হাসপাতালের পার্কিংয়েই হত্যা করা হয়েছে জাকির ও মিজানুরকে, অভিযোগ স্বজনদের

SHARE

নিহত মিজানুর (বায়ে) ও জাকির হোসেন: সংগৃহীত ছবি

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজধানীর মৌচাক   প্রতিনিধি, মঙ্গলবার   ১২ আগস্ট ২০২৫ ||  শ্রাবণ ২৮ ১৪৩২ :

রাজধানীর মৌচাক ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলের পার্কিংয়ে জাকির ও মিজানুরকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। মঙ্গলবার (১২আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই অভিযোগ করেন তারা।

Advertisement

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার লটপটিয়া গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে জাকির হোসেন। আর দক্ষিণ গোমাতলী গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে মিজানুর।

মর্গে নিহত মিজানুরের ভাগিনা মো. রিয়াদ বলেন, আমার মামা আগে গ্রামে বালু ব্যবসা করতেন। তবে সেই ব্যবসা বাদ দিয়ে আপাতত মাছের খামার করছিলেন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। জাকির আর মিজানুর দুই বন্ধু। জাকির প্রাইভেটকার চালাতেন, আর প্রায়ই মিজানুরকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন এবং তাকেও গাড়ি চালানো শিখাতেন। শনিবার রাতেই তারা দুজন, গাড়ির মালিক ও মালিকের এক আত্মীয় গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। মালিকের আত্মীয় দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য ওইদিন রাতে ফ্লাইট ছিল। তাকে নামিয়ে বিমানবন্দর থেকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে আসেন দু’জন। একজন রোগীকে নিয়ে পরদিন গ্রামে ফেরার কথা ছিল তাদের। এরপর কী হয়েছে আমরা জানি না। তবে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে এটা বুঝতে পারছি।

 

এদিকে, নিহত জাকিরের বাবা কৃষক মো. আবু তাহের বলেন, আমার ছেলের কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়াঝাটি নাই। কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কারা তাকে মেরেছে তাও জানি না। তবে, গত ২ বছর আগে অ্যামেরিকা যাওয়ার জন্য এলাকার এক দালালকে টাকা দিয়েছিলাম। সেই দালাল তাদেরকে নিয়ে এসেছিল ঢাকায় পল্টনে এক ট্র্যাভেল এজেন্সির ফজলু নামে এক ব্যক্তির কাছে। সব মিলিয়ে তখন প্রায় ২৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল। এরপর জাকিরকে শ্রীলঙ্কা নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে অবৈধ পথে আমেরিকা পাঠানোর কথা ছিল। তবে তখন সেটি পারেনি। এরপর আরও কিছু টাকা দিয়ে তাকে আমরাই দেশে ফেরত আনি।

তিনি বলেন, এরপর থেকে ফজলুর কাছে সেই টাকা ফেরত চাইতে গেলে সে কিছুদিন পর টাকা ফেরত দিবে বলে জানায়। এরপর বহুবার তার পিছানে ঘুরেও টাকা ফেরত পাচ্ছিলাম না। এই টাকা চাওয়ার কারণে তারা আমার ছেলেকে একবার মারধরও করেছিল। সবশেষ কিছুদিন আগে এলাকাতে দালালের সঙ্গে কথা হয় এবং স্ট্যাম্পে সই করে যে, চলতি মাসের ১০ তারিখে সেই টাকা ঢাকায় এজেন্সিতে এসে ফেরত দেবে। কিন্তু ওই ১০ তারিখেই জাকিরকে মেরে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনা তারাই ঘটিয়েছে বলে আমাদের ধারণা। তারাছাড়া আর কেউ এটি করতে পারে না।

Advertisement

প্রাইভেটকারের মালিক জোবায়েদ আল মাহমুদ সৌরভ জানান, মৃত ২ জন ও তার বাড়ি একই উপজেলায়। ১১ বছর ধরে গাড়ির ব্যবসা করেন তিনি। ৩ মাস ধরে তার প্রাইভেটকার ভাড়ায় চালান জাকির হোসেন। শনিবার সৌরভের এক আত্মীয় ইতালি যাবেন, সেজন্য রাতে গাড়িতে করে সেই আত্মীয়সহ ৪ জন ঢাকায় আসেন। তাকে বিমানবন্দর নামিয়ে দিয়ে ৩ জন মৌচাক ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে যান। সেখানে তাদের গ্রামের এক রোগী ভর্তি আছে। তাকে রোববার সকাল ১১টায় ছুটি দেয়ার কথা ছিল। শনিবার ভোরে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সৌরভ সিদ্ধান্ত নেন, তিনি বাসে করে গ্রামে চলে যাবেন। আর জাকির ও মিজানুর সকালে রোগীসহ গ্রামে ফিরবেন। সেই কথামত তিনি বাসে করে চলে আসেন আর ওই বাসের টিকিট কেটে দেন জাকির। এরপর রোববার বিকেলে প্রথম তিনি জাকিরকে ফোন দেন গাড়ি নিয়ে ফিরেছেন কী না জানার জন্য। কিন্তু তার ফোন রিসিভ হচ্ছিল না। এরপর থেকে অনেকবার ট্রাই করেও জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। পরদিন অর্থাৎ সোমবারও যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। সোমবার বিকেলে তিনি ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এর আগে অর্থাৎ দুপুর ৩টার দিকে রমনা থানা পুলিশ তাকে ফোন দিয়ে জানায়, হাসপাতালের পার্কিংয়ে তার গাড়ির ভিতর থেকে ২ জনের লাশ পাওয়া গেছে।

এর আগে, নিহতদের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রমনা থানা পুলিশ। প্রতিবেদনে উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন উল্লেখ করেন, তাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ফোলা ও ফোসকা পড়া। এছাড়া মুখ লালচে ফোলা ও রক্তমাখা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের মৃত্যুর কোন কারণ উল্লেখ নেই প্রতিবেদনে।

নিহত মিজানুর (বায়ে) ও জাকির হোসেন: সংগৃহীত ছবি