শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিতে জুতাপেটা নিয়ে বিতর্ক, ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম(টিভি),রাজনীতি প্রতিনিধি,রোববার   ০৪ মে ২০২৫ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩২  :

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ফাঁসিতে ঝুলতে থাকা প্রতিকৃতিতে ‘তৌহিদি জনতার’ জুতাপেটার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে অনেকে এটা একজন সাধারণ নারীর প্রতিকৃতি ভেবে জুতাপেটা সাধারণ নারীদের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা।

Advertisement

 

শনিবার (৩ মে) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ঝুলতে থাকা হাসিনার প্রতিকৃতিতে এ জুতাপেটার মহাউৎসব করা হয় বলে জানা গেছে।

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন দাঁড়ি-টুপি পরিহিত ব্যক্তি প্রতিকৃতিতে সজোরে জুতাপেটা করছেন এবং আনন্দের করছেন। জুতাপেটার ফলে প্রতিকৃতির পরনে থাকা শাড়ি প্রায় খুলে যাওয়ার অবস্থা হলে তা আবার পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

 

শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিলের দাবিতে মহাসমাবেশ করে হেফাজত ইসলাম। নেটিজেনদের ধারণা, জুতাপেটা করতে দেখা যাওয়া দাঁড়ি-টুপিওয়ালা লোকজন মূলত আজ অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের ওই সমাবেশে এসেছিলেন। শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি জানতে পেরেই তারা ক্ষোভ ও ঘৃণা ধরে রাখতে না পেরে জুতাপেটা শুরু করেন।

 

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১ মে) থেকে হঠাৎ করেই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ওই প্রতিকৃতিটি দেখা যায়। ‘জাগ্রত জুলাই’ শীর্ষক এক ফাঁসির কাষ্ঠে এক নারীর প্রতিকৃতিকে ফাঁসিতে ঝুলতে দেখা যায়। ওই প্রতিকৃতির পরনে ছিল জারুল ফুলের রংয়ের নকশা করা শাড়ি ও ব্লাউজ। মুখ ছিল কালো কাপড়ে ঢাকা। ভাইরাল ভিডিওতে জুতাপেটার ফলে শাড়ি খুলে যাওয়ায় দেখা যায়, প্রতিকৃতিটি মূলত ফোমজাতীয় কোন দ্রব্য থেকে তৈরি পুতুল। তবে কে বা কারা এ প্রতিকৃতি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে রেখে যান, তা জানা যায়নি।

 

জুতা পেটার এ ভাইরাল ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। কেউ বলছেন, এটি শেখ হাসিনার বিগত শাসনামলের অপকর্মের প্রতি হেফাজত কর্মীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। আবার প্রতিকৃতিটি শেখ হাসিনার নয়, বরং আজকের হেফাজতের কর্মসূচি ঘিরে আজকেই নারী বিদ্বেষ থেকে নারীর প্রতিকৃতিটি তৈরি করা হয় এবং তাতে জুতা মেরে নারীদের প্রতি ধিক্কার জানানো হয় বলে দাবি করছেন অনেকে।

আনামুল হক সালমান নামের একটি ফেসবুক আইডিতে বলা হয়, ‘গণহত্যাকারী হাসিনার প্রতিকৃতিতে জুতাপেটা করলে সেটা নাকি নারীর প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ! ফ্যাসিস্টের দোসর এসব কথিত মিডিয়ার মিথ্যাচার নিয়ে প্রশ্ন তুললে সেটা নাকি আবার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ! এই ফ্যাসিনাপন্থী কথিত সুশীলদের পরাজিত করার আগ পর্যন্ত এই দেশ কখনো স্বাধীন হবে না!”

 

ফেসবুকে ইসহাক বিন কাফেলা নামের এক পেজ থেকে বলা হয়, “এইটা স্বৈরাচার হাসিনার প্রতীকী। কয়েকদিন আগেই ঝুলানো হয়েছে। হুজুররা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হাসিনার প্রতীকীকে নিয়ে উল্লাস করছে। অথচ আজ মিডিয়াগুলো দেখাচ্ছে, হুজুররা নারীর প্রতি নাকি এইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছে! মানে হুজুরদের নারী বিদ্বেষী বানিয়ে দিলো! আমার লিস্টের কতক সুশীল ভাইবোনদেরও সেইম কাজ করতে দেখা গেছে।”

