মাংস বিক্রিতে স্বেচ্ছাচারিতা

SHARE

khasirmangshoঢাকা: গরু ও খাসির মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা মানা হচ্ছে না রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে। উপরন্তু বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন ক্রেতাদের কাছ থেকে। কোনো ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০টা পর্যন্তও বেশি নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে ঘটছে বাক-বিতণ্ডার ঘটনাও।

শুক্রবার (১৭ জুন) রাজধানীর পাইকারি মাংস বিক্রির কাপ্তান বাজার, খুচরা বিক্রির কারওয়ান বাজার, সেগুনবাগিচা বাজার ও বাড্ডা গুদারাঘাট বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

সরকারের নিদের্শনা অনুযায়ী, প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হওয়ার কথা ৪২০ টাকায়, মহিষের মাংস ৪০০ টাকায় এবং খাসির মাংস ৫৭০ টাকায়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বিক্রির কাপ্তান বাজারে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ টাকায়। আর গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৩০ টাকায়। অবশ্য মহিষের মাংস এখানে বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত ৪০০ টাকায়ই।

আর এ বাজারের প্রতিটি মাংসের দোকানেই ঝুলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্ধারিত মূল্যের তালিকা।

কেন সরকার নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে খাসি ও গরুর মাংস বিক্রি করছেন- এমন প্রশ্ন করা হলে ‘এনাম খাসি আড়ত’র মালিক এনাম বাংলানিউজকে বলেন, বেশি দামে খাসি কিনতে হয়, তাই বেশি দামে বিক্রি করি।

তার এ কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ‘মায়ের দোয়া আড়ত’র মালিক আলো মাতবর বলেন, গ্রাম থেকে খাসি কিনে আনতে হয়। এখন আর ছাগলেকে কেউ ঘাস খাওয়ায় না। সবাই ভুষি, খইল এসব খাবার খাওয়ায়। এসব খাবারের দাম অনেক বেশি। এ জন্য খাসির মাংসের দাম বেশি।

তবে অতিরিক্ত দামে মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে বিক্রেতারা এমন যুক্তি দেখালেও এ নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে নিয়মিতই নানা বাক-বিতণ্ডা হচ্ছে তাদের।

দাম বেশি নেওয়ার চিত্র দেখা গেল খুচরা মাংস বিক্রির কারওয়ান বাজারেও। এখানে প্রতিকেজি খাসি ৬৫০ টাকা, গরু ৪২০ টাকা এবং মহিষ প্রতিকেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এখানে মাংস কিনতে আসা ব্যাংকার মোজাম্মেল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, সারাজীবন দেখেছি আষাঢ় মাসে ছাগলের দাম কমে যায়। কিন্তু এখন দেখি তার উল্টো।

সরকারের নির্ধারিত মাংসের মূল্য তালিকা টানিয়েও অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে কারওয়ান বাজারের মাংস বিক্রেতা সোলেমান বলেন, যারা দাম নির্ধারণ করেছেন, তারা অফিসে বসে দাম নির্ধারণ করেন। কিন্তু বাস্তবের হিসাব ভিন্ন।

তিনি দাবি করেন, সরকার নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করলে প্রতিকেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা লোকসান দিতে হবে।

মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি স্বেচ্ছাচারিত‍া দেখা গেল খুচরা বাজার বাড্ডার গুদারাঘাটে। এই বাজারে খাসির মাংস প্রতিকেজি ৭০০ টাকায়, গরুর মাংস ৪৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এই বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম রাখছে সেগুনবাগিচা বাজারও। সেখানে খাসির মাংস প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। আর গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকায়।

পাইকারি মাংস বিক্রির কাপ্তান বাজারে পণ্য সঠিক দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা পরিদর্শনে মাত্র দু’দিন আগে সেখানে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। সেই সময় করপোরেশনের নির্ধারিত দামে গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হলেও শুক্রবার (১৭ জুন) তা কেন বেশি রাখা হচ্ছে?

এমন প্রশ্ন করলে সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (বাজার) ও বাজার নিয়ন্ত্রক প্যানেলের সদস্য ইউসুফ আলী সরদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বিষয় দেখার দায়িত্ব আমার নয়।’

তাহলে কার দায়িত্ব? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আমার এক কলিগকে হাসপাতালে দেখতে এসেছি।’ এ কথা বলেই মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন ইউসুফ আলী।