ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম(টিভি),নওগাঁর বদলগাছি প্রতিনিধি, শুক্রবার ০২ মে ২০২৫ || বৈশাখ ১৯ ১৪৩২ :
নওগাঁর বদলগাছি উপজেলায় একটি কক্ষে নারী সহকর্মীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের একাধিক ভিডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ওই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিডিও ক্লিপগুলো বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহাম্মদ ও তার নারী সহকর্মীর। এই দুই শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ওই অভিযোগের অনুলিপি বদলগাছি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে।
দুই শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আহবায়ক করে বুধবার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার অঞ্জন কুমার কুণ্ডু ও বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম।
বদলগাছি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াসিউর রহমান বুধবার বিকাল ৩টায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহাম্মেদ ও তার স্ত্রী সহকারী প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী প্রায় দিনই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। একদিন বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতার স্বাক্ষর করেন। প্রধান শিক্ষকের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে। প্রধান শিক্ষক কাউকে তোয়াক্কা করেন না। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে বলেও তারা কোনো সুফল পাননি।
প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে তার এক নারী সহকর্মীকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। পরে তারা দুজন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা বিষয়টি জানতে পারেন। তবে তারা ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। ঈদের পর তাদের দুজনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
বিলাশবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ও পারসোমবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার বলেন, বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এক নারী সহকর্মীর সঙ্গে প্রদান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহাম্মদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিডিও ফেসবুক ও অনলাইন মাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তারা দুজন শিক্ষকতার মহান পেশায় থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। বিদ্যালয় থেকে তাদের অপসারণ দাবি করছি।
শেখর আহমেদ বলেন, আমি এলাকার একজন সচেতন মানুষ হিসেবে এ ঘটনার ভিডিও ক্লিপ দেখে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি ওই দুই শিক্ষকের যথাযথ ব্যবস্থা চাই। ঈদের ছুটির পর বিদ্যালয় খোলা হলে আমরা মানববন্ধন করব।
প্রধান শিক্ষক ও সহকারী অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ যুগান্তরের কাছে এসেছে। একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহাম্মেদ তার চেয়ারে বসে আছেন। তার টেবিলের সামনে চেয়ারে তারই নারী সহকর্মী একা বসে আছেন। প্রধান শিক্ষক তার চেয়ার থেকে উঠে এসে নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করছিলেন। তখন নারী সহকর্মী হাত দিয়ে মুখমণ্ডল আড়াল করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক ওই নারী সহকর্মীকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এরপর প্রধান শিক্ষক তার চেয়ারে গিয়ে বসেন।
Advertisement
আরেক ভিড়িও ক্লিপে প্রধান শিক্ষক তার চেয়ার থেকে উঠে এসে নারী সহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করছিলেন। এই ভিডিও ক্লিপে নারী সহকর্মীকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।
বিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, নারী সহকর্মীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষক আবু সাদত শামীম আহাম্মেদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনাটি অনেক আগেই জানতে পারেন। ওই নারী সহকর্মী প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গেলে প্রধান শিক্ষক কাউকে সেখানে থাকতে দিতেন না। তারা সেখানে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করতেন। কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দৃশ্য ধারণের জন্য ভিডিও করার পরিকল্পনা করেন।
ঈদের ছুটির তিন দিন আগে তারা গোপনে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের একটি আইপি বাল্ব ক্যামেরা লাগান। আইপি ক্যামেরায় প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দৃশ্য ধরা পড়ে। এ বিষয়টি জানাজানি হলে প্রধান শিক্ষক তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। এরপর অন্য একটি পক্ষ ভিডিও ফাঁস করে। এতে অভিভাবক ও এলাকায় সচেতন লোকজনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে জানতে বেগুনজোয়ার উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহাম্মেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শফি মাহমুদ বলেন, আমি ভিডিও ক্লিপ দেখে মঙ্গলবারে প্রধান শিক্ষক ও তার নারী সহকর্মীকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। তারা দুজন পৃথকভাবে আমার সঙ্গে দেখা করে ভিডিওগুলোর দৃশ্য সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। একটি মহল তাদের দুজনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে তারা আমাকে বলেছেন।
এ বিষয়ে বদলগাছি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমীন বলেন, আমি ভিডিও ক্লিপ পেয়েছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছি।
Advertisement
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াসিউর রহমান বলেন, বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তার নারী সহকর্মীর অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্য প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।