যুদ্ধাপরাধ তদন্তে বিশেষ আদালত গঠন করবে শ্রীলঙ্কা

SHARE

418শ্রীলঙ্কায় এক দশক ধরে চলা জাতিগত যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে সংগঠিত বড় ধরনের নৃশংসতার ঘটনা তদন্তে আগামী বছরের শুরুতে একটি বিশেষ যুদ্ধাপরাধ আদালত কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার দেশটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা একথা বলেন। জাতীয় ঐক্য ও মীমাংসা দফতরের প্রধান সাবেক প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা বলেন, ২০০৯ সালের মে মাসে শেষ হওয়া ৩৭ বছর ধরে চলা সংঘাতের শিকারদের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা ছাড়া তার কাজ শেষ হতে পারে না।

কুমারাতুঙ্গা সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় সাত বছর আগে আমরা যুদ্ধটি শেষ করেছি, কিন্তু আমরা শান্তি জয় করতে পারিনি। অতীতের ভুল স্বীকার করা ছাড়া কোনো মীমাংসা সম্ভব নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করা না হলে তামিল বিচ্ছিন্নবাদী সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার মানুষ মীমাংসা মেনে নেবে না।

কুমারাতুঙ্গা বলেন, জানুয়ারির মধ্যেই একটি বিশেষ আদালত কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ গত সেপ্টেম্বরে একটি প্রস্তাব পাস করে। দু’মাস পর জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ সে প্রস্তাব বাস্তবায়নে শ্রীলঙ্কার অগ্রগতি পর্যালোচনা করার কথা রয়েছে।

কুমারাতুঙ্গা আরও বলেন, বেশির ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং বিশেষ আদালত এ মাসের শেষ বা জানুয়ারির গোড়ার দিকে কাজ শুরু করবে। আদালত প্রতিটি সৈন্যের বিষয়ে তদন্ত করবে না, কিন্তু প্রধান ‘লাইন অব কমান্ড’-এর ব্যাপারে তদন্ত হবে। বেঁচে থাকা তামিল বিদ্রোহী নেতাদেরও ‘ভয়ংকর অপরাধ’-এর অভিযোগ প্রশ্নে জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং তামিলরা শ্রীলঙ্কার যুদ্ধাপরাধ তদন্তে আন্তর্জাতিক বিচারক ও আইনজীবীদের সংশ্লিষ্ট করার দাবি জানিয়ে আসছে। তবে সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে সেটি প্রত্যাখ্যান করছে।

কুমারাতুঙ্গা বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করেন যে, স্বাধীন বিদেশী বিচারকদের সম্পৃক্ত করা শ্রেয়, যেমনটি গত অক্টোবরে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাবে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো শ্রীলঙ্কার রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সময় সরকার ও বিদ্রোহী উভয় পক্ষই বেসরকারি নাগরিকদের টার্গেট করেছে বলে অভিযোগ করে থাকে।

১৯৭২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চলা এ সংঘাতে অন্তত এক লাখ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। ২০০৯ সালে যুদ্ধ শেষে হওয়ার দুই মাস আগে সরকারি বাহিনী যখন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এক সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে তখন বেশ কয়েকটি মারাত্মক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে এ সময় হাজার হাজার মানুষ নিহত হন।

১৯৯৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার শাসন ক্ষমতায় থাকা কুমারাতুঙ্গা বলেন, তার দফতর কয়েক দশকব্যাপি চলা গৃহযুদ্ধ অবসানের পর জাতিগত শান্তি নিশ্চিত করতে দেশের সংখ্যাগুরু সিংহলী ও সংখ্যালঘু তামিলদের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করতে কাজ করছে।