উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি,সোমবার   ২৮ জুলাই ২০২৫ ||  শ্রাবণ ১৩ ১৪৩২ :

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পটি পাস না হওয়ায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পদত্যাগ দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস-৩ এর শহীদ মিনার চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র প্রতিনিধিরা বক্তব্য প্রদানকালে এ দাবি জানান।

Advertisement

তাদের বক্তব্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চলতি বছরের ১৬ জুন শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রামকান্তপুর মৌজার বুড়ি পোতাজিয়ায় সরেজমিনে গিয়ে ক্যাম্পাসের নির্ধারিত স্থান দেখে পরিদর্শন করেন ও প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর একনেকের ৩টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে অথচ রহস্যজনক কারণে এখনও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পটি পাস হয়নি। এমন কি তিনি তার প্রতিবেদনে কি জানিয়েছেন সেটিও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে।

তারা বলেন, ওই প্রতিবেদনে তিনি কী লিখলেন, আমরা তা জানি না। বিষয়টি আমাদের জানানো হলে আমরা তার সমাধান করতে পারতাম। এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন, মিরাজ হোসেন ও অম্মার আহমেদ প্রমুখ। তারা বলেন, উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পরিদর্শনের পর একাধিক একনেক সভা অনুষ্ঠিত হলেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পটি এজেন্ডাভুক্ত না হওয়া দুরভিসন্ধিমূলক কি-না তা নিয়ে আশঙ্কার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। কেন বা কী কারণে এমনটি হচ্ছে, তার কোনো ব্যাখ্যাও সরকার আমাদেরকে জানায়নি। এটি কেবল রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি উপেক্ষা নয়, এটি বাংলাদেশের বিপ্লবী ছাত্রসমাজের স্বার্থের প্রতি অবজ্ঞা।

২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালে। প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য সরকার কোন  টাকা বরাদ্দ দেয়নি। পূর্বের সরকারের সময়ে আমরা দেখেছি, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে প্রতিষ্ঠিত হলেও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত সরকার।  রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দূর্ভোগ নিরসনে কালক্ষেপণ করবে না  কিন্তু আমরা অত্যন্ত ব্যথিত, হতাশ এবং ক্ষুব্ধ।

Advertisement

তারা বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৎকালীন জমিদারির অন্তর্গত খাস জমিতেই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হওয়ার কথা। ভূমি অধিগ্রহণের ঝামেলা এবং পরিবেশের কোনোরূপ ক্ষতি ছাড়াই সেখানে নান্দনিক একটি ক্যাম্পাস নির্মাণ করা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৯ বছর অতিক্রান্ত হলেও স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে কোনো অর্থই বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। পরপর ৭ বার ডিপিপি সংশোধন করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিকে বিবেচনায় রেখে সর্বশেষ ৫১৯ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার ডিপিপি উপস্থাপন করেছে। যা পরিকল্পনা বিভাগে চলতি বছরের ৭মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় আলোচিত হয়। ওই একনেক সভায় সভাপতি হিসেবে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়টি কেবল স্থাপনের কথাই বলেননি, কবিগুরুর নামের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক গুণগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন আন্তর্জাতিক মানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থাপিত হয় সে ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। ওই একনেক সভায় প্রায় সবাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য ঐক্যমত্যে পৌঁছান।

তবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসটি সরেজমিনে এসে দেখতে চান। সে অনুযায়ী চলতি বছরের ১৬ জুন তিনি শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রামকান্তপুর মৌজার বুড়ি পোতাজিয়ায় গিয়ে ক্যাম্পাসের স্থান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে এক বক্তব্যে তিনি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণে কারো দ্বিমত নেই বলে বক্তব্য রাখেন ও তার ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন। এরপর ফিরে গিয়ে এ সংক্রান্ত লিখিত প্রতিবেদন জমা দিলেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি কী লিখলেন, আমরা তা জানি না। এরপর একাধিক একনেক সভা অনুষ্ঠিত হলেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়,বাংলাদেশের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পটি এজেন্ডাভুক্ত না হওয়া দুরভিসন্ধিমূলক কি-না তা নিয়ে আশঙ্কার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। কেন বা কী কারণে এমনটি হচ্ছে, তার কোনো ব্যাখ্যাও সরকার আমাদেরকে জানায়নি। এটি কেবল রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি উপেক্ষা নয়, এটি বাংলাদেশের বিপ্লবী ছাত্রসমাজের স্বার্থের প্রতি অবজ্ঞা।

তারা বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ আজ চূড়ান্তরূপে হতাশ। শ্রেণিকক্ষের সংকট, আবাসন সংকট, নিরাপত্তাহীনতাসহ ক্যাম্পাসহীনতার নানাবিধ অসুবিধার কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা, দক্ষ জনসম্পদ হয়ে ওঠা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও ক্যাম্পাসহীনতার দূর্ভোগের সঙ্গে লড়াই করে কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। আজ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে এবার আমরা রাজপথেই থাকবো। যতক্ষণ না রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রকল্প অনুমোদন হয়, আমরা রাজপথেই অবস্থান করব। আমাদের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।

এ সময় তারা আরও বলেন, আগামী ২৭ জুলাই একনেক সভায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পটি পাস না হলে রেল ও সড়ক পথ অবরোধ করে উত্তরাঞ্চলের সাথে ঢাকাসহ সমগ্র দেশের রেল ও সড়ক পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এতে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হবে এর জন্য সরকার দায়ী থাকবে।  তারা আগামী ২৫ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ অন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়া আগামী ২৬ জুলাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের সকল কর্মসূচী বয়কট করেন। এরপর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অ্যাকাডেমিক ভবন-৩ এর মিলনায়তনে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

Advertisement

https://www.youtube.com/live/E9fMBkbJ3-M?si=k2Ro-HFkcInWkNQ

এতে বক্তব্য রাখেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) নজরুল ইসলাম ও আইন কর্মকর্তা আরমান শোভন। তারাও আগামী ২৬ জুলাইয়ের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের সকল কর্মসূচী বয়কটসহ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবেন।