(ভিডিও) সমন্বয়ক পরিচয়ে ১০ লাখের পর আরও টাকা নিতে গিয়ে ধরা পাঁচজন

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজধানীর গুলশান প্রতিনিধি,মঙ্গলবার   ২৯ জুলাই ২০২৫ ||  শ্রাবণ ১৪ ১৪৩২ :

সমন্বয়ক পরিচয়ে রাজধানীর গুলশানের একটি বাসায় গিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ) এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পাঁচ নেতা। গতকাল শনিবার রাতে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শাম্মী আহমেদের বাড়িতে ঢুকে চাঁদার টাকা আদায়ের চেষ্টার সময় তাদের আটক করে গুলশান থানা পুলিশের একটি দল। গ্রেপ্তাররা প্রথম দফায় সাবেক এই সংসদ সদস্যের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে (৭৪) জিম্মি করে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায় করে। এরপর আরও দুই দফা ওই বাসায় গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে দাবি করা চাঁদার বাকি ৪০ লাখ টাকার জন্য চাপ দেয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী গৃহকর্তা আবু জাফর। সবশেষ গতকাল তৃতীয়বারের মতো বাসায় গিয়ে হুমকি-ধমকি দেয় আটক ওই পাঁচজন। তখন সিদ্দিক আবু জাফর প্রতিকার কামনা করে পুলিশের সহায়তা চাইলে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে গুলশান থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান।

Advertisement

তিনি গতকাল রাত ১০টায় কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। আটক পাঁচজনের মধ্যে তিনজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। বাকি দুজন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা। ভুক্তভোগী আটকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছেন। মামলার কাজ সম্পন্ন হলে আমরা তাদের গ্রেপ্তার দেখাব।’

চাঁদাবাজির অভিযোগে গতকাল রাতে থানা হেফাজতে আটক থাকাদের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান (রিয়াদ), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য সাদমান সাদাব এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না। আটক অন্য একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাড্ডা থানা শাখার সদস্য। অপ্রাপ্তবয়স্ক (বয়স ১৮-এর কম) হওয়ায় তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হলো না।

ভুক্তভোগী সিদ্দিক আবু জাফর থানায় জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে গত ১৭ জুলাই সকালে রিয়াদ ও অপু (২২) আমার বাসায় ঢুকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে পঞ্চাশ লাখ টাকা দাবি করে। আমি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দিয়ে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে আমার নিজের কাছে থাকা পাঁচ লাখ ও আমার ভাইয়ের কাছ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে তাদের দিই। এর এক দিন পর গত ১৯ জুলাই রাতে তারা আবার বাসায় ঢুকে আমার ফ্ল্যাটের দরজায় জোরে ধাক্কা মারে। তাৎক্ষণিক আমি বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে মোবাইল ফোনে জানাই। এটা শুনে তারা চলে যায়। এরপর শনিবার বিকেলে রিয়াদসহ তারা আবার আমার বাসার সামনে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমি বাসায় না থাকায় আমার বাসার দারোয়ান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমাকে বিষয়টি জানায়। আমার ধারণা, আসামিরা আমাকে আবার ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে টাকা (চাঁদা) নিতে এসেছে।’ আটক এই পাঁচজন ছাড়াও ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগে আসামি হিসেবে আরও দশ থেকে বারোজনের নাম উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া প্রথম দফায় ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে নগদ ১০ লাখ টাকা নেওয়ার একটি ভিডিওতে সেখানে রিয়াদ এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুসহ আরও কয়েকজনের উপস্থিতি দেখা গেছে। গুলশান থানা সূত্রে ওই ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

Advertisement

এদিকে চাঁদা নিতে গিয়ে আটক হওয়ার পর আটক পাঁচজনের মধ্য থেকে চারজনকে গতকাল রাতেই নিজ নিজ সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিক এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলাপরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাবকে সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।’

অন্যদিকে, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সেল সম্পাদক (দপ্তর) মাহফুজুর রহমান স্বাক্ষরিত আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে কিছু ব্যক্তি সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গেলে সেখানে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুর সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংগঠনের ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলাপরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা এবং চাঁদাবাজির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় কেন্দ্রীয় সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার ও সদস্য সচিব জাহিদ আহসানের নির্দেশনায় জানে আলম অপুকে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সব পর্যায়ের দায়িত্ব ও সদস্যপদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।’ তবে মূল অভিযুক্ত রিয়াদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল নীতি মেনে চলছি। এরই মধ্যে অভিযুক্তদের সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছি। আমরা চাইব দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি হোক।’

Advertisement

https://www.youtube.com/live/E9fMBkbJ3-M?si=k2Ro-HFkcInWkNQ

আর গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার আটকদের বিষয়ে বলেন, ‘তারা আমাদের সংগঠনের পরিচয়ে নয়, বরং সমন্বয়ক পরিচয়ে এসব কাজ করছে। আমরা এসব চাঁদাবাজকে প্রশ্রয় দিই না। আমরা দ্রত সময়ের মধ্যে তাদের বহিষ্কার করেছি।’

সমন্বয়ক পরিচয়ে ১০ লাখের পর আরও টাকা নিতে গিয়ে ধরা পাঁচজন