বরগুনায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ

SHARE

borguna-paniবরগুনা: বরগুনা উপকূলীয় অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সুবিধাভোগীদের অর্থ আত্মসাৎ ও  ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্মাণ কাজে নিম্নমানের দ্রব্য সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সুত্র জানায়, ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচার প্রোডাক্টিভিটি প্রজেক্টের আওতায় বরগুনা ও পটুয়াখালীতে ভুক্তভোগী অধিবাসীদের সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে ‘রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ট্যাঙ্ক’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়।

যা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি)। এ প্রকল্পের অধীনে ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনায় ৩২৬টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ট্যাঙ্ক স্থাপন করার কথা রয়েছে।

স্থানীয় সুবিধাভোগী খাদিজা, খুশি, মিনারা, মরিয়মসহ অনেকেই বাংলানিউজকে জানান, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ট্যাঙ্ক স্থাপনের জন্য নির্মিত ঘরের কাজ হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের। তালিকায় নাম না থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে আঁতাত করে ইচ্ছে মতো সুবিধাভোগী নির্বাচনের মাধ্যমে নির্মাণ করা হচ্ছে ট্যাঙ্ক। যারা ট্যাঙ্ক পাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে ট্যাঙ্ক প্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে।

আবার তালিকায় নাম থাকলেও যারা টাকা দিতে পারেনি তাদের ট্যাঙ্ক চলে যাচ্ছে প্রভাব ও অর্থশালীদের ঘরে। যাদের বাড়িতে টিউবওয়েল অথবা পুকুর আছে তাদের ট্যাঙ্ক দেওয়া যাবে না উল্লেখ থাকলেও টাকার বিনিময়ে টিউবওয়েল কিংবা পুকুর আছে এমন একাধিক বাড়িতেও দেওয়া হচ্ছে এটি।

প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কে কে এন্টারপ্রাইজ ও ব্রাদার্স ট্রেডিং নামমাত্র কাজ করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। প্রাক্কলন অনুযায়ী ঘরের দৈর্ঘ্য ২০ ফুট ৬ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হওয়ার কথা থাকলে বাস্তবে রয়েছে দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট ৬ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১৩ ফুট ৬ ইঞ্চি রয়েছে। পিলার তৈরিতে যে ইট ও রড ব্যবহার করা হয়েছে তা এতই নিম্নমানের যে পুঁতার সময় অধিকাংশ পিলারে ফাটল ধরেছে।
পিলার বসানোর পর সিমেন্ট দিয়ে ফাটল ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কার্যাদেশ অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হলেও অনেক জায়গায় কাজ শুরুই করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

একাধিক এলাকাবাসী বাংলানিউজকে জানান, বিএডিসি বরগুনার সহকারী প্রকৌশলী জগন্নাথ বিশ্বাসের যোগসাজসে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ইউনিয়ন সিএফ এর মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নেওয়া হয়। আর এ টাকা ভাগ বাটোয়ারা হয় মাঠ পর্যায়ের সিএফ থেকে শুরু করে বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী পর্যন্ত। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজ করলেও টাকার জন্য সব কিছু ধামাচাপা দিচ্ছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি) বরগুনার সহকারী প্রকৌশলী জগন্নাথ বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, মাঠ পর্যায়ে কেউ দুর্নীতি করে থাকলে সে দায়ভার আমার নয়। আমি কোনো ধরনের টাকা গ্রহণের সঙ্গে জড়িত নই। তবে, আমার নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ টাকা গ্রহণ করে থাকে সেটার দায়ভার আমি নেবো না। এখানকার কাজের বিষয়ে সবকিছু আইএপিপি জানে আমরা কিছু জানি না।

কাজের নিম্নমানের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বরগুনা ও পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া উত্তেজিত হয়ে যান।

রেগে গিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আপনি কোনো তথ্য জানতে চাইলেই আপনাকে দিতে হবে কেন? কে আপনি? চেয়ারম্যান স্যারের অনুমতি ছাড়া কোনো কথা বলা যাবে না। আপনি সরাসরি অফিসে আসুন তারপর দেখি।