ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম(টিভি),’সবার দেশ’ সৌজন্যে প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫ || বৈশাখ ২৫ ১৪৩২ :
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেশত্যাগে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। ৮ মে ২০২৫-এ দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এক জনসমাবেশে এ ঘোষণা তিনি।
Advertisement
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় দেন, যারা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গেটের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন। বিক্ষোভকারীরা সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার এবং শাস্তির দাবি জানান।
এর আগে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠক চলাকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের অভিযোগ ছিল, সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বিক্ষোভকারীদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ঘটনার আগেও আসামিদের ধরা হচ্ছে, ঘটনার পরেও ধরা হচ্ছে। আমি এখানে এসে এ বিষয়ে জানতে পেরেছি এবং ইতিমধ্যে এ নিয়ে কথা বলেছি।
তিনি আরও বলেন, যারা এ ঘটনায় জড়িত, তাদের শুধু পদত্যাগ করালেই হবে না। তদন্তের মাধ্যমে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। তিনি জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেন।
এ ঘোষণার পর সোশ্যাল মিডিয়ায়, বিশেষ করে এক্স প্ল্যাটফর্মে, বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ উপদেষ্টার এ অবস্থানকে সৎ এবং দায়িত্বশীল হিসেবে প্রশংসা করেছেন। একটি পোস্টে বলা হয়, উনি সৎ একজন মানুষ, উনাকে ফাঁকি দেয়া হয়েছে। তবে, কিছু পোস্টে সরকারের সামগ্রিক ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। একজন ব্যবহারকারী অভিযোগ করেন, ইন্টেরিম সরকার জুলাই বিপ্লবের শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করছে। তারা সংস্কারের নামে ক্ষমতায় থাকতে চায়।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, তিনি এ ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে, নির্দিষ্ট কোনো কর্মকর্তার নাম বা তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
Advertisement
এদিকে, অতীতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট হাসিনার মুখ্য সচিব কামাল নাসের চৌধুরী, সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজনকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গিয়েছিলো। তবে, এ গ্রেফতারগুলো সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ ঘটনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তারা সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট তদন্ত এবং দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে। তাদের বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সরকার এখনও সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িত মূল ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং তাদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এ ঘোষণা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এটি সরকারের দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতার একটি ইঙ্গিত। তবে, কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক চাপের মুখে দেয়া একটি বিবৃতি হিসেবে দেখছেন। তদন্তের ফলাফল এবং জড়িতদের শাস্তির বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত।
এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত একটি পোস্টে বলা হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিদেশে পলায়নের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারলে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ ঘোষণা জনগণের মধ্যে আশা এবং সংশয় উভয়ই তৈরি করেছে।
Advertisement
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর এ অবস্থান সরকারের জবাবদিহিতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। তবে, তদন্তের অগ্রগতি এবং শাস্তির বাস্তবায়নই নির্ধারণ করবে এ ঘোষণার প্রকৃত তাৎপর্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপ এবং জনগণের প্রত্যাশা সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
ছবি: সংগৃহীত