ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঠাকুরগাঁও পৌর শহর প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫ || আষাঢ় ২৬ ১৪৩২ :
লোহার তৈরি খাঁচার মতো ঠেলাগাড়িতে ১৩ মাস বয়সী তিন জমজ শিশুকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক মা। তার পাশে হাঁটছে আরেক সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়ে। এমন করুণ দৃশ্য দেখা গেছে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরে। লোহার খাঁচার মধ্যেই এখন তাদের দিনরাত কাটে। জীবনযুদ্ধে এক ভিন্নরকম সংগ্রামের উদাহরণ এক মা, জান্নাত বেগম।
Advertisement
https://www.facebook.com/share/p/1NT3RTcPAN
জান্নাত বেগম ময়মনসিংহ জেলার মেয়ে। প্রায় পাঁচ বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে হয় ঢাকায় হাবিল নামের এক যুবকের সঙ্গে। বিয়ের পর তারা ঠাকুরগাঁওয়ে এসে বসবাস শুরু করেন। একে একে জন্ম দেন চার সন্তানের। প্রথমে এক মেয়ে সন্তান, এরপর একসাথে জন্ম নেয় তিন জমজ শিশু। দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বর্তমানে তিনি পৌর শহরের পরিষদ পাড়ার শ্যামলের বাড়িতে ভাড়ায় থাকছেন।
কিন্তু সন্তান জন্মের কিছুদিন পরই স্বামী হাবিল পরিবার ছেড়ে চলে যান। একা হয়ে পড়েন জান্নাত। চারটি শিশু সন্তানকে নিয়ে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। কাজ খুঁজে বের করতে গিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায় শিশুদের দায়িত্ব। তাদের রেখে বাইরে গিয়ে উপার্জনের কোনো সুযোগ তার হাতে ছিল না।
শেষ পর্যন্ত সন্তানদের ক্ষুধা নিবারণে বের করে আনেন এক অভিনব উপায়। নিজ উদ্যোগে স্থানীয় এক কামারের দোকানে চাকা লাগানো লোহার খাঁচা বানিয়ে নেন ৭ হাজার টাকা খরচে। সেই খাঁচায় বসিয়ে দেন তিন জমজ শিশুকে, আর পাশে হাঁটে বড় সন্তান মরিয়ম। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সাহায্য তোলেন তিনি।
জান্নাত বেগম বলেন, আমি সাহায্য তুলে দিন পার করি—এটা নিশ্চয়ই লজ্জার। কিন্তু আমার কোনো উপায় নেই। সন্তানদের ক্ষুধার্ত মুখ আমি দেখতে পারি না। অনেকে আমার সন্তানদের কিনে নেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে। লাখ লাখ টাকা দিতে চেয়েছে। কিন্তু সন্তানের প্রতি মায়ায় কখনই টাকার কাছে হার মানিনি।
Advertisement

তিনি জানান, আয় খুব সীমিত। তাই শিশুদের পর্যাপ্ত খাবার কিংবা পুষ্টিকর কিছু খাওয়াতে পারেন না। অনেক সময় তারা পেট ভরে খেতেও পায় না।
প্রতিবেশীরাও জান্নাতের দুর্দশা দেখে ব্যথিত। প্রতিবেশী রোকসানা পারভীন বলেন, একজন নারীর পক্ষে এত ছোট ছোট চারটি সন্তান লালন পালন করাই কঠিন। কিন্তু জান্নাত তাদের মানুষ করার পাশাপাশি রাস্তায় নেমে উপার্জনের চেষ্টা করছেন। তিনি সত্যিই সংগ্রামী।
আরেক প্রতিবেশী শারমিন বলেন, ওদের কান্নার শব্দ শুনে মনটা কেঁদে উঠে। কী অমানবিক জীবন যাপন করছে তারা। অথচ সমাজের ধনী মানুষরা অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করেন, কিন্তু জান্নাতের পাশে সেভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি।
Advertisement

এই করুণ বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে পেরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খায়রুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, বিষয়টি আগে জানা ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে ও জানার পরে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষে বিকেলে তাকে তাকে কিছু শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তিনি সম্ভবত অন্যের বা ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি চাইলে থাকার জন্য আমরা তাকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর প্রদান করতে পারি। এছাড়া তিনি যদি চান ভিক্ষাবৃত্তি বাদ দিয়ে কোনো সম্মানজনক পেশায় আসতে চান তাহলে আমরা সরকারিভাবে তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ও ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তাছাড়াও পরিস্থিতি বিবেচনায় যতটা সম্ভব প্রশাসন তার পাশে থাকার চেষ্টা করবে।
লোহার খাঁচায় জীবন: সন্তানদের জন্য সংগ্রামী এক মায়ের করুণ অবস্থা