(ভিডিও)‘ ধর্ষনের সেঞ্চুরিয়ান মানিকের পরিনতি?

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (ভিডিও),বিশেষ প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ||  আশ্বিন ১০ ১৪৩২ :

সেঞ্চুরিয়ান মানিকের কথা মনে আছে? পুরো নাম জসিম উদ্দিন মানিক। জাবির (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) নাট্যতত্ত্বের সাবেক ছাত্র। জাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন করে যিনি ‘সেঞ্চুরিয়ান মানিক’ নামে দেশে-বিদেশে কুখ্যাত হয়ে ওঠেন।

Advertisement

১৯৯৮ সালের আগস্টের শুরুতে জাবি ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে একটি আনন্দ উৎসব ও পার্টির আয়োজন করে। কেক কাটা, মিষ্টি বিতরণ, ককটেল ফাটিয়ে রীতিমতো চোখ ধাঁধানো উৎসব! কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা কেউ জানে না ছাত্রলীগের এ উৎসবের উপলক্ষ্য কী। পরে জানা গেল তা ছিল তাদের নেতা জসিম উদ্দিন মানিকের ওই জঘন্য ঘটনার সেঞ্চুরি উদযাপন। নজিরবিহীন এ ঘটনায় সাধারণ ছাত্র-শিক্ষক হতভম্ব ও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কিন্তু তারপরও কারও মুখে কোন ‘রা’ নেই। কারণ তাদের নির্যাতনের ভয়ে সবাই তখন তটস্থ। দুই-একজন শিক্ষক মুখ খুললেও কোনো পত্রিকা এ খবর ছাপানোর সাহস দেখায়নি। ১৭ আগস্ট ১৯৯৮ সর্বপ্রথম জাবির এ ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট করে ‘মানবজমিন’। পরে ডেইলি স্টার ও অন্যান্য পত্রিকা আরও বিস্তারিতভাবে রিপোর্ট করে। এতে টনক নড়ে সবার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথমে সব অস্বীকার করে। কিন্তু ততক্ষণে আন্দোলন শুরু করে দেন সাধারণ ছাত্ররা। ১৯৯৮ সালের ১৯ আগস্ট তারা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রথম বড় ধরনের প্রতিবাদ করেন। তারপর চলতে থাকে একের পর এক সমাবেশ ও বিক্ষোভ। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনা তদন্তের জন্য কমিটি করতে বাধ্য হয়। তদন্ত শুরু হলে অনেক ছাত্রীই মুখ খুলতে শুরু করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮, তদন্ত কমিটি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কমপক্ষে ২০টি নারী নির্যাতন (ধর্ষণ) এবং ৩০০টি যৌন হয়রানির ঘটনা নিশ্চিত করে। বিষয়টি জানার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কার ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবি জানায়। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মানিককে আজীবনের জন্য বহিষ্কার এবং তার অনুসারীদের ১ থেকে ৩ বছরের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে অস্বীকৃতি জানায়।

Advertisement

প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

পরবর্তী সময়ে মানিকের প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগের গ্রুপ এবং তার অনুসারীরা তাদের কাছ থেকে ছাত্রাবাসের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেয় এবং ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে তাদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। পরে তারা অস্ত্রশস্ত্রসহ ক্যাম্পাসে ফিরে এলেও প্রতিপক্ষের দাপটে টিকতে পারেনি। আর মামলা না হওয়ায় মানিকরা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে। পরে নানা ঘটনার পর মানিককে ইতালি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মানিকদের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ১৯৯৯ সালেও বহাল ছিল। কিন্তু পরিহাস হলো, এমন জঘন্য অপরাধ লাগাতারভাবে করে যাওয়ার পরও, প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মানিকদের শাস্তি দূরে থাক, শেষ পর্যন্ত আইনের আওতায়ও আনা যায়নি।

Advertisement

২৫ বছর পর একই আন্দোলন জাবিতে আবার শুরু হয়েছে। শনিবার রাতে স্বামীকে হলে আটকে স্ত্রীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানোর প্রতিবাদে জাবি এখন আবারও প্রতিবাদে উত্তাল। আবারও দাবি উঠেছে অপরাধীর শাস্তির। কিন্তু সেই শাস্তি আদৌ হবে কি? মানিকের ঘটনা প্রকাশের পর জাবি দেশে-বিদেশে এতটাই নিন্দিত ও সমালোচিত হয়, যা আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঘটেনি। তারপরও জাবি ওই ‘কলঙ্ক’ ঘুচাতে পারেনি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চেষ্টা কি ছিল? থাকলেও সেই চেষ্টা কি পর্যাপ্ত ও তর্কাতীত ছিল? শনিবারের জঘন্য ঘটনা সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়। প্রশ্ন হলো, এই কলঙ্ক বা ক্ষয়ক্ষতি কি শুধু জাবির? এটি কি গোটা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তথা গোটা দেশের ওপর কলঙ্ক নয়?