১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্সের ২২ শতাংশই আসে হুণ্ডিতে

SHARE

RM20160616201510ঢাকা: বর্তমানে প্রায় ৮৬ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে কর্মরত আছেন। এছাড়া দেশের জনশক্তিতে প্রতি বছর অতিরিক্ত ২ লাখ যুবশক্তি যোগ হচ্ছে। এর উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে গিয়ে প্রচুর রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। এর পরিমাণ প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। মোট প্রবাস আয়ের ২২ শতাংশ অর্থই দেশে প্রবেশ করে হুণ্ডির মাধ্যমে।

 

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আয়োজিত  ‘প্রবাস আয়ের বিনিয়োগ সম্পর্কিত জরিপ-২০১৬’ অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) এসব তথ্য জানানো হয়।

জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ প্রবাস আয় বা রেমিটেন্স আসছে, তার ২২ শতাংশ অর্থ হুণ্ডিতে প্রবেশ করে। ৭৮ শতাংশ আসে বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে। তবে যে অর্থ আসে তার ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বিনিয়োগে যাচ্ছে। আর বিদেশে যাওয়ার জন্য যে ঋণ নেওয়া হয়েছে তাতে ব্যয় হচ্ছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ অর্থ।

জরিপে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে প্রবাস আয়ের ৯৬ শতাংশ আসে নগদে এবং ৪ শতাংশ আসে দ্রব্যমূল্য হিসেবে। বিকাশের মাধ্যমে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ আসে। পাঠানো টাকার ৪৪ দশমিক ১৮ শতাংশ টাকা বাবা-মা এবং ৪১ দশমিক ৭৮ শতাংশ পরিবারের স্বামী বা স্ত্রী গ্রহণ করেন। ৪০ দশমিক ৭১ শতাংশ খানা প্রবাস আয়ের টাকা সঞ্চয় করে।

সারা বিশ্বে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ (রেমিটেন্স) দেশের মূল ধারায় বিনিয়োগ করতে হবে। তা হলে দেশের অর্থনীতি পাল্টে যাবে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু এ অর্থকে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরও বলেন, প্রবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পাঠানো অর্থ ভালো ভালো প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে।

বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানিতে যে সমস্যা ছিল তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি দাবি করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, খুব শিগগিরই আগের মতো বাংলদেশ থেকে সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানি করা যাবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি সফরে গিয়ে দেশটির বাদশাহের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করেছেন।

মন্ত্রী জানান, কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসর্পোট ব্যবহার করে সৌদি আরবে গিয়ে খারাপ কাজ করে বাংলাদেশের দুর্নাম করেছেন। এ কারণে সৌদি সরকার বাংলাদেশের ওপর  অসন্তুষ্ট ছিল।

মুস্তফা কামাল বলেন, সারা বিশ্বের প্রবাসীরা ৫৮৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেন। এর মধ্যে ১৫ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশিরা আয় করছেন। ভবিষ্যতে আয় আরও বাড়বে। কারণ, বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স সঠিক পথে বিনিয়োগ করলে  দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে।

বিবিএসের প্রতিবেদনে উঠে আসে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের বিনিয়োগসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের চিত্রও।

জরিপে দেখা গেছে, প্রবাস আয় থেকে গড় বিনিয়োগের পরিমাণ ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ (৯৮ হাজার ৪৬৯ টাকা)। এর পরের অবস্থানে রয়েছে বরিশাল (৭৫ হাজার ৭১৩ টাকা), সিলেট (৭৫ হাজার ২৮৮ টাকা) এবং চট্টগ্রাম (৭৪ হাজার ৪০১ টাকা) বিভাগ। ঢাকা বিভাগ বেশি প্রবাস আয় গ্রহণ করে। ঢাকার পরেই সিলেট বিভাগের অবস্থান। তবে প্রবাস আয়ে সর্বনিম্ন স্থানে  খুলনা বিভাগের।

জরিপে বিবিএস জানায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ বিনিয়োগ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ঘর-বাড়ি তৈরি করেন। চট্টগ্রামের প্রবাস আয় করে,  এমন পরিবারগুলো তাদের রেমিটেন্সের প্রায় ৮২ দশমিক ৮২ শতাংশ  বাড়ি নির্মাণে খরচ করে। এ খাতে সবচেয়ে কম খরচ করে ঢাকা বিভাগের রেমিটেন্স পাওয়া পরিবারগুলো। তারা উৎপাদনশীল খাতে অন্যদের তুলনায় বেশি বিনিয়োগ করে। বরিশালের  সাড়ে ৭৮ শতাংশ, খুলনার ৮০ শতাংশ, রাজশাহীর ৭৩ শতাংশ, রংপুরের ৭১ শতাংশ সিলেটের ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগ মূলত ঘর-বাড়ি নির্মাণে।

বিবিএস বলছে, বিনিয়োগের ৭৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ যাচ্ছে ঘর-বাড়ি নির্মাণ খাতে। জমি কেনায় যাচ্ছে ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ টাকা। বেশিরভাগ প্রবাসী বাংলাদেশি কমবয়সী।

জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বিবিএসের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক প্রমুখ।