‘পাঁচ বছর আটকে’ থাকার পর যেভাবে উদ্ধার হলেন গৃহকর্মী (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম(টিভি),ফরিদপুর প্রতিনিধি,সোমবার   ১৯ মে ২০২৫ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩২ :

ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী মহল্লা এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে মরিয়ম বিবি (৬৫) নামের এক গৃহকর্মীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আটকে রেখে নির্যাতন ও জোর করে পাঁচ বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করানো হচ্ছে বলে মরিয়ম বিবির ছেলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার বিকেলে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ।

Advertisement

মরিয়ম বিবি ফরিদপুর শহরের আলীপুর মহল্লার রাজ্জাকের মোড় এলাকার মৃত রহিম উদ্দিনের স্ত্রী। তাঁর একমাত্র ছেলের নাম আবদুল মতিন (৩৮)। মতিন পেশায় মুদিদোকানি। তাঁর স্ত্রী ও তিন ছেলে আছে। আজ সোমবার দুপুরে পুলিশ মরিয়ম বিবিকে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। ছেলে আবদুল মতিনের জিম্মায় তাঁর মা মরিয়ম বিবিকে দেওয়ার নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান।

আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, অনেক ছোট বয়সে তিনি বাবাকে হারিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে তাঁর মা সিঙ্গাপুরপ্রবাসী আবদুল কাদেরের বাসায় থেকে গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন। আগে তাঁর আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল। এখন তিনি কিছুটা সচ্ছল হয়েছেন। তাঁর মাকে বাড়িকে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আবদুল কাদেরের স্ত্রী তাঁকে আটকে রেখেছিলেন। তাঁকে নির্যাতন করা হতো। তাঁর মা পাঁচ বছর কাজ করলেও কোনো বেতন দেওয়া হয়নি। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ওই সময় বাড়ির লোকজন ঘরে উপস্থিত থাকত। মা তাঁকে সত্যি কথা বলতে পারেননি।

আবদুল মতিন আরও বলেন, মাকে ফিরে পেতে গতকাল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেন। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পরে পুলিশ তাঁর মাকে উদ্ধার করে আনে।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফরিদপুর শহরের অনাথের মোড় এলাকায় ১০ তলা ‘গনি ভবন’–এর তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে মরিয়ম বিবিকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদ তালুকদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে আবদুল কাদেরের মেয়েরা ঘরের দরজা খুলতে রাজি হয়নি। ১৫ মিনিট পর দরজা খুলে দেয় বড় মেয়ে (১৪)। মেয়ের মুঠোফোনে সিঙ্গাপুর থেকে তাঁর (আসাদ) সঙ্গে কথা বলেন আবদুল কাদের। এ সময় আবদুল কাদের নিজেকে একজন হাই প্রোফাইলের লোক দাবি করে বাসায় যাওয়ার জন্য হুমকি দেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। তিনি জবাবে বলেন, আদালতের নির্দেশে মরিয়ম বিবিকে উদ্ধার করতে এসেছেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর ওই বাসা থেকে মরিয়ম বিবিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।

উদ্ধারের পর গতকাল ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মরিয়ম বেগম সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করা হতো। ঘর মোছাসহ বাড়ির সব কাজ তাঁকে করতে হতো। ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবদুল কাদেরের বাসায় গিয়ে তাঁর তিন মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়। বড় (১৪) ও মেজ (১৩) মেয়ে নবম শ্রেণি পড়ে। আরেক মেয়ে (১১) ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় মেয়ে জানায়, তার বাবা, মা ও ছোট বোন সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে বাসায় তারা তিন বোন। বড় মেয়ে দাবি করে, ‘মরিয়ম বিবি তাঁর ছেলের কাছে যেতে চাইতেন না। তিনি আমাদের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করতেন। তাঁর ছেলে মাঝেমধ্যে বাসায় এসে মায়ের সঙ্গে দেখা করে যেতেন। মরিয়ম বিবিকে আটকে রাখা কিংবা নির্যাতন করার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

Advertisement

গনি ভবনে প্রহরী হিসেবে কাজ করেন শহরের কমলাপুর মহল্লার বাসিন্দা শেখ লোকমান (৬২)। তিনি বলেন, মরিয়ম বিবি দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনতে কিংবা ময়লা ফেলতে বাড়ির বাইরে যেতেন। তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে—এ রকম কথা তিনি কখনো শোনেননি। তবে তাঁর ছেলে মাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।