কুমিল্লা মেঘনায় নদী ভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দারা এসেছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে আজ (ভিডিও)

SHARE

https://www.facebook.com/share/p/1JCjZBbkiF/

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),দৈনিক ঐশী বাংলা সৈাজন্যে, রোববার   ২০ জুলাই ২০২৫ ||  শ্রাবণ ৫ ১৪৩২ :

(ভিডিও)
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় মেঘনা নদীতে অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে এবং ভিটেমাটি রক্ষার দাবিতে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

Advertisement

চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের রামপ্রসাদেরচরসহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা এই মানববন্ধনে অংশ নেন। তাঁরা অবৈধ বালু উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন হোমনা মেঘনা উন্নয়নের আলোকিত মুখ, বড়ইয়াকান্দি গ্রামের কৃতিসন্তান, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সংগ্রামী সেক্রেটারি জেনারেল এবং সাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ সমন্বয়ক, জনাব নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, “বালু সন্ত্রাসীদের আগ্রাসনে মেঘনার পাড়ের মানুষ আজ অসহায়। দিনের পর দিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে আমাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্কুল, মসজিদ, বাড়িঘর সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে শত শত পরিবার। আমরা বহুবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।

স্থানীয় প্রশাসন যেন বালুদস্যুদের পক্ষাবলম্বন করছে। অবিলম্বে এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় মেঘনার মানচিত্র থেকে বহু গ্রাম চিরতরে মুছে যাবে।”
এ সময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কলামিস্ট, সাহিত্যিক, কথাশিল্পী ও বহু গ্রন্থের প্রণেতা এডভোকেট জয়নুল আবেদীন, দৈনিক ঐশী বাংলা জাতীয় পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ড. মাওলানা আনিসুর রহমান জাফরী, স্থানীয় বিএনপি নেতা এডভোকেট কামরুজ্জামান, এডভোকেট হাবিবুর রহমান (হাবিব), মুহসিন সহ ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বিষয়: মেঘনার অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে ভিটে-বাড়ি-গ্রাম রক্ষার ডাক
আসসালামু আলাইকুম।
আপনার সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং উন্নয়নের সফলতায় বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। উৎপাদন ও উন্নয়নে জাতি আপনার সরকারের নিকট কৃতজ্ঞ। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, একদল বালু সন্ত্রাসীর আগ্রাসন ও অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। তারা দিনে ও রাতে কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলাধীন রামপ্রসাদেরচর, মৈশারচর, নলচর গ্রামের ভূমিহীনদের, ফরাজীকান্দি, চালিভাঙ্গা গ্রামের আবাদী জমি ও বসতভিটা ‘বালুমহাল ও অবৈধ বালু উত্তোলন’-এর নামে ইঞ্জিনচালিত ৬০/৭০টি ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন করে নদীগর্ভে বিলুপ্ত করছে।
কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলাধীন অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের কারণে রামপ্রসাদেরচর, মৈশারচর, নলচর, ফরাজীকান্দি, চালিভাঙ্গা গ্রামের বসতভিটা ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বাপ-দাদার ভিটা, ফসলি জমি, স্কুল, মসজিদ হারিয়ে এখন আমরা প্রায় সর্বস্বান্ত। জীবনের শেষ সম্বল রক্ষার মৌলিক তাড়না থেকেই আজ আমরা একতাবদ্ধ হয়েছি।

প্রিয় দেশবাসী,
ইতিহাস থেকে জানা যায়, চারশত বছর আগে প্রমত্তা মেঘনা নদীর পলি থেকে আজকের মেঘনা উপজেলার চরাঞ্চলটির উৎপত্তি। ৩২ কিলোমিটার আয়তনের এ প্রাচীন জনপদ ছিল গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু — এক কৃষি-সমৃদ্ধ জনপদ। মায়া-মমতার এক অদ্ভুত সেতুবন্ধন লক্ষ্য করা যেত মানুষে মানুষে। কিন্তু কালের আবর্তে সেই মেঘনার অতল গহ্বরেই তলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের গ্রাম, পাড়া, ভিটে-মাটি, ফসলি জমি—সব কিছু। মেঘনার খোলা জল দুঃস্বপ্নের ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ছে গৃহস্থ-গ্রামবাসীর ঘাটে। অথচ আমাদের এ দুর্ভোগ কোনো প্রাকৃতিক নয়। সম্পূর্ণ মানব-সৃষ্ট কারণে একের পর এক বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা, গ্রাম, বাড়ি-ঘর। বালুসন্ত্রাসীদের লোভের ড্রেজার খুবলে খাচ্ছে আমাদের অস্তিত্বকে। প্রতিদিন রক্তাক্ত করছে আমাদের ভিটেমাটি।
ক্রমাগত বালু উত্তোলনের ফলে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পুরনো নলচর গ্রাম। গত ১৮ বছরে রামপ্রসাদেরচর গ্রামের ৭০ ভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ গ্রামের ২৪৫টি পরিবারের বসতভিটা, ৩০০টি পরিবারের আবাদী জমি, দুটি মসজিদ, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কয়েকশ’ পরিবারের প্রায় ৩৭৫ একর ফসলি জমি এখন মেঘনার তলদেশে।

