জলদস্যুদের সঙ্গে নয়, নাবিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪  : এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি হওয়ার এক সপ্তাহ পার হলেও সোমালি জলদস্যুদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। তবে জাহাজটির মালিক কবির গ্রুপ জানিয়েছে, নাবিকদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।

Advertisement

এদিকে ইউরোপীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজ এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ ক্রু সদস্যদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করার অনুমতি চেয়েছিল। সেই অভিযানে সহযোগিতা দিতেও প্রস্তুতি নিয়েছিল সোমালি পুলিশ গার্ড। সোমবার (১৮ মার্চ) সোমালিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে এমনটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

 

কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপে রাজি হয়নি। জাহাজের মালিক এসআর শিপিংও ক্রুদের জীবনের সম্ভাব্য ক্ষতির ভয়ে এ ধরনের অপারেশনের পক্ষে মত দেয়নি।

 

এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২৩ জন নাবিকের জীবনরক্ষায় মুক্তিপণ দিয়েই এ ঘটনার সমাধান চায় তারা। ফলে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে নাবিকদের উদ্ধারে জাহাজটিতে ভারতীয় নৌবাহিনীর অভিযানকে যৌক্তিক নয় বলে মনে করছেন জাহাজ মালিক এবং শিপিং খাত সংশ্লিষ্টরা। নাবিকদের উদ্ধারে মধ্যস্থতাকারী বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে মালিকপক্ষ।

 

কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, আমরা কোনো ধরনের সামরিক অভিযানকে সমর্থন করছি না। তাছাড়া রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও সুস্পষ্ট বার্তা হচ্ছে সহিংস অভিযান পরিচালনা করা যাবে না।

 

তিনি বলেন, এখনো সোমালি জলদস্যুরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। নাবিকেরা জাহাজের দৈনন্দিন কাজগুলো সেগুলো করছেন। নাবিকদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।

 

এর আগে, ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের নির্মূলে কাজ করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন ‘অপারেশন আটালান্টা’র পক্ষ থেকে আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান খুরশেদ আলম এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ সরকার এ প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।

 

মেরিটাইম খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমভি আবদুল্লাহ বর্তমানে সোমালি জলসীমার ভেতরে রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে যেকোনো দেশের ভুখণ্ড থেকে ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে প্রবেশ করতে হলে সে দেশের সরকারের অনুমতি নিতে হবে। একইসঙ্গে যে লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান পরিচালনা করা হবে, তার সংশ্লিষ্ট দেশের অনুমতি নিতে হবে। সে হিসেবে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অভিযান চালাতে হলে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি লাগবে।

Advertisement

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, উন্মুক্ত সাগরে জলসদ্যুদের শক্তি একরকম। অন্যদিকে উপকূলে তাদের শক্তি বহুগুণে বেড়ে যায়। এমভি আবদুল্লাহর বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই সামরিক অভিযান পরিচালনার সুযোগ নেই।

 

তিনি বলেন, সমস্যার সমাধানের জন্য জাহাজ মালিক এবং বাংলাদেশ সরকার আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি শতভাগ সঠিক সিদ্ধান্ত।

 

এর ব্যত্যয় ঘটলে বড় ধরনের বিপর্যয় এমনকি নাবিকদের প্রাণহানি, জাহাজের ক্ষয়ক্ষতি এবং কয়লা বিষ্ফোরণ হয়ে মারাত্বক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

 

গত ১২ মার্চ দুপুরে শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগও। ছিনিয়ে নেওয়া হয় নাবিকদের কাছে থাকা মোবাইল, সঙ্গে থাকা ডলার।

 

জাহাজটি ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। নাবিক ও ক্রুসহ জাহাজটিতে ২৩ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে জলদস্যুরা। জাহাজটি ওই সময় সোমালিয়া উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল।

 

কেএসআরএমের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন ‘এমভি আবদুল্লাহ’ আগে ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।

Advertisement

২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।