এবার পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরুর অপেক্ষায় পদ্মা সেতু (ভিডিও)

SHARE

 

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,সোমবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৩ : অপেক্ষার পালা শেষ। আরও একটু স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে দেশের লাখো কোটি মানুষের। এবার পদ্মা নদীর উপর দিয়ে ছুটবে ট্রেন। যার পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার।

এইদিন সকালে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত যাবে একটি বিশেষ ট্রেন। মূল সেতুতে চার মাস ধরে চলেছে পাথরবিহীন ট্র্যাক বসানোর কাজ। যা শেষ হয়েছে গেল ২৯ মার্চ।

Advertisement

 

গেল বছরের ২৫ জুন চালু হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দোতলা পদ্মা সেতুর ওপরে বাসগাড়ি আর নিচে রেল চলার কথা ছিলো। কিন্তু নানা কারণে রেলের কাজ শেষ হতে অনেকটা সময় লাগে।

সেই অপেক্ষার অবসান হচ্ছে মঙ্গলবার। যানবাহন চলাচল শুরুর প্রায় নয় মাস পর এবার সেতুর নীচতলা দিয়ে শুরু হচ্ছে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল।

Advertisement

এদিন ফরিদপুরের ভাঙা পুরাতন স্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত ৪১.৫ কিলোমিটার নতুন রেল লাইনে চলবে একটি বিশেষ ট্রেন।

পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ জানান, তাদের প্রকৌশলী টিম সর্বশেষ ঢালাই অংশ পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন।

ঢালাই অংশের কিউব কেটে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। সব ক্ষেত্রেই সন্তোষজনক ফল এসেছে। দুই পাড়ের মোট ১৩ কিলোমিটার পাথরবিহীন রেলপথ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।

Advertisement

গত বছরের ২৩ নভেম্বর মূল সেতুতে শুরু হয় পাথরবিহীন রেল ট্র্যাক বসানোর কাজ। চারমাস পর গেলো ২৯ মার্চ শেষ স্লিপারটি বসানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয় সেই কাজ।

পদ্মার দুই পাড়ে রচিত হলো রেলের সেতুবন্ধন। এরমধ্য দিয়ে এবার দক্ষিণাঞ্চলেও বিস্তৃত হচ্ছে রেল নেটওয়ার্ক। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেললাইন হচ্ছে।

প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে তিন ভাগে বাস্তবায়ন হচ্ছে পুরো প্রকল্পের কাজ। ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ভাঙা ও ভাঙা থেকে যশোর। মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ।

প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশের বেশি। আর পুরো প্রকল্পকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের অগ্রগতির ৭৪ ভাগ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯২ ভাগ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬৮ শতাংশ।

তবে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটারের অংশে আগামী সেপ্টেম্বর যাত্রীবাহী রেল চলাচলের আশা করছেন তিনি।

সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষ দিকে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার অংশে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আর পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে।

নতুন এই রেলপথে অত্যাধুনিক ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি সংস্কার করা হচ্ছে পুরনো ৬টি স্টেশন। নির্মাণ করা হয়েছে বেশকিছু রেল কালভার্ড, আন্ডারপাস ও রেলসেতু।

Advertisement

কর্মকর্তার জানিয়েছেন, রেললাইন বসে গেলেও খুঁটিনাটি অনেক কাজ বাকি। সেতুতে বসানো রেললাইনে এখনও ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শেষ হয়নি।

ফলে গ্যাংকার খুব আস্তে চালাতে হবে। তবু গ্যাংকার ঝাঁকি খাবে। যতোটুকু পথে রেললাইন বসেছে তাতে ট্রেন চলতে কমপক্ষে আরো তিন মাস লাগবে।

রেলের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রকল্পের অধীন প্রথমে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে। এই রেলপথ চালু হলে আরও ছয়টি রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে।

প্রাথমিক ভাবনায় রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, যশোরের বেনাপোল, খুলনা, রাজশাহীর ট্রেনও এই পথে চালানোর চিন্তা আছে। চলবে ভারতে যাওয়ার মৈত্রী ট্রেনও।

Advertisement

বর্তমানে রেলপথে ঢাকার সঙ্গে খুলনার দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন রেলপথটি চালু হলে দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার।

লেভেল ক্রসিংবিহীন এই রেলপথে ৩২টি কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। নতুন ১৪টি স্টেশন নির্মাণ এবং পুরনো ছয়টি স্টেশন উন্নয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে।