বিয়ের ফাঁদ, টার্গেট বয়স্ক বিত্তশালী পাত্র

SHARE

অভিযুক্ত শামীমা রহমান খান সোনিয়া

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি, মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট  ২০২৩ : সুন্দরী, বিধবা ও পরহেজগার। পাত্রী কানাডার নাগরিক। প্রতিষ্ঠিত, স্বচ্ছল, বয়স্ক পাত্র চাই। পত্রিকায় এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে পাততেন বিয়ের ফাঁদ। আর সেই ফাঁদের নারী হোতা শামীমা রহমান খান সোনিয়া (৩০)। কিন্তু তিনি থাকতেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

Advertisement

বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী পাত্র কিংবা পাত্রপক্ষের কেউ যোগাযোগ করলে ফোন রিসিভ করতেন তার পিএস পরিচয়ধারী মো. তুষার। পাত্র পক্ষকে তিনি জানিয়ে দিতেন- জীবন বৃত্তান্ত ই-মেইলে পাঠান। ম্যাডাম সরাসরি কারও ফোন রিসিভ করেন না। ম্যাডামের পছন্দ হলে যোগাযোগ করা হবে।

 

ভিআইপি স্টাইল। সমাজের উঁচু স্তরের লোক বোঝাতে নিতেন এমন কৌশল। এতে পাত্রপক্ষের আগ্রহ ও বিশ্বাস বেড়ে যেত। আর তারা সহজেই পড়তেন প্রতারকের খপ্পরে।

 

দীর্ঘদিন বিয়ের নামে প্রতারণা করে আসছে চক্রটি। হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। অবশেষে রাজধানীর উত্তরার এক ব্যবসায়ীর করা মমালায় প্রতারক চক্রের নারী হোতা সোনিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ খান। শেষ বয়সে কানাডা যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ওই চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন তিনি। বিয়ে করে কানাডায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ১৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা নেয় সোনিয়া।

 

কথা দিয়ে কথা না রাখা, সন্দেহজনক আচরণ দেখে বুঝছেন তিনি প্রতারণার শিকার। তখন সোনিয়ার বিরুদ্ধে উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন ওই ব্যবসায়ী। এরপর রোববার উত্তরা থেকে সোনিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

 

মামলার এজাহারে জানা যায়, ২০০৫ সালে তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একাকি জীবন-যাপন করছিলেন প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ খান। ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর দেশের একটি শীর্ষ দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেখে সোনিয়ার নম্বরে যোগাযোগ করেন। একজন ফোন রিসিভ করে জীবন-বৃত্তান্ত পাঠানোর জন্য ই-মেইল নম্বর দেয়।

Advertisement

জীবন-বৃত্তান্ত পাঠানোর কয়েকদিন পর থেকে পাত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। কিছুদিন পর তারা হোটেল ওয়েস্টিনে সাক্ষাৎ করেন। তখন পাত্রী জানান- কানাডার অটোয়ায় বসবাস করেন। বিয়ের জন্য ঢাকায় এসেছেন। বারিধারা ডিওএইচএসে এক চাচার বাসায় অবস্থান করছেন।

 

কথাবার্তা, দেখাশোনার পর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। ওই দিনই কাবিনের ২ লাখ টাকা নগদ নিয়ে নেয় সোনিয়া। প্রথম স্ত্রীর ব্যবহৃত চেইন ও কানের দুলও দেন সোনিয়াকে। এ ছাড়া নতুন আরও কিছু গহনা ও কাপড়-চোপড় কিনে তাকে উপহার দেন।

 

এজহারে আরও জানা যায়, এরপর শারীরিক সমস্যার কথা বলে ব্যবসায়ীর বাসায় না এসে নিজের বাসায় থাকেন। শুরু হয় প্রতারণার নতুন অধ্যায়। কানাডার টিকিট, ভিসা প্রসেসিংসহ আনুসাঙ্গিক খরচের কথা বলে সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন সোনিয়া। এরপর ২৭ মে থেকে মোবাইল বন্ধ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

 

এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, সোনিয়ার কানাডার নাগরিকত্ব নেই। জালিয়াতি করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেছেন। বয়স্ক বিত্তশালী পাত্র পেলেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। ফোর স্টার, ফাইভ স্টার হোটেলে বিয়ের কথাবার্তা চালাতেন। এরপর ভিসা, কাবিন ও বিয়ের কেনাকাটার কথা বলে নানা কৌশলে লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন।

 

তিনি আরও বলেন, যখন বুঝতেন আর টাকা আদায় করা সম্ভব নয়, তখন মোবাইল বন্ধ রেখে গা-ঢাকা দিতেন। আবার নতুন সিম কার্ড নিয়ে নতুনভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে অন্য কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা করতেন।

 

পুলিশের উত্তরা বিভাগের এডিসি বদরুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, বয়স্ক এবং বিত্তশালী পুরুষদের শেষ জীবনের সঞ্চয় টার্গেট ছিল সোনিয়ার। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা সোনিয়া মিরপুরে মায়ের সঙ্গে বসবাস করেন। স্বামীর সঙ্গে তার অনেক আগে বিচ্ছেদ হয়েছে। ওই সংসারে এক সন্তান রয়েছে।

Advertisement