জঙ্গি হামলার পর হেফাজতকে ফোন করেছিলেন আইজিপি

SHARE

2016_07_10_00_04_01_9mSkWRmSHeUrRdXxblHUJABTDsCCtT_originalঢাকা : গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্টুরেন্টে এবং ঈদ জামাতের সময় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের মাসে জঙ্গি হামলার পরই হেফাজত ইসলামকে ফোন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক আইজিপি একেএম শহীদুল হক। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইজিপি নিজেই।

শনিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে সুধী সমাবেশে আইজিপি এ কথা জানান। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় আলেম ওলামাদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেবকে (হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব) ফোন করলাম। উনাকে বললাম গুলশানে এতো বড় ঘটনা ঘটলো, কিশোরগঞ্জে ঈদগাহর কাছে হামলা হলো; আপনারা নীরব কেনো? এই জঙ্গিরা যে কাজ করছে এটা কি ইসলামের পক্ষে? জঙ্গিবাদকে কি ইসলাম সাপোর্ট করে?’

তিনি বলেন, ‘ইসলাম শেষ করে ফেললো বলে ঢালাও অভিযোগ করতে পারেন সরকরের বিরুদ্ধে। ইসলাম রক্ষার, ইসলাম হেফাজত করার দায়িত্ব নিয়েছেন (হেফাজতে ইসলাম)। কিন্তু এখন কোনো কথা বলছেন না। যদি আপনারা নীরব থাকেন, মৌন থাকেন, তাহলে প্রমাণ হবে আপনারা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করেন।’

স্পেশাল ধর্মীয় নেতারাই তরুণদের মগজ ধোলাই করছেন উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘জঙ্গিরা উত্তরবঙ্গে, কুষ্টিয়া, পাবনাসহ সারাদেশে যতো ঘটনা ঘটিয়েছে, তার মধ্যে প্রায় নব্বই ভাগ ঘটনাই উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে, অস্ত্র, বোমা উদ্ধার হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পেয়েছি, তাতে সুকৌশলে ওইসব তরুণের মগজ ধোলাই করা হয়।’

আইজিপি শহিদুল হক ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘প্রথমে তরুণ-যুবকদের টার্গেট করা হয়। এরপর তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে পরবর্তীতে কোরআনের আয়াতসহ কিছু বই-পুস্তক দেয়া হয়। সবশেষে স্পেশাল ধর্মীয় নেতাদের কাছে রেখে তাদের মোটিভেট করা হয়। নেতারা বুঝায় যে, এই পথটাই একমাত্র পথ, যেখানে সহজেই বেহেশতে যাওয়া যায়। এইভাবেই মগজ ধোলাই করে তরুণদের জঙ্গি পথে ধাবিত করা হচ্ছে।’

জেলা পুলিশের আয়োজনে সুধী সমাবেশে অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘পরিবারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সন্তান কোথায় যায়, কী করে, আচার-আচরণে কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ছে কি না, সব বিষয়ে নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশের সহযোগিতা নিন। না হয়, দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব হবে না।’

ধর্মের নামে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে, তাদের কোনো ছাড় নেই বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আইজিপি বলেন, ‘এরা ইসলামের শত্রু, মানবতার শত্রু।’

এর আগে শোলাকিয়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘গুলশানের হামলাকারীদের সঙ্গে শোলাকিয়ার জঙ্গিদের যোগসাজস রয়েছে। জঙ্গিরা সবাই জেএমবির সদস্য। হামলাকারীদের সঙ্গে আইএস’র কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।’

যদিও গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলায় ২০ জন জিম্মিসহ দুই পুলিশ কমকর্তা নিহত হন। নিহত হয় হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি। এর পরপরই জঙ্গিদেরকে নিজেদের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে তাদের ছবিও প্রকাশ করে।

এর এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই গত ৭ জুলাই ঈদের জামাতের আগে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের কাছে আজিমুদ্দিন স্কুলের পাশে সন্ত্রাসী হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী ও এক হামলাকারী নিহত হয়।