মেঘনা উপজেলার মানচিত্র থেকে মুছে গেছে টেহা নগর, পুরাতন নলচরের ৭০ শতাংশ, ভাসানিয়া দড়িরচর মৌজার ৭০ ভাগ, ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া আবাদী জমি ৪০ একর, সেনেরচর মৌজার রামপ্রসাদেরচর গ্রামের ৭০ ভাগ। তারা হাজার হাজার একর মেঘনা ও তার শাখা নদীর তলদেশ লুট করে ১০০/১১০ ফুট গভীর নদী সৃষ্টি করেছে। আক্রান্ত হয়েছে ওপারের মুনের টেক, এপারের সেনেরচর, ভাসানিয়াদড়িচর, সাপমারা চরেরগাঁও মৌজা। অবৈধ, অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের কারণে নদীগর্ভে বিলুপ্ত হয়েছে এলাকাটির ৮০০ কোটি টাকার সম্পত্তি, কিন্তু ইজারা থেকে সরকারের কোষাগারে আসে মাত্র কয়েক কোটি টাকা। এর আগে সোনারগাঁও উপজেলার মানচিত্র থেকে খাসেরচর, কালিরচর (চররমাজান, চরলাউয়াদি মৌজা) নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

Advertisement

সচেতন মহল,

এভাবে গ্রামের পর গ্রাম সাবাড় করেও যেন তৃপ্ত নয় বালুদস্যুরা। এ দস্যুদের রুখতে ইতিমধ্যে আমরা বহু কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। কান্নাকাটি করে বাপ-দাদার বসতভিটা তাদের কাছে ভিক্ষা চেয়েছি। কিন্তু নদীগর্ভে বিলীন হওয়া সম্পত্তি মানুষদের আহাজারি বালু সন্ত্রাসীদের মন এতটুকু গলাতে পারেনি। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমরা বারবার ধরনা দিয়েছি বালুসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। প্রশাসনও আমাদের আর্তনাদ শোনেনি, প্রকারান্তরে কৌশলে বালুদস্যুদের পক্ষাবলম্বন করেছে। গত ১৮ বছরে বহু চেষ্টায়, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সহযোগিতায় দুই-তিন বছরের জন্য সন্ত্রাসীদের বালু উত্তোলন বন্ধ হলেও স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়নি। এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি শুধুই আশ্বাস। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আবার বালু সন্ত্রাসী চক্রটি নেতৃত্ব বদল করে পুনরায় পুরোদমে অবৈধ বালু উত্তোলন চালু করে। বাধ্য হয়ে আমরা আইনের আশ্রয় নিলে আমাদের ওপর নেমে আসে জুলুম-নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, প্রাণনাশের হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। কিন্তু এর মাঝেও আমরা বাঁচতে চাই। বাপ-দাদার অবশিষ্ট ভিটা, ঘর-বাড়ি রক্ষা করতে চাই। কারণ, এটিই আমাদের শেষ ঠিকানা।
আমরা মনে করি, শুধু মৈশারচর, বড়ইয়াকান্দি, রামপ্রসাদেরচর, চালিভাঙ্গাই শুধু বালুসন্ত্রাসীদের শিকার নয়। পুরো মেঘনা উপজেলা তাদের দ্বারা আক্রান্ত। নদী-বিধৌত মেঘনা উপজেলার চারদিকের নদীতেই বালু সন্ত্রাসীদের থাবার চিহ্ন। রামপ্রসাদেরচর, মৈশারচর, বড়ইয়াকান্দি, চালিভাঙ্গা, ফরাজীকান্দি, টিটিরচর, সাতানি, সোনাকান্দা, তুলাতলীসহ কোনো গ্রাম, ভিটে-বাড়িই তাদের কাছে নিরাপদ নয়। অতএব, বালুদস্যুদের সৃষ্ট কারণে মেঘনার করালগ্রাস থেকে ভিটে-বাড়ি, ফসলি জমি রক্ষায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও সচেতন মহলের সাহায্য চাই। একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সৃষ্টিতে আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা চাইছি। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, এলাকাটিকে চিরতরে নদীগর্ভে বিলুপ্ত হওয়া থেকে আমাদের বাঁচান।

Advertisement

https://www.youtube.com/live/E9fMBkbJ3-M?si=k2Ro-HFkcInWkNQ2

আমাদের ৮ দফা দাবি:
১. রামপ্রসাদেরচর, মৈশারচর, বড়ইয়াকান্দি, চালিভাঙ্গা, ফরাজীকান্দি, নলচর সংলগ্ন নদী থেকে বালু উত্তোলন চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
২. মেঘনা উপজেলার চারপাশের সব ধরনের বালু ইজারা বন্ধ রাখতে হবে।
৩. বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. মৈশারচর থেকে চালিভাঙ্গা পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
৫. মেঘনা উপজেলা, মেঘনা থানার চালিভাঙ্গা নৌ পুলিশের ওসি জাহাংগীর আজমকে প্রত্যাহার করতে হবে।
৬. নদীগর্ভে বিলীন হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন করতে হবে।
৭. বালুদস্যুদের দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৮. বালু সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু ও অবৈধ বালু উত্তোলনকারী যুবলীগের টিটু, সানাউল্লাহ, সাব্বির, জুয়েল, খলিল; নামধারী বিএনপির বারেক ও তার ছেলে আলী হোসেন, মহসিন, হাসনাত; নামধারী যুবদলের রবিউল্লাহ রবি; নামধারী স্বেচ্ছাসেবক দলের আমজাদ, ইব্রাহিমকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
৯. বালু সন্ত্রাসীদের দ্বারা অর্জিত সকল সম্পত্তি ও তাদের ড্রেজার-বলগেট জব্দ করে সরকারি নিলামে বিক্রয় করা এবং অর্জিত সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।
নিবেদক,
অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে নদীগর্ভে বিলুপ্ত হওয়া এলাকার বাসীর পক্ষে
রামপ্রসাদেরচর, মৈশারচর, নলচর, চালিভাঙ্গা, বড়ইয়াকান্দি, ফরাজীকান্দি এর জনগণ।

কুমিল্লা মেঘনায় বালু উত্তোলনে ভাঙছে নদীর পাড়। নদী ভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দারা এসেছেন প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে আজ