ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),যশোরে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিধি,রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫ || আষাঢ় ২২ ১৪৩২ :
যশোরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রেস্ট হাউজে ‘ওসিসহ নারীকে আটকে চাঁদাবাজির’ অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় চলছে। এ-সংক্রান্ত সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হওয়ার পর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
Advertisement
অভিযোগ উঠেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম এক নারীকে নিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করছিলেন। এসময় এক স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা ৫-৬ জন সহযোগী নিয়ে সেখানে হানা দেন। ভাঙচুর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে দুই লাখ টাকায় আপসরফা করে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন।
গত ৩০ জুন এ ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হলে বিষয়টি শহরময় ছড়িয়ে পড়ে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে নেওয়া
এরপর ওই নারীকে নিয়ে একান্তে সময় কাটানোর অভিযোগ তুলে স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা সনি ওসির কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। দিতে অস্বীকৃতি জানালে শুরু করেন ভাঙচুর ও ভিডিও ধারণ। আনসার সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মচারীকে মারধরও করেন তারা। একপর্যায়ে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে দুই লাখ টাকায় রফাদফা করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ হাজির হলে স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা সনি ওসিসহ নারীকে পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দেন।
ঘটনার দিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেটে ডিউটি করা দায়িত্বরত আনসার সদস্য রাজু জানান, ওইদিন সন্ধ্যায় একজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে বাংলোতে প্রবেশ করেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এর ঘণ্টাখানেক পরে এলাকার কিছু লোকজন বাংলোর ভেতরে প্রবেশের পর দরজা আটকে দেন এবং ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেননি। এরপর আরও অনেকে আসেন। থানা থেকে পুলিশের লোকজনও আসেন। তবে ভেতরে কী ঘটেছে তা তিনি জানেন না।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে নেওয়া
রেস্ট হাউজের ইনচার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরুন হোসেন জানান, কার্যত পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশনায় তিনি ওসি সাইফুল ইসলামকে কক্ষ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সঙ্গে আনা নারীকে স্ত্রী পরিচয় দিয়েছিলেন। আর সাইফুল ইসলাম রেস্ট হাউজে অবস্থানকালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পাউবো ও থানার লোকজন সেখানে যান।
পাউবো রেস্ট হাউজের কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান বলেন, ওসি সাইফুল স্ত্রী পরিচয়ে একজন নারীকে নিয়ে বাংলোয় ওঠেন। আমি নিজে দরজা খুলে দিই। কপোতাক্ষ (কক্ষ) গুছিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে যাই। এরপর কিছু সময় পর ওসি স্যার নাশতা আনতে শহরের একটি হোটেলে পাঠান। আর ওসি সাইফুল ইসলাম ওই নারীসহ কক্ষে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করার পরে এলাকার কিছু লোকজন প্রবেশ করেন। রেস্ট হাউজের সামনে এসে দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন। এর কিছুক্ষণ পর সাইফুল ইসলাম দরজা খুলে বের হেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর চক্রটি তাকে টেনেহিঁচড়ে ওই নারীসহ ঘরে ঢোকেন।’
কেয়ারটেকার আরও বলেন, ‘এসময় ওসি টাকা বের করে দেন চক্রের লোকজনের হাতে। টাকা লেনদেন দেখে ফেলায় এবং রেস্ট হাউজে অবস্থানের চেষ্টা করায় আমাকেও মারধর ও রেস্ট হাউজ ভাঙচুর করা হয়। বাবুর্চি মিজানকেও মারধর করে।’
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওসিকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে সেখানে বহিরাগতরা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটান। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খতিয়ে দেখছে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউজের কপোতাক্ষ কক্ষ
এদিকে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ছাত্রদল নেতার কাছে হেনস্তার শিকারের দৃশ্য দেখা গেলেও তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ওসি সাইফুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, তার এক বন্ধু যশোরে একটা কাজে এসেছিলেন। তাকে নিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থানের সময় কয়েকজন ছাত্রনেতা আসেন। তারা পূর্বপরিচিত। তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবকদল গোলাম হাসান সনি বলেন, ‘নারীসহ একজন রেস্ট হাউজে অবস্থান করছেন সংবাদ পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। তবে সেখানে কোনো নারীর অবস্থান পাইনি।’
সিসিটিভি ফুটেজে নারী, ওসিসহ তাকে দেখা গেছে—এমন তথ্য জানানো হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সত্য নয়। আর যেহেতু নারী পাওয়া যায়নি, তাই ওসির সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলে চলে আসি। ফলে আপসরফার বিষয়টির কোনো ভিত্তি নেই।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবুল হাসনাত বলেন, পাউবো রেস্ট হাউজে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। তবে পুলিশ সেখানে গিয়ে কাউকে পায়নি।
ফাঁস হলো সিসিটিভি! রেস্ট হাউজে নারীসহ ওসি, ছাত্রদল নেতার দাবি চাঁদার