ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫ || আষাঢ় ২৫ ১৪৩২ :
মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নির্বিচারে গুলির নির্দেশ দেয়া শেখ হাসিনার ফোনালাপের আন্তর্জাতিক ভেরিফিকেশন মামলার স্বচ্ছতা বাড়াবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। সেই সঙ্গে এটি ডকুমেন্ট আকারে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ফাঁস হওয়া অডিওতে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে শেখ হাসিনার নির্বিচারে গুলি চালানোর ফোনালাপ নিয়ে বিবিসির ভেরিফিকেশনের বিষয়ে বুধবার (৯ জুলাই) গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটা জানান তিনি।
প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি অডিও বক্তব্য এর আগে পুলিশের ক্রাইমস ইনভেস্টিগেশন টিম পরীক্ষা করেছে। তারাও ফরেনসিক সত্যতা পেয়েছে, এসব ফোনালাপ হাসিনারই। তারপরও আন্তর্জাতিক সংস্থা নতুন করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা মামলার অভিযোগ প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) আদেশ দেবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনা ছাড়াও এ মামলার অপর ২ আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। আদালত অভিযোগ গঠনের আদেশ দিলে সেখানে অন্যান্য ডকুমেন্টের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হবে শেখ হাসিনার ফোনালাপের আন্তর্জাতিক ভেরিফিকেশন।
এর আগে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিবিসির এক প্রতিবেদনে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমন অভিযানে ফাঁস হওয়া অডিও কলে শেখ হাসিনার সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়।
গত মার্চে অনলাইনে ফাঁস হওয়া ওই অডিওটিতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রয়োজনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করো। যেখানে পাবে, গুলি করবে।’ বিবিসির তথ্যমতে, বাংলাদেশ সরকারের টেলিযোগাযোগ নজরদারি সংস্থা এনটিএমসি (NTMC) কর্তৃক করা এই কলটি রেকর্ড করা হয়েছিল। কলটি শেখ হাসিনার ঢাকার বাসভবন গণভবন থেকে ১৮ জুলাই করা হয় বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র।
Advertisement
জাতিসংঘের তদন্ত অনুযায়ী, গত বছরের বিক্ষোভে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন। সেই ঘটনার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে, যেখানে তিনি অনুপস্থিত অবস্থায় অভিযুক্ত। হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং তার দল আওয়ামী লীগ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘এই টেপ থেকে কোনো বেআইনি উদ্দেশ্যের প্রমাণ মেলে না। এটি প্রতিক্রিয়া মাত্র।’
তবে বিবিসি ও ফরেনসিক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট (Earshot) কলটির প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেছে- এটি কৃত্রিম নয়, কোনোভাবে কাটাছেঁড়া বা পরিবর্তন করা হয়নি। হাসিনার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে এটি পুরোপুরি মিলে গেছে বলেও জানায় বাংলাদেশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১৮ জুলাইয়ের এই কলের পর ঢাকার রাস্তায় সামরিক-গ্রেডের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, যা পুলিশের গোপন নথিতে উল্লেখ রয়েছে। বিবিসি আরও জানিয়েছে, ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হয়। এর আগে ওই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৩০।
ঘটনার দিন সেনাবাহিনী সরে যাওয়ার পরপরই পুলিশ সরাসরি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়। ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি, ড্রোন ও প্রত্যক্ষদর্শীর ভিডিও বিশ্লেষণ করে এ তথ্য উঠে আসে। এছাড়া ঘটনার পর প্রতিবাদকারীরা যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা চালালে ছয়জন পুলিশ সদস্যও নিহত হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানায়, গত বছরের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬০ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং নিরপেক্ষ তদন্ত চলছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করেছে।
শেখ হাসিনার বিচার গত মাসে শুরু হয়েছিল। এই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা, উসকানি, ষড়যন্ত্র এবং বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ভারত এখনো তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে রাজি হয়নি।
জাতিসংঘের তদন্তেও শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের যুক্তিসংগত প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
Advertisement
https://www.facebook.com/share/p/1NT3RTcPAN
আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলছে, ‘আমাদের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সরকার যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, সেগুলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এবং প্রাণহানি রোধের উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছিল।’ তবে বিবিসি এ নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো মন্তব্য পায়নি।
শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি