এবার ইমামসহ দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা নিউ ইয়র্কে

SHARE

১৪/০৮/২০১৬

স্থানীয় সময় শনিবার দুপুরে জোহরের নামজের পর কুইন্সের ওজনপার্কে ‘আল ফোরকান জামে মসজিদ’ এর কাছে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতদের মধ্যে মাওলানা আলাউদ্দিন আকুঞ্জি (৫৫) ছিলেন ওই মসজিদের ইমাম। নিহত অপর ব্যক্তি থেরাউদ্দিন (৬৪) তার প্রতিবেশী।

ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে অভিযোগ করে ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন প্রবাসী কয়েকশ বাংলাদেশি। তারা হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

নিউ ইয়র্ক পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর হেনরি সটনার ঘটনাস্থলে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “প্রকাশ্য দিবালোকে এমন পরিস্থিতি সত্যি উদ্বেগের ব্যাপার। এটি হেইট ক্রাইম কি না- তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”

মাওলানা আলাউদ্দিন আকুঞ্জি।

থেরাউদ্দিন

থেরাউদ্দিন

আলাউদ্দিনের ছোট ভাই মাশুকউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মসজিদ থেকে হাঁটা পথে ৭/৮ মিনিট দূরত্বে এক বাড়িতে তার ভাই থাকতেন। পাশেই থেরাউদ্দিনের বাসা। দুপুরে জোহরের নামাজের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তারা খুন হন।

পুলিশ বলছে, এক ব্যাক্তি পেছন থেকে তাদের মাথায় গুলি করে। ঘটনার পর অস্ত্র হাতে একজনকে দ্রুত ওই এলাকা ত্যাগ করতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

গুলির খবর পেয়ে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আলাউদ্দিনকে জ্যামাইকা হাসপাতালে এবং থেরাউদ্দিনকে এলমহার্স্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। আলাউদ্দিন হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই এবং থেরাউদ্দিন চার ঘণ্টা পর হাসপাতালে মারা যান।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের আলাউদ্দিন আকুঞ্জি পাঁচ বছর আগে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলের বিয়ে উপলক্ষে আগামী সপ্তাহে তার দেশে যাওয়ার কথা ছিল।

থেরাউদ্দিনের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নে। তবে সেখানে পরিবারের আর কেউ থাকেন না।

তার এক আত্মীয় একটি টেলিভিশন চ‌্যানেলকে জানিয়েছেন, সাড়ে চার বছর আগে নিউ ইয়র্কে যান থেরাউদ্দিন। তার ছেলেমেয়ে, ভাইবোনসহ পরিবারের সবাই সেখানেই থাকেন।

নিউ ইয়র্কের কুইন্সে দুই বাংলাদেশি খুন হওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশি তৎপরতা।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে ঘটানো হয়েছে এই হত্যাকাণ্ড।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে ঘটানো হয়েছে এই হত্যাকাণ্ড।

নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিন ও কুইন্সের সীমানা বরাবর এই ওজনপার্কে বাংলাদেশিদের পরিচালনায় আরও দুটি মসজিদ রয়েছে।

আল আমান মসজিদের সভাপতি কবীর বলেন, “এর আগে কখনো এ এলাকার মসজিদের ইমাম অথবা মুসল্লিকে এভাবে টার্গেট করা হয়নি। মাওলানা আলাউদ্দিনের মত সাদাসিধে মানুষের কোন শত্রু ছিল না।”

সিসি ক্যামেরার ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে কম্যুনিটি লিডার মিসবাহ আবদিন বলেন, ওজনপার্কের লিবার্টি এভিনিউ ও ৭৯ স্ট্রিটে নীল রংয়ের শার্ট ও হাফ প্যান্ট পরিহিত দীর্ঘকায় এক ২৭-২৮ বছর বয়সী যুবক খুব কাছে থেকে বন্দুক তাক করে পরপর পাঁচ রাউন্ড গুলি করে। তারপর সে দৌড়ে চলে যায়।

“নিহত দুজনের পরনেই পায়জামা-পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি ছিল। এটি ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলা ছাড়া আর কিছু না।”

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ইউনাইটেড ট্যাক্সি ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান এবং বাংলাদেশ সোসাইটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ওসমান চৌধুরীও একই কথা বলেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েকজনের হাতে ঘাতকের বিচার ও কম্যুনিটির নিরাপত্তার দাবিতে পোস্টারও দেখা যায়।

স্থানীয় কাউন্সিলম্যান এরিক এ আলরিচ সবাইকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান এবং ঘাতকদের চিহ্নিত করতে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আজমল হোসেন কুনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বুধবার  সন্ধ্যা ৬টায় ঘটনাস্থলে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন তারা। এজন্য নগর প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

তবে নিহত দুজনের মরদেহ দেশে পাঠানো হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে আলাউদ্দিনের ভাই মাশুকউদ্দিন জানান।

এর আগে ২০০২ সালে হিসপানিক দুই যুবকের হামলায় এ এলাকায় নিহত হন বাংলাদেশের ফটো-সাংবাদিক মিজানুর রহমান। ১১ অগাস্ট ছিল তার মৃত্যুবার্ষিকী।

কাছাকাছি এলাকায় ২০১৪ সালের ৯ জুলাই ভোরে খুন হন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজমুল ইসলাম (৫৭)।

মিজানের ঘাতকদের দীর্ঘমেয়াদি সাজা হয়েছে। আর নজমুল হত্যায় জড়িত দুই যুবকের বিচার চলছে কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে।