত। একই সময়ে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল স্কুলে স্নাতক পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল সুপারভাইজার হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং পরে তিনি সিনিয়র ক্লিনিক্যাল সুপারভাইজারের পদে উন্নীত হন।[৭]
জারা ‘সহায় হেলথ’ নামক একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা বাংলাভাষী জনগণের জন্য প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা তথ্য প্রদান করে। ২০২৩ সালে তিনি ‘সহায় প্রেগন্যান্সি’ মোবাইল অ্যাপের উন্নয়নে নেতৃত্ব দেন, যা গর্ভাবস্থার প্রতিটি সপ্তাহের জন্য তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করে।[৮]
গবেষক হিসেবে তাসনিম জারা আন্তর্জাতিক পর্যালোচিত জার্নালে একাধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে JACC: Cardiovascular Interventions এবং ফ্রন্টিয়ার্স ইন গ্লোবাল উইমেন’স হেলথ।[৯][১০]
সমাজকর্ম ও অ্যাকটিভিজম
২০১৪ সালে তাসনিম জারা জাতিসংঘের বাংলাদেশ যুব উপদেষ্টা প্যানেলের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই প্যানেলে তিনি যুবসম্পৃক্ততা ও নীতিনির্ধারণে জাতিসংঘকে পরামর্শ প্রদান করেন।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তাসনিম জারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসেন, যখন তিনি বিয়ের পোশাক নিয়ে প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করেন।[১১][১২]
তার বিয়ের অনুষ্ঠানে তিনি কোনো গয়না বা মেকআপ না করে শুধুমাত্র দাদীর রেখে যাওয়া একটি সাধারণ সাদা সুতির শাড়ি পরেন। এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং নারীদের উপর আরোপিত সৌন্দর্য ও সাজসজ্জা সংক্রান্ত সামাজিক চাপ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটায়।[১৩]
তিনি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের স্কুল পাঠ্যক্রমে মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে সক্রিয়ভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তার লক্ষ্য হলো এ বিষয়ে সামাজিক কুসংস্কার দূর করা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা।[১৪]
Advertisement
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্রভাব
কোভিড-১৯ মহামারির শুরুতে তাসনিম জারা বাংলাভাষায় স্বাস্থ্যবিষয়ক ভিডিও তৈরি করা শুরু করেন এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন।[১৫]
তিনি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ, টিকা সংক্রান্ত সচেতনতা, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতা নিয়ে ভিডিও তৈরি করেন। তার এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিবিসি, স্কাই নিউজ, আইটিভি এবং ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তার কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।[১৬]
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা

২০২৪ সালের শেষ দিকে, তাসনিম জারা আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে গঠিত নাগরিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। শুরুতে তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সংগঠন পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-তে রূপান্তরিত হয়। জারা দলটির প্রবাসী শাখা গঠনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেন।[১৭]
জাতীয় নাগরিক পার্টির আনুষ্ঠানিক যাত্রার পর, তিনি দলের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, যা একটি শীর্ষ নির্বাহী পদ।[১৮] তিনি দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা ‘রাজনৈতিক পরিষদ’-এর সদস্যও, যেখানে দশজন শীর্ষস্থানীয় নেতা অন্তর্ভুক্ত আছেন। এই পর্ষদকে বাংলাদেশের পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টার “সুপার ১০” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।[১৯]
রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, জারা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নৈতিক শাসনের পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেন। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে তিনি দলীয় এক শীর্ষ নেতা সারজিস আলম-এর বিরুদ্ধে তার আর্থিক অবস্থান সংক্রান্ত অসামঞ্জস্যতার অভিযোগ প্রকাশ্যে তুলেন। তিনি সারজিস আলমকে ১০০ গাড়ির শোভাযাত্রার অর্থায়নের উৎস প্রকাশ করতে আহ্বান জানান।[২০]
স্বীকৃতি ও পুরস্কার
২০২১ সালে, যুক্তরাজ্য সরকার তাকে বৈশ্বিক “ভ্যাকসিন লুমিনারি” হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এই সম্মাননা প্রদান করা হয় জি৭ গ্লোবাল ভ্যাকসিন কনফিডেন্স সামিটে।[২১]
কোভিড-১৯ মহামারির সময় চিকিৎসা-সংক্রান্ত ভ্রান্ত তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য তার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের দক্ষতাকে স্বীকৃতি জানিয়ে বাংলাদেশি গণমাধ্যমগুলো তাকে দেশের অন্যতম প্রধান “চেঞ্জমেকার” হিসেবে আখ্যায়িত করে।[২২]
Advertisement
https://www.facebook.com/share/p/1NT3RTcPAN
ব্যক্তিগত জীবন
তাসনিম জারা বাংলাদেশি প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও মানবাধিকারকর্মী খালেদ সাইফুল্লাহর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ। সাইফুল্লাহ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকার আইন অধ্যয়ন করেছেন এবং ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিতে তাসনিম জারার পাশাপাশি নেতৃত্বস্থানীয় পদে দায়িত্ব পালন করছেন।[২৩]
ডাঃ তাসনীম জারা