ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ : নেতৃত্ব নিয়ে আস্থার সংকটে ভুগছে প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই এখন দলে সর্বেসর্বা। কিন্তু গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে তার নেতৃত্ব বিএনপিকে দুর্বল থেকে দুর্বলতার করেছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক চাপ এবং নেতাকর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত বিএনপির মূল নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে পারেন জিয়া পরিবারের সদস্যরা। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, তারেক জিয়া বিএনপির নির্বাহী দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন।
Advertisement

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, এখনও যারা সক্রিয়ভাবে মাঠে থেকে বিএনপির রাজনীতি করছেন তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব বাছাই করার জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বিষয়টি নিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে তার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে বলেও একাধিক সূত্র দাবি করেছে।
Advertisement

২০১৮ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বেগম জিয়া কার্যত দলের নেতৃত্বে নেই। তখন থেকেই দল পরিচালনা করছেন লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া। জেল থেকে বা ফিরোজায় থেকে বেগম জিয়া বিএনপি নেতাদের মাঝেমধ্যে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন উপদেশ দেন তারেক রহমান। এর ফলে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠে, দূর থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতা না বুঝে আন্দোলন পরিচালনা করা বা নেতৃত্ব দেয়া কতটুকু যৌক্তিক?
এই অবস্থায় বিএনপির গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে নেতৃত্বের পরিবর্তন হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন দলের কোনো কোনো নেতা। সেক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়াকে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এবং তারেক রহমানকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
Advertisement

বিএনপির নেতৃত্ব থেকে জিয়া পরিবার কেন সরে যেতে পারে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যেকোনো দেশের রাজনীতিকে এখন আর বৈশ্বিক রাজনীতির হিসেব-নিকেশ থেকে আলাদা করে ভাবলে চলবে না। বৈশ্বিক শক্তিগুলো তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী নয়। কূটনীতিকরাও তার সঙ্গে কথা বলতে চান না।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে যে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এত দৌড়ঝাঁপ করলেন সেই দেশেও ঢুকতে পারেন না তারেক রহমান। তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না দেয়ার জন্য অনেক আগেই ওয়াশিংটনকে সুপারিশ করেছিল ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি করায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে উল্লেখ করে ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক গোপন বার্তায় এই সুপারিশ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়র্টি পাঠানো রিপোর্ট ফাঁস করে দিয়েছিলো উইকিলিকস। এতে দেখা যায়, তারেক রহমানকে আমেরিকার ইমিগ্রেশেন ও ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ২১২ (এফ)-এর আওতায় এবং প্রেসিডেন্সিয়াল প্রোক্লেমেশান ৭৭৫০-এর আওতায় আমেরিকায় প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, দূতাবাস বিশ্বাস করে, তারেক রহমান খুবই খারাপ ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত একজন রাজনীতিবিদ। তাকে আমেরিকায় ঢুকতে দিলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত জে এফ মরিয়র্টি তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, এই প্রোক্লেমেশন অনুযায়ী তারেক রহমানকে আমেরিকায় প্রবেশ করতে দেয়া যায় না। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তারেক রহমান আমেরিকার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য হুমকিস্বরূপ। তাকে আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং কুখ্যাত ব্যক্তি হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
Advertisement

২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। জানা গেছে তার ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা এখনও বলবত রয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পারসন নন-গ্রাটা হিসেবেই চিহ্নিত।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী এবং এশীয় দেশগুলোও সন্ত্রাস এবং জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে তারেক রহমানকে ভয়ংকর ব্যক্তি হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে। এই ইস্যুগুলো বিএনপির তৃণমূলের অনেকেই না জানলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বিষয়গুলো স্পষ্ট।
যদিও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই মনে করেন, জিয়া পরিবারের বাইরে বিএনপির অস্তিত্ব নেই। ফলে দলের নেতৃত্ব থেকে তাদের কোনোভাবেই বাদ দেয়ার সুযোগ নেই।
Advertisement

নেতৃত্বে পরিবর্তনের কথা বেশ কিছুদিন থেকেই চলছে। কিন্তু তিনি (তারেক রহমান) তো নেতৃত্ব ছাড়ছেন না।



