ঢাকা: আগামী ২৬ জুন মেট্রোরেল (এমআরটি) ও বাস ৠাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে এ তথ্য জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর যানজট নিরসনে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) অংশ হিসেবে পাঁচটি রুটে মেট্রোরেল এবং গাজীপুর টার্মিনাল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি নির্মাণ করা হবে।
পাঁচটি রুটের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল-৬ (এমআরটি-৬) রুটের নির্মাণ কাজ প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর শুরু হতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে মেট্রোরেল প্রকল্পটি নতুন গতি পাবে এবং নির্দিষ্ট সিডিউল অনুযায়ী চলমান কাজ এগিয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের।
২০২০ সালে এ রুটের নির্মাণকাজ শেষ হবে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল-৬ রুটের নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্পের সহায়তা হিসেবে জাইকা দেবে প্রায় ১৬ হাজার ৬’শ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ এলিভেটেড রুটের মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন থাকবে। প্রতি ঘন্টায় উভয় দিক থেকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মেট্রোরেল রুট-৬ এর পাশাপাশি আরও দু’টি রুট নির্মাণের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে আমরা শুরু করেছি। এর মধ্যে মেট্রোরেল রুট-১ (এমআরটি-১) হচ্ছে গাজীপুর থেকে ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রথম পর্যায়ে এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর এবং খিলক্ষেত হতে পূর্বাচল পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটারের কাজ করা হবে। এর মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার হবে আন্ডারগ্রাউন্ড।
তিনি বলেন, মহানগরীর পূর্ব-পশ্চিমে সংযোগ বাড়াতে চূড়ান্ত করা হয়েছে মেট্রোরেল-৫ (এমআরটি-৫) এর রুট। এ রুটটি নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে গাবতলী পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাটারা থেকে গাবতলী-হেমায়েতপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার কাজ করা হবে। এর মধ্যে ৬ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড। ইতোমধ্যে জাইকা মেট্রোরেল রুট-১ ও রুট-৫ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে।
মন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল-৬ এর রুট উত্তরা ৩য় পর্যায় থেকে শুরু হয়ে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ে ২০১৯ সালের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হবে। প্রকল্পের ৮টি প্যাকেজের মধ্যে ৬টির দরপত্র আহ্বান কাজ শেষ হয়েছে। ১টি প্যাকেজের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
এদিকে গাজীপুরের টঙ্গী ও ঢাকার উত্তরার সঙ্গে ঢাকা মহানগরীর যাতায়াত সহজতর করতে সরকার বাস ৠাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর ফলে কম সময়ে বেশি যাত্রী দ্রুত পারাপার, সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও আরামদায়ক সেবা নিশ্চিত করে রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করাও অনেকাংশে সহজ হবে।
বিআরটি হচ্ছে সড়কের নির্দিষ্ট লেনে দ্রুতগতির বাস চলাচল অবকাঠামো স্থাপন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সংরক্ষিত আলাদা লেনের মাধ্যমে উভয় দিকে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার যাত্রী পারাপার করা যাবে। প্রতি তিন মিনিট পরপর স্টেশন থেকে বাস ছাড়বে।
এ প্রকল্প হচ্ছে গাজীপুর টার্মিনাল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত। ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি রুটে থাকবে ২৫টি স্টেশন। নির্মাণ করা হবে ৬টি ফ্লাইওভার। উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার থাকবে এলিভেটেড বিআরটি লেন। ১৬ কিলোমিটার থাকবে সমতল বা এট গ্রেড। ১৮ মিটার দীর্ঘ ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে এ পথে। বাসগুলোয় ভাড়া আদায়ে থাকবে ইলেক্ট্রনিক স্মার্টকার্ড।
এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা পাওয়া যাবে ১ হাজার ৬ শ’ ৫১ কোটি টাকা। সরকারের পাশাপাশি প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসী উন্নয়ন সংস্থা, গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি ফান্ড অর্থায়ন করছে।
আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বিআরটি চালু হবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক মো. কায়কোবাদ হোসেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ, বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক একরামুল্লাহসহ মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।