ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),নারায়ণগঞ্জের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি, শনিবার ২৩ আগস্ট ২০২৫ || ভাদ্র ৮ ১৪৩২ :
অফিসে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) নিখোঁজ হওয়া সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) সালেহ আহমেদ পাঠান জানিয়েছেন, শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে কলাগাছিয়া এলাকায় মেঘনা নদীতে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির লাশ ভাসতে দেখা যায়। নৌ পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর রমনা থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া সাংবাদিকের ছবির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।
রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার সময় বিভুরঞ্জনের যে ছবিটি পরিবার দিয়েছিল, তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পর বিষয়টি রমনা থানাকে জানায় মুন্সীগঞ্জের পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাসুদ আলম রাইজিংবিডিকে বলেছেন, “আমরাও শুনেছি, ওই সাংবাদিকের মরদেহ মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত বলতে পারছি না। সেখানে আমাদের টিম গেছে।”
৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন চাকরি করতেন ‘আজকের পত্রিকা’য়। এর বাইরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখতেন।
তিনি সর্বশেষ নিবন্ধটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মেইল করেন বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায়। ফুটনোটে তিনি লেখেন, “জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।”
যোগাযোগ করা হলে তার ছোট ভাই চিত্তরঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, নানা কারণে হতাশায় ভুগছিলেন বিভুরঞ্জন। এরপর রাতে তার নিখোঁজ হওয়ার খবর আসে।
‘খোলা চিঠি’ শিরোনামে বিভুরঞ্জনের শেষ লেখাটি শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত বিভাগে প্রকাশিত হয়। সেখানে নিজের ও ছেলের অসুস্থতা, মেডিকেল পাস সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের উচ্চতর পরীক্ষায় ফেল করা, বুয়েটে থেকে পাস করা ছেলের চাকরি না হওয়া এবং নিজের আর্থিক দৈন্য নিয়ে হতাশার কথা লিখেছেন তিনি।
পরিবার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বের হন বিভুরঞ্জন। মোবাইল ফোনটিও তিনি বাসায় রেখে গিয়েছিলেন।
তিনি না ফেরায় এবং কারো কাছে তার কোনো তথ্য না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার ছেলে ঋত সরকার।
সেখানে তিনি বলেন, প্রতিদিনের মত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা করেন তার বাবা। কিন্তু, এরপর আর বাসায় ফেরেননি।
ঋত সরকার বলেন, “আমরা বাবার অফিসে (বনশ্রী) খোঁজ নিই এবং জানতে পারি যে, তিনি অফিসে উপস্থিত হননি। আমরা সম্ভাব্য সকল স্থানে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু, কোথাও পাওয়া না গেলে থানায় এসে সাধারণ ডায়েরির আবেদন করলাম।”
যোগাযোগ করা হলে রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম ফারুক শুক্রবার সকালে বলেছিলেন, “আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তবে, উনি ফোনটা বাসায় রেখে গেছেন। ফোনটা সাথে থাকলে হয়ত খুঁজে পেতে সুবিধা হত।”
Advertisement
বিভুরঞ্জনের ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার রাতে ফেইসবুকে লিখেছেন, “আমার দাদা সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অন্যান্য দিনের মতো অফিস (আজকের পত্রিকা) যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে অফিসে যায়নি। পরিচিত পরিমণ্ডলের কোথাও যায়নি। আজ কেউ তাকে দেখেনি। রাত ১টা পর্যন্ত সে বাসায় ফেরেনি। হাসপাতাল-পার্ক কোথাও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে আজ মোবাইলও বাসায় রেখে গেছে। রাতে রমনা থানায় জিডি করা হয়েছে। তার জন্য আমরা পরিবারের সবাই ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে আছি।”
এরপর শুক্রবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জে বিভুরঞ্জনের লাশ পাওয়ার খবর জানায় পুলিশ।