Advertisement

পোস্টে আরো বলা হয়, “এটা আজকের সমাবেশ উদ্দেশ্য করে ঝুলানো না। এটি নারীর প্রতি ক্ষোভের কারণে কেউ ঝুলায়নি। বরং হাসিনার প্রতীকী।”

 

ভিডিওটি ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড পেজে শেয়ার করে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, “দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এক নারীর প্রতিকৃতি বানানো হয়েছে জুতোপেটা করার জন্য। নারীকে কী করে ঘৃণা করতে হবে, কী করে তাদের হেনস্তা করতে হবে, নির্যাতন করতে হবে তা শেখানো হচ্ছে। যেন ওপেন ওয়ার্কশপ চলছে।”

তিনি লিখেছেন, “সন্ধ্যের পর পুরুষেরা শাড়ি-ব্লাউজ খুলে প্রতিকৃতিকে রেপও করে যাবে বলে মনে হচ্ছে। এরা বাংলার নারীকে এভাবেই ট্রিট করে, এভাবেই ট্রিট করতে চায়। সরকারের কাছে নারীর প্রাপ্য অধিকার দাবি করা হচ্ছে এই খবর শুনে সারা দেশের ইসলামি গুণ্ডারা উন্মাদ হয়ে উঠেছে। তাদের কুৎসিত নারীবিদ্বেষ ছিটকে পড়ছে চারদিকে।”

 

তিনি আরও লিখেছেন, “আসলে যে নারীর প্রতিকৃতি বানিয়েছে জুতোপেটা করার জন্য, সে কোনও ইন্ডিভিজুয়ালের প্রতিকৃতি নয়, সে মা, বাংলা মায়ের প্রতীক। তারা এই বাংলা মাকে, দেশ মাতৃকাকে, এভাবেই ছিন্নভিন্ন করছে, রক্তাক্ত করছে, উলঙ্গ করছে, ধর্ষণ করছে।”

তবে সাংবাদিক এহসান মাহমুদ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “জাগ্রত জুলাই নামের এক সংগঠন শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিতে ফাঁসি দিয়ে একটি কর্মসূচি পালন করেছে। আজকে ৩ মে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ছবিটি আজকের দিবস উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে এবং কয়েকজন টুপি পাঞ্জাবি পরিহিত লোকজন এই ছবিটিকে জুতাপেটা করছে, এমন নিউজ ও সংবাদ পরিবেশন করতে দেখলাম।”

তিনি বলেন, “বাস্তবতা হচ্ছে এই ছবিতে প্রতীকী আক্রমণ করার ঘটনা নারীর প্রতি হেনস্থা বা সহিংসতা নয়। এটা মূলত শেখ হাসিনার প্রতি ঘৃণার প্রকাশ। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ফাঁসির ছবিকে যারা নারীর প্রতি অবমাননা হিসেবে চিহ্নিত করছেন, তারা মূলত আওয়ামী লীগের দোসর। এদেরকে দ্রুত চিহ্নিত করুন।”

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদকে একাধিকবার মোবাইলে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে ঢাবি ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক সাইফ মুহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, “আজকের ঘটনাকে ঘিরে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা নিছক একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে মানুষের মাঝে বিদ্বেষ ছড়ানোর একটি বহুলচর্চিত চক্রান্তের অংশ। আমরা লক্ষ্য করছি, আজকের প্রতিকৃতি ছিল খুনি হাসিনার। কিন্তু কিছু ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী যারা জুলাইয়ের খুনিদের পুনর্বাসনে তৎপর, তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে রক্ষার মোড়কে ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের ওপর আঘাত হানার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

Advertisement

তিনি বলেন, “তারা জানে, ইসলামই একমাত্র শক্তি, যা জুলুমের বিরুদ্ধে জনগণকে জাগাতে পারে। তাই তারা ইসলামকে ‘সহিংসতা’ বা ‘নারী বিদ্বেষ’ এর সঙ্গে জুড়ে দিয়ে ভয় ছড়াতে চায়। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং ইসলামী আন্দোলন কখনোই কোনো নারী বা নিরীহ মানুষের অসম্মানকে সমর্থন করে না। আমরা এই অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের জবাব আদর্শ, শান্তিপূর্ণ সংগঠিত প্রতিরোধ ও জনগণকে সত্য জানিয়ে দেব।”