ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কুমিল্লা প্রতিনিধি, মঙ্গলবার ১২ আগস্ট ২০২৫ || শ্রাবণ ২৮ ১৪৩২ :
কুমিল্লা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা আব্দুল গফুর ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শামসুল আলমকে অকথ্য ভাষায় গালি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নাঙ্গলকোট উপজেলার ভোলাইন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সভাপতি পদ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
Advertisement
এ-সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে, যা রাইজিংবিডি ডটকমের হাতে এসেছে। অডিওতে অপর প্রান্তে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শামসুল আলমের কণ্ঠ শনাক্ত করেছেন এ প্রতিবেদক।
চলতি বছরের ১৮ মে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের ভাই ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দিন শিশিরকে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে সুপারিশ করেন জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। এদিন সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়া শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ফোন করে গালি ও হুমকি দেন। পরদিন স্বশরীরে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে মব তৈরি করে চেয়ারম্যানকে ভয় দেখানোরও অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি এতদিন ধামাচাপা থাকলেও অডিও রেকর্ড ফাঁসের পর বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
অডিও রেকর্ডের শুরুতে শোনা যায়, সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়া উত্তেজিত কণ্ঠে বলছেন, “যে মিডিয়া সেলের দায়িত্বে ছিল, সে এখন নাই, এখন নাই সে।”
অপর প্রান্ত থেকে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, “আমাকে সে এটা পরিচয় দিয়েছিল।”
জবাবে সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়া বলেন, “সে পরিচয় দিক। তারপরও একজন সাবেক সংসদ সদস্যকে আপনি এভাবে অপমান করতে পারেন না। আমি আপনার অফিসে এসে আপনাকে অপমান করব। আপনার কত বড় কলিজা হয়েছে, আমি দেখব আপনাকে। আপনাকে কে এখানে বসাইছে, আমি তার কলিজা খুলে ফেলব, আপনার কলিজাও আমি খুলে ফেলব। বেয়াদবির একটা সীমা আছে। একটা টোকাইয়ের ইয়ে দিয়েছেন আপনি। একটা চাকরি করে সে এখানে, টোকাই।”
শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান শামসুল আলম জবাবে বলেন, “উনি আমাকে বলেছেন, উনি খালেদা জিয়ার প্রেস…।”
তাকে থামিয়ে দিয়ে গফুর ভূঁইয়া বলেন, “আপনি আমাকে বলতেন যে, এইরকম একটা তদবির আছে। ওখানে তো সে ঢুকতে পারবে না, তার ভাই ঢুকতে পারবে না। আপনি যে ভেজাল লাগাইছেন একজন ইয়ে করে, এটার দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। আমি কালকে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। কত বড় সাহস আপনার, আমি দেখে নিব। এখন যদি ফেরত না আনেন ওই কুত্তার বাচ্চাকে, বলেন, বাস্টার্ডকে বলেন, কিসের কো-অর্ডিনেটর তুমি? ডকুমেন্ট দেখাও। শুয়োরের বাচ্চাকে…। আপনাকে আমি বলছি, আপনি এটা সুন্দরভাবে করেন, না হলে আপনার ক্ষতি হবে, আপনি অপমানিত হবেন। আমি আপনাকে দেখে নিব। আমি টোকাই না, আই এম নট কাউবয়। আই ওয়াজ আ ল মেকার, আই নো ল। কুত্তার বাচ্চা ডিসি। শুয়োরের বাচ্চা। আপনি এটা করেন, আমি বলে দিলাম।”
এদিকে, এ ঘটনার পরপরই ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দিন শিশির ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়ার কোনো কথা হয়নি। উনার সঙ্গে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কথা হয়েছে। হয়ত উনাকে গালিগালাজ করা হয়েছে।”
Advertisement
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শামসুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনো মতামত জানাতে ইচ্ছুক নই।”
এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেছেন, “এই লোকটি (গফুর ভূঁইয়া) ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের লোকজনকে হেনস্থা ও হুমকি দিয়ে থাকে।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া বলেন, “এগুলো আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।”