দুই জঙ্গির জামিন নিয়ে তোলপাড়

SHARE

bg-hijbut-taherir20160722100454চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি তালিকার শীর্ষে আছে নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের বিভাগীয় সমন্বয়ক শেখ ওমর শরীফ আল মারুফ রাসেল (৩৬)। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি ছেড়ে হিযবুত তাহরীরে যোগ দেয়া এই জঙ্গি গ্রেফতারের তিনদিনের মাথায় জামিন পেয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছে। একই সংগঠনের মাঠ পর্যায়ের সক্রিয় সংগঠক হাবিবুল নবী আশিকুর রহমান প্রকাশ রানা (২৩)। গ্রেফতারের দুইদিনের মাথায় জামিন পেয়ে বেরিয়ে গেছে রানাও।

চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে এভাবে তালিকাভুক্ত ১৪ জন জঙ্গি জামিনে মুক্তি পেয়েছে। এদের মধ্যে শেখ ওমর শরীফ এবং হাবিবুল নবীর মতো শীর্ষ জঙ্গির জামিনে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার মধ্যে কিভাবে দুই জঙ্গি জামিন পেল, তা নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের একটি আদালতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আত্মসমর্পণ করেন ফেনীর সাবেক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ ওমর শরীফ। চলতি বছরের ২৬ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি জামিনে মুক্তি পান। জেলগেইট থেকে তাকে আবারও গ্রেফতার করে কোতয়ালি থানা পুলিশ। সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে ২৭ মে আদালতে চালান দেয়া হয়। ৩০ মে তার জামিন মঞ্জুর করেন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নাজমুল আলম। ওইদিনই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

২০১৪ সালের নভেম্বরে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে হিযবুত তাহরীরের প্রচারপত্র বিলির সময় কোতয়ালি থানা পুলিশের হাতে আটক হয় হাবিবুল নবী। চলতি বছরের ১৩ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয় হাবিবুল। কারাফটক থেকে আটকের পর ১৪ মে তাকে সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আবারও আদালতে চালান দেয় কোতয়ালি থানা পুলিশ। ১৬ মে হাবিবুল নবী চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নওরীন আক্তার কাঁকনের আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে যান।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, শেখ ওমর শরীফ এবং হাবিবুল নবীকে কারাফটক থেকে আটকের পর ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল-অবরোধ চলাকালে নাশকতার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয় কোতয়ালি থানা পুলিশ।

ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর কোতয়ালি থানার কাজির দেউড়িতে এস আলম ভবনের সামনে সময় টেলিভিশনের মাইক্রোবাসে হামলা চালায় হরতাল সমর্থক কয়েকজন তরুণ-যুবক। এসময় তারা মাইক্রোবাস ভাংচুরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। ওই ঘটনায় কোতয়ালি থানায় দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৮৬, ৩৫৩, ৩৩২, ৩০৭, ৪২৭/৩৪ এবং তৎসহ সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন-১৩) এর ৬ (২)/১২ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।

মামলার নথিতে সংযুক্ত আসামি চালানের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এস আলম টাওয়ারের সামনে নাশকতার ঘটনাটি ১৮ দলীয় জোটের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা ঘটিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ ওমর শরীফ এবং হাবিবুল নবী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে মর্মে উল্লেখ করে জামিনের বিরোধিতা করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী মাসুদ ইবনে আনোয়ার।

কিন্তু দুই জঙ্গির জামিন পাওয়া নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মো.ফখরুদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আসামি চালানের প্রতিবেদনের কোথাও তো দুজন (ওমর শরীফ ও হাবিবুল নবী) হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য একথা লেখা নেই। তারা যদি সত্যিই জঙ্গি হয়ে থাকে তাহলে তাদের অবস্থান এবং সুনির্দিষ্ট পরিচয় আসামি চালানের প্রতিবেদনে লেখা উচিৎ ছিল। সেক্ষেত্রে আদালত জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে অপরাধী এবং অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় নিত।

‘তবে মামলার অভিযোগপত্র এখনও দাখিল হয়নি। তার মানে মামলাটি এখনও তদন্তাধীন আছে। এক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে নিশ্চয় সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাখা আছে। ’ বলেন পিপি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, মামলাটি এখনও তদন্তের পর্যায়ে আছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা যে তথ্য পেয়েছেন তার ভিত্তিতেই আসামিকে আদালতে চালান দিয়েছেন। দুজন (ওমর শরীফ ও হাবিবুল নবী) ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য তিনি নিশ্চয় পেয়েছেন আর তাদের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী মাসুদ ইবনে আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, আমার কাছে প্রাথমিকভাবে তথ্য ছিল শেখ ওমর শরীফ এবং হাবিবুল নবী জামায়াত-শিবিরের কর্মী হিসেবে নাশকতায় অংশ নিয়েছিল। এজন্য তাদের আমি ১৮ দলের কর্মী হিসেবেই আদালতে চালান দিয়েছি। তারা যে হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যুক্ত বিষয়টি আমি জানতাম না।

তবে স্পর্শকাতর মামলার আসামি, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আদালতে চালান দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবেদন লেখার সময় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পুলিশকে পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহেদ বীরু। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে আসামির বিষয় এমনভাবে উল্লেখ করতে হবে যাতে আদালতের কাছ থেকে কোন বেনিফিট পাওয়ার সুযোগ না থাকে।