অনলাইন জুয়ায় বুঁদ রিকশাচালক-দিনমজুররাও (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০২৩ : ঢাকায় সাত বছর ধরে রিকশা চালান সিদ্দিক মিয়া (৩৪)। ৭ মে রাত ১০টার দিকে রাজধানীর মগবাজারে চায়ের দোকানে বসেছিলেন তিনি। এক হাতে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, অন্য হাতে চায়ের কাপ। চোখ টেলিভিশনের পর্দায়। সিদ্দিকের মতো আরও কয়েক যুবক একই ঢঙে বসে চা খাচ্ছিলেন। তাদের হাতেও মোবাইল। টেলিভিশনে তখন চলছিল আইপিএলের ম্যাচ। গুজরাট টাইটানস বনাম লখনৌ সুপার জায়ান্টসের ম্যাচ ঘিরে অনলাইন জুয়ায় বুঁদ তারা। রিকশাচালক সিদ্দিক বাজি ধরেন ‘মেলবেট’ নামের অ্যাপে। লখনৌ সুপার জায়ান্টসের পক্ষে সাড়ে চার হাজার টাকা বাজি ধরেন রিকশাচালক সিদ্দিক। খেলার মাঝপথে সিদ্দিকের কপালে দেখা যায় চিন্তার ভাঁজ। গুজরাটের দেওয়া ২২৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুটা দারুণ হলেও দ্রুতই পথ হারায় লখনৌ। ম্যাচে ৫৬ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যায় লখনৌ।

Advertisement

খেলা শেষে সিদ্দিক মিয়া জাগো নিউজকে জানান, মেলবেট নামে অনলাইন জুয়ার অ্যাপে প্রায় প্রতিদিন বাজি ধরেন তিনি। মাঝে মাঝে জেতেন। লখনৌ সুপার জায়ান্টস জিতলে ওইদিনও সাড়ে চার হাজার টাকা বাজি ধরে তিনি পেতেন ৫৬ হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ লখনৌ জিতলে মেলবেট থেকে তাকে বাজি ধরা টাকার ১২ দশমিক ৬ গুণ বেশি টাকা দেওয়া হতো। তবে লখনৌ হারায় সিদ্দিককে কোনো লাভ দেবে না মেলবেট। উল্টো বাজির টাকাও নিয়ে নেওয়া হয়।

মেলবেট অ্যাপে টাকা ঢোকানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক ছোট ভাইয়ের কাছে বললে সে টাকা ঢুকিয়ে দেয়। অ্যাপে ৮৫ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এরপর ইচ্ছামতো টাকা ঢুকানো যায়।’

এ ঘটনার পরদিন মগবাজার বস্তিতে রিকশাচালক সিদ্দিক মিয়ার বাসায় যান জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক। কথা হয় তার স্ত্রী সাবিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, আগে রিকশা চালিয়ে যা আয় হতো, তা থেকে খরচ করার পর সিদ্দিক টাকা এনে স্ত্রীর হাতে দিতেন। দেড় বছর ধরে আগের মতো টাকা এনে দেন না। আগে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা স্ত্রীর হাতে তুলে দিতেন সিদ্দিক। সেখানে দেড় বছর ধরে ১০০-২০০ টাকা দেন তিনি। টাকার কথা বললে স্ত্রীকে আজেবাজে কথা শোনান। মাঝে মধ্যে গায়েও হাত তোলেন।

রিকশাচালক সিদ্দিকের জুয়া খেলার কথা জানেন কি না, জানতে চাইলে সাবিনা বলেন, ‘কখনো শুনিনি জুয়া খেলার কথা। প্রায়ই ট্যাকা-পয়সা ধরা নিয়ে কার লগে যেন কথা কয়। ফুটবল-ক্রিকেট খেলার বিষয়েও আলাপ করতে শুনি।’

সিদ্দিক মিয়ার মতো ঢাকার অলিগলি কিংবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যে কেউ একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খেলতে পারে এ ধরনের জুয়া। যেকোনো বিশ্বকাপ, ফুটবল, সব ধরনের ফুটবল প্রিমিয়ার লীগ, আইপিএল, বিগ ব্যাশ লীগসহ আন্তর্জাতিক ওডিআই, টেস্ট ও টি২০ ম্যাচে জুয়া খেলা বেড়ে যায়। এক ধরনের কৌতূহল থেকে তরুণ প্রজন্ম আকৃষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে। ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ থেকে লাখ টাকার বিনিয়োগে শুরু করে লোভে পড়ে একপর্যায়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকেই। জুয়ার এসব সাইটের অধিকাংশ বিদেশ থেকে পরিচালিত হলেও বাংলাদেশের এজেন্টরা দায়িত্ব পালন করছে। জুয়ায় বিনিয়োগ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে।

মাঝে মাঝে অনলাইন জুয়ার এজেন্ট ও জুয়া পরিচালনাকারীদের ধরলেও একেবারে বন্ধ করা যাচ্ছে না অনলাইন জুয়া। যদিও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ২০১৯ ও ২০২২ সালে অনলাইনে জুয়া খেলার ৫০৭টি সাইট বন্ধ করে দেয়। তবুও বিকল্প পদ্ধতিতে চলছে অনলাইন জুয়া খেলা।

গ্রেফতার অনলাইন জুয়ার অ্যাপ ডেভেলপার/ফাইল ছবি

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডিজিটাল দুনিয়ায় সিল মেরে রাখার মতো এখনো কোনো পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। হাজার হাজার জুয়ার সাইট-অ্যাপ, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধ করেছি। তাতেও এটি নির্মূল করা অসম্ভব। অনলাইন জুয়া নির্মূল করার জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা। প্রযুক্তির পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি করে বন্ধ না করলে অনলাইন জুয়া নির্মূল করা যাবে না। যে নিঃস্ব হওয়ার জন্য জুয়া খেলবে, তাকে নিষেধ করে আপনি কী করবেন?

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, গাড়িচালক, চালকের সহকারী, রেস্টুরেন্টের খাবার পরিবেশক, দোকানদারসহ বিভিন্ন পেশায় জড়িত ও উঠতি বয়সী যুবকরা হরহামেশা জড়িয়ে পড়ছেন এ মরণনেশায়। সেলুন, রিকশা গ্যারেজ, চা-পান-সিগারেট কিংবা রেস্টুরেন্টে কান পাতলেই আইপিএল কিংবা ফুটবল প্রিমিয়ার লীগের জুয়ার কথা শোনা যায়। আইপিএল জুয়া এখন ওপেন সিক্রেট বিষয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে তিনভাবে জুয়া খেলা হচ্ছে। প্রথমত. একসঙ্গে কোনো দোকান, সেলুন, হোটেল বা ঘরে বসে জুয়া খেলে। এরা বাজির টাকা নগদ হাতে হাতে পরিশোধ করে। দ্বিতীয়ত. বাড়ি, অফিস বা অন্যত্র বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচিতদের সঙ্গে বাজি ধরা। তৃতীয়ত অ্যাপের মাধ্যমে। এরা টাকা লেনদেন করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। এ খেলায় সক্রিয় আছে দালালচক্রও। তারা জুয়াড়িদের পাশে বসে থাকবে, প্রয়োজনে টাকা ধার দেবে। বিনিময়ে পাচ্ছে লভ্যাংশও।

1xbet-এ প্রতিদিন জুয়া খেলেন বেসরকারি চাকরিজীবী জাহিদুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বনলেন, কৌতূহলবশত দুই বছর আগে 1xbet-এ অ্যাকাউন্ট খুলি। পরে বিকাশে টাকা জমা করে সরাসরি যে খেলা হয়, সেগুলোতে বাজি ধরতে শুরু করি। খেলতে খেলতে একবার এক লাখ ২০ হাজারের মতো লাভ হয়। পরে তা দিয়ে খেলতে গিয়ে সব টাকা চলে যায়। মাঝে বাজি ধরা বন্ধ করে দিলেও অন্যদের দেখে আবারও শুরু করেছি। এবার অল্প টাকায় খেলছি, অল্প লাভ হচ্ছে।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন কে লাভ করছে, আর কে লস খাচ্ছে তা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পিডিএফ তালিকা দেয় এজেন্টরা। এখানে টাকা খোয়া যাওয়ার কোনো ইস্যু নেই।

Advertisement

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, অনলাইন জুয়া খেলতে গিয়ে যে টাকার প্রয়োজন হয়, সেই টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনেকে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ কিংবা মা-বাবাকে না জানিয়ে কোনো মূল্যবান জিনিস বিক্রি করেন। আবার জুয়া খেলে যে টাকা আয় হয়, সেই টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়েও মনোমালিন্য কিংবা হামলা-হত্যার ঘটনাও রয়েছে।

তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করা কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে- অনলাইন জুয়া খেলার সাইট থেকে যে অর্থ আয় হয়, তা থেকে অনেক কর্মকর্তাও ভাগ পান। নিজেদের ভাগ-বাটোয়ারার স্বার্থে যে কারণে অনলাইন জুয়া একেবারে নিয়ন্ত্রণ কিংবা বন্ধ করছেন না তারা।

সমাজে অন্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় হিমশিম খাচ্ছি জানিয়ে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, এরপরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে পুঁজি করে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্র বাড়তে থাকে তবে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। সেই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করতে তখন বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে। অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপট আমাদের সমাজে নানা কেন্দ্রিক বহুমাত্রিক অপরাধের জন্ম দেবে। সেটি চলমান সমাজ ব্যবস্থায় আমাদের সম্পর্কের যে ধারা এ জায়গায় বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।

অনলাইন জুয়ায় বিকাশ-রকেট-নগদে সহজ লেনদেন!
লেনদেনের সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)। সবচেয়ে অবাক করার বিষয়- রাশিয়া থেকে পরিচালিত জুয়ার সাইট বেটউইনার (betwinner) ও 1xbet-সহ একাধিক সাইটে বাংলাদেশিদের লেনদেনের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় যুক্ত। ব্যাংকের মাধ্যমেও পেমেন্ট করার সুযোগ রয়েছে। এসব সাইটে ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, অনলাইন জুয়াড়িরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এ ধরনের লেনদেন করছেন। যে কারণে তাদের শনাক্ত করা বেশ কঠিন। তবে তদারকি ও সতর্কতা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জুয়াড়ি গ্রেফতার হলেও থামছে না ‘জুয়া’
অনলাইনে ভার্চুয়াল কারেন্সি কেনাবেচা করে জুয়া পরিচালনার অভিযোগে দুই ‘মাস্টার এজেন্ট’সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগে সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন ডিবিপ্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে অনলাইন জুয়া (বেটিং) সক্রিয়। চক্রটি গত এক বছরে ২০-৩০ কোটি জুয়ার টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তারা প্রাথমিক লেনদেন করতেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে অবৈধ জুয়ার সাইট পরিচালনা ও এতে সহায়তা করায় গত ১৭ এপ্রিল দুই যুবককে গ্রেফতার করে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর)। ডিবি জানায়, অনলাইন জুয়া খেলার সাইট থেকে ডোমেইন ও সার্ভার ক্রয় করে আগ্রহী ব্যক্তির কাছে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয় করতেন গ্রেফতাররা।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জাগো নিউজকে বলেন, আইপিএল, বিপিএল ও বিশ্বকাপের সময় অনলাইন জুয়ার লেনদেন বেড়ে যায়। এছাড়া ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ব্যবহার করে একাধিক চক্র বিভিন্ন সিক্রেট গ্রুপে জুয়ায় আসক্তদের যুক্ত করে। জুয়া পরিচালনাকারীরা বেকার যুবকদের অল্প সময়ে টাকা কামানোর লোভ দেখিয়ে তাদের সর্বস্ব লুটে নেন। অবৈধভাবে ই-ট্রানজেকশনের মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারও করে জুয়া পরিচালনাকারীরা। র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে সারাদেশ থেকে জুয়া খেলার সময় ও জুয়ার সঙ্গে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় এনেছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল ও গোয়েন্দা শাখা সার্বক্ষণিক নজরদারি করে। এরইমধ্যে বেশকিছু মাস্টারমাইন্ড পর্যায়ের জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে অনলাইন মনিটরিংয়ের মাধ্যমে। তাছাড়া ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও জুয়া খেলা অনুচিত।

জুয়ার সাইট বন্ধেও মিলছে না সমাধান
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নির্দেশে ২০১৯ সালে অনলাইনে জুয়া খেলার ১৭৬টি সাইট বন্ধ করা হয়। ২০২২ সালে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে দেশে অনলাইনে জুয়া খেলার প্রবণতা বাড়ছে জানিয়ে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

গত বছরের ১০ অক্টোবর ৩৩১টি অনলাইন জুয়ার সাইট বন্ধ করে বিটিআরসির ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল’। সেলটির নিয়মিত নজরদারির অংশ হিসেবে এসব অবৈধ সাইট বন্ধ করা হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সার্চ ইঞ্জিন ‘গুগল’কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনলাইন জুয়া বা বাজিসংক্রান্ত ১৫০টি গুগল অ্যাপ বন্ধের জন্য রিপোর্ট করা হয়। এরইমধ্যে গুগল কর্তৃপক্ষ প্লে-স্টোর থেকে ১৪টি অ্যাপ বন্ধ করেছে। বাকি অ্যাপ বন্ধের জন্য যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে জুয়া খেলার ওয়েবসাইট এবং গুগল অ্যাপের প্রচার ও অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ায় এ ধরনের ২৭টি ফেসবুক লিংক, ৬৯টি ইউটিউব লিংক বন্ধের জন্য রিপোর্ট করা হয়। এর মধ্যে ১৭টি ফেসবুক লিংক ও ১৭টি ইউটিউব লিংক বন্ধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট লিংক বন্ধের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

অনলাইন জুয়ায় যেভাবে কোটি কোটি টাকা পাচার
গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের পর বিদেশে পাচারকারী চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। ডিবি জানায়, অনলাইনে পিএসজি সাইট ও পিএসজি ফুটবল নামের একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করছিল চক্রটি।

সুপার অ্যাডমিন ফ্রান্স থেকে ওয়েবসাইট ও অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করেন। বিভিন্ন দেশে দেখভালের জন্য বেশকিছু ম্যানেজার নিয়োগ করা আছে। চক্রটি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার জন্য রেফারেলকারীকে আকর্ষণীয় বোনাস অফার করে। ৩০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে তিন হাজার ৬০০ টাকা, ৫০টির জন্য মাসে সাড়ে সাত হাজার, ১০০টির জন্য মাসে ১৮ হাজার টাকা। এভাবে ৮০০টি অ্যাকাউন্টের জন্য মাসে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের অফার