স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় সালিশে ৫০ হাজার টাকায় আপস, আটক ৩

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বান্দরবান প্রতিনিধি,বুধবার , ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২, ২৫ সফর ১৪৪৭ :

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে পাঁচ অভিযুক্তকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনার এক সপ্তাহ পর মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) স্থানীয় মেম্বার, হেডম্যান ও পাড়া প্রধানসহ (কারবারী) পাড়ার গণমাণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সামাজিক সালিশে আপস করে দেন। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার জেরে পুলিশ এ ঘটনায় ৩ জনকে আটক করেছে।

Advertisement

ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টায় মারমা জনগোষ্ঠীর সামাজিক আইনের রীতিনীতি অনুসারে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর পরিবারকে চিকিৎসা খরচের জন্য পাঁচজন ধর্ষককে ১০ হাজার টাকা করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ভুক্তভোগীর মা-বাবাকে আপস করানো হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাইন্দু পাড়া প্রধান থোয়াইসা মারমার উপস্থিতিতে এই বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। স্থানীয় মেম্বার গংবাসে মার্মা’র ভাষ্যমতে, সামাজিক সালিশে ভুক্তভোগীর বক্তব্যে বলা হয়, চলতি মাসের শুরুর দিকে পাইন্দু হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা রাংমেশের মার্মার ছেলে শৈহাইনু মার্মা প্রথম তাকে ধর্ষণ করে পরে বিষয়টি তার মাধ্যমে তার বন্ধু ক্যাহ্লা ওয়াইং, ক্য ওয়ং সাই, চহাই, উহাই সিং ও ক্য সাই ওয়ং জানতে পারে।

পরে সামাজিক ভয় দেখিয়ে পর্যায়ক্রমে ওই ছাত্রীকে তারা ধর্ষণ করে। ভুক্তভোগী বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। এতে সবার মধ্যে এই ঘটনা জানাজানি হয় যায়। পরে মারমা সামাজিক বিচারে অভিযুক্ত ধর্ষণকারী ৫ জনকে মোট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ও চিকিৎসার খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভুক্তভোগীর বাবার সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করেন। তবে স্থানীয়রা সহযোগিতা করলে সত্য ঘটনা বলতে রাজি আছি বলে জানিয়েছেন।

এদিকে গতকাল রাতে ঘটননাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটকে রুমা থানার ওসি নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি জানান।

এই ঘটনার বিষয়ে রুমা থানার ওসি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী জানান, তারা ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছেন এবং বর্তমানে খোঁজ নিচ্ছেন। আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি। এদিকে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ভুক্তভোগী বা তার পরিবার থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিবে।

সমাজকর্মী অহ্লাশিং মার্মা ও জেসি ত্রিপুরা বলেন, সামাজিক বিচারের নামে এমন গুরুতর অপরাধকে জরিমানা দিয়ে মীমাংসা করার ঘটনাটি আইনের শাসন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের পরিপন্থী। এতে ধর্ষকরা আরও বেপরোয়া হয়ে যাবে।

Advertisement

বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাউছার বলেন, ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত উহাইসিং, ক্যহ্লাওয়াং, ক্যসাইওয়াং মারমা নামে তিনজনকে আটক করে। তাদের বান্দরবান সদর থানায় নিয়ে আশা হচ্ছে। বাকিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

ধর্ষণের অভিযোগে আটক ৩ | ছবি: ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)