ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (ভিডিও),সুন্দরবন প্রতিনিধি, সোমবার ১৩ অক্টোবর ২০২৫ || আশ্বিন ২৮ ১৪৩২ :
হঠাৎ করে লোকালয়ে দেখা যাচ্ছে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীর। কিন্তু কেন? কখনও হরিণ, কখনও বানর আবার বনের রাজা বাঘের দেখাও মিলছে। এসব প্রাণীরা যখন লোকালয়ে ঘোরাফেরা করছে তা দেখে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। তবে এনিয়ে বন বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে। তারা বলছেন বাঘের তাড়া খেয়ে এবং এক প্রকার পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য তারা বন ছেড়ে লোকালয়ে ছুটে যাচ্ছেন। তবে পরিবেশবিদরা বলছেন, মূলত প্রাণীদের আবাস্থল সংকট এবং খাদ্যের অভাবেই বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসছে।
Advertisement
সর্বশেষ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে পূর্ব সুন্দরবনের হারবাড়িয়া পর্যটন স্পটের ফুট টেইলরে (কাঠের তৈরি পায়ে হাঁটার পথ) ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় একটি বাঘকে। তবে এসময় ওই ফুট টেইলরে পর্যটকরা না থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা হয়। এ প্রসঙ্গে হারবাড়িয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রমজান আলী কানন জানান, প্রথমে ফুট টেইলরের (কাঠের তৈরি পায়ে হাঁটার পথ) ওপর একটি বাঘকে ঘোরাফেরা করতে দেখন বন প্রহরীরা। এরপর তারা হাঁকডাক দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বাঘটি ফুট টেইলর থেকে নেমে বনের গহীনে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, আগে থেকে বনের হারবাড়িয়া অংশে বাঘের অবাধ বিচরণ রয়েছে। হারবাড়িয়া দিঘির পাড়ে প্রায় দেখা যায়। কিন্তু এবার ফুট টেইলরে ওঠে পড়ায় কিছুটা ভীতি কাজ করেছে। তবে এসময় পর্যটকরা না থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা হয়েছে।
এর আগে মোংলা উপজেলার বৌদ্ধমারী এলাকা থেকে বন থেকে ছুটে আসা দুটি হরিণকে উদ্ধার করে এলাকাবাসী। পরে বনরক্ষীরা খবর পেয়ে হরিণ দুটি নিয়ে এসে বনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ছেড়ে দেয়। আর বানরতো মোংলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দু’একদিন পর পর দেখা যায়।

স্থানীয় সাংবাদিক আমির হোসেন আমু বলেন, গত কয়েকদিন ধরে একটি বানর তাদের সিগনাল টাওয়ার এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরকম কয়েকটি বানর মোংলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর খবর তিনি পেয়েছেন।
Advertisement
প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘গত ২৭ সেপ্টেম্বর দুটি হরিণ বন ছেড়ে বৌদ্ধমারী গ্রামে চলে গিয়েছিল। এর দুটি কারণ থাকতে পারে, প্রথমটি হলো হরিণের যে আবাস্থল আছে সেটি তারা হুমকি মনে করে। যেমন হঠাৎ বাঘ তাড়া দিয়েছে দৌড়াতে দৌড়াতে নদীতে পড়ে অথবা লোকালয়ে চলে যায়। এছাড়া আরেক কারণ হলো- বনের ভেতরে কাটাস মাছি এবং দাশ মাছি নামে এক ধরণের পোকার আক্রমণের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হরিণ লোকালয়ে চলে যায়।
এ প্রসঙ্গে ‘সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’-এর মোংলার সমন্বয়কারী মো. নুর আলম শেখ বলেন, খাদ্যের অভাবের কারণে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে আসছে। যা বনভূমি ধ্বংস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ (যেমন বন্যা) এবং আবাস্থলে ধ্বংসের কারণে ঘটছে। এর ফলে বন্যপ্রাণী এবং মানুষের মধ্যে সংঘাত বাড়ছে, যা বন্যপ্রাণীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, কিছু ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা অপ্রতুল থাকে। সরকারিভাবে বন্যপ্রাণীদের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়। এজন্য এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে হবে। তা না হলে বন্যপ্রাণীদের বিলুপ্তি ঘটলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।