রোজাদারদের জন্য ভিন্ন ধর্মের দিপালীর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),নাটোর প্রতিনিধি,শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪  :হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও দিপালী রানী পুরো রমজান মাসজুড়ে রোজাদারদের জন্য কম দামে ইফতারি বিক্রি করেন। জীবিকার তাগিদে রাস্তার পাশে ছোট্র দোকান করে বিক্রি করছেন নানান পদের ইফতারি। তবে রমজান মাসে যেখানে সবাই খাদ্যের দাম বাড়িয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন, সেখানে তুলনামূলকভাবে কম দামে ইফতারি বিক্রি করছেন দিপালী দিদি।

নাটোর শহরের কানাইখালী এলাকায় স্বামী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার বসবাস। স্বামী মিলন দাস একজন রিকশাচালক। স্বামীর আয়ে চলে পুরো সংসার। তাই সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা ফেরাতে ইফতারি বিক্রি শুরু করেন তিনি।

প্রতিদিন বিকেল হলেই দিপালী ইফতারি নিয়ে শহরের কানাইখালী মাঠের রাস্তার পাশে বসে তা বিক্রি করেন। গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য ইফতারি তৈরি করে চলেছেন তিনি। তবে বছরের অন্য সময়ে পিঠা ও রুটি বিক্রি করেন। মাটির চুলার কড়াইয়ের গরম তেলে বেগুনি, পিয়াজু, চপ ও পাপড় ভাজেন তিনি। এ সময় শিশু থেকে বয়স্করা দাঁড়িয়ে থাকেন তার মজাদার ইফতারি নিতে।

দিপালীর দোকানের প্রত্যকটি খাদ্যপণ্যই বেশ সুস্বাদু। এছাড়া সবার চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করেন তিনি। তার দোকানের ভাজা পিঁয়াজু, বেগুনি, চপের আকার অন্য সবার চেয়ে দ্বিগুন বড়। প্রতি পিস এসব ইফতারির আইটেম ৫-১০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।

বাজারের বড় বড় ইফতারির দোকানগুলোতে যেখানে একশ’ গ্রাম পিঁয়াজু ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হয়, সেখানে দিপালী দিদি তা বিক্রি করেন ২০ টাকায়। ফলে ক্রেতাদের চাপে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তার হাতের বানানো ইফতারি একবার খেলে দ্বিতীয়বার আসতেই হবে।

দিপালী দিদি’র মেয়ে দ্বীপ্তি বলেন, প্রতি বছর রমজান মাসে মা ইফতারি বিক্রি শুরু করেন। মায়ের একার পক্ষে সব কাজ করা কঠিন হওয়ায় আমি সহযোগিতা করি। মা কম লাভে সব ধরনের ইফতার সামগ্রী বিক্রি করেন। বাজারের সব দোকান থেকে আমাদের ইফতারির মান ভালো। ফলে অনেক দূরের রোজাদার মানুষ বাড়ি ফেরার পথে ইফতারি কিনে নিয়ে যায়। অনেকে আবার অগ্রিম অর্ডার দিয়ে যান।

দিপালী দিদি বলেন, আমি ৪-৫ বছর ধরে এখানে রমজান মাসে ইফতারি তৈরি করে বিক্রি করি। আমার দোকান থেকে মুসলমান, হিন্দু সবাই ইফতারি কিনতে আসে। সেজন্য আমার অনেক ভালো লাগে। অন্য ধর্মে মানুষদেরও আমি শ্রদ্ধা করি, তাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আমার দোকানের কোনো খাদ্যপণ্যের দাম বাড়াই না। প্রতিদিন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকার ইফতারি বিক্রি হয়। বিক্রির সামান্য কিছু আয় দিয়েই আমার সংসার চলে।