ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ প্রতিনিধি,রোববার ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ || ভাদ্র ২৩ ১৪৩২ :
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করা নূরাল হক ওরফে নূরাল পাগলার কবর ভেঙে তার মৃতদেহ তুলে এনে পুড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার জোড়ান মোল্লাপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে নূরাল পাগলার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও মৃত্যুর পর তার কবরকে কাবার আদলে বানানোর প্রতিবাদে এই ঘটনা ঘটেছে।
Advertisement
নূরাল পাগলার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড
নূরাল পাগলা আশি দশক থেকে তার নিজ বাড়িতে একটি দরবার শরীফ গড়ে তোলেন। তিনি নিজেকে ইমাম মাহদী হিসেবে দাবি করতেন, এবং তার অনুসারীদের জন্য নতুন কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মাহদী রাসূলুল্লাহ” তৈরি করেন। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে কোরআনকে অবমাননা করে ‘ভোজপাতা’ বলার এবং নামাজ ও আযানের বাক্য বিকৃত করার অভিযোগ রয়েছে। মৃত্যুর পর তার ভক্তরা ১২ ফুট উঁচু বেদি তৈরি করে তার কবর দেয় এবং তার কবরের ওপর “ইমাম মাহদীর কবর” লেখা একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। কবরের এই আকৃতি মক্কার কাবা ঘরের অনুকরণে করা হয়েছিল।
ক্ষোভ ও সহিংসতা
নূরাল পাগলার এসব কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। তার মৃত্যুর পর কাবার আদলে কবর তৈরি ও সাইনবোর্ড টানানোর পর আলেম সমাজ ও স্থানীয়রা তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তারা প্রশাসনের কাছে কবরটি সমতল করার দাবি জানান। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না আসায় ক্ষোভ বাড়তে থাকে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা প্রথমে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশ শেষে উত্তেজিত জনতা দরবারের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা লাঠিসোঁটা, শাবল ও হাতুড়ি নিয়ে দরবারে প্রবেশ করে। তারা ভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে, এবং শেষ পর্যন্ত কবর খুঁড়ে লাশ তুলে এনে পদ্মার মোড়ে পুড়িয়ে দেয়।
ইসলামী চিন্তাবিদদের বক্তব্য
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব শায়েখ হারুন ইজহার এবং ইসলামী আলোচক মাওলানা আবু মোহাম্মদ রহমানী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
* শায়েখ হারুন ইজহার বলেন: যে নূরাল পাগলার শিরকের চর্চার বিরোধিতা করার অধিকার জনগণের আছে, তবে এর প্রতিবাদে যে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ইসলাম কোনো কাফেরের লাশও পুড়িয়ে ফেলার অনুমতি দেয় না।
* মাওলানা আবু মোহাম্মদ রহমানী: বলেন, নূরাল পাগলা কাবা ঘরের আকৃতিতে কবর তৈরি করে মুসলিমদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রশাসনের নীরবতার কারণেই জনগণের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তবে তিনি এও বলেন যে কোনো লাশকে কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলা ইসলাম সমর্থন করে না।
উভয় চিন্তাবিদই প্রশাসনের উদাসীনতাকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন। তাদের মতে, প্রশাসন যদি আগে থেকেই ব্যবস্থা নিত, তবে এমন ভয়াবহ ঘটনা এড়ানো যেত।
Advertisement
আবশ্যক
প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫
মামলা ও বর্তমান পরিস্থিতি
এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলার অভিযোগের মধ্যে রয়েছে পুলিশের উপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা এবং ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। এই ঘটনার পর স্থানীয় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদল নূরাল পাগলার কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও, আরেক দল লাশ পুড়িয়ে ফেলার মতো অমানবিক কাজের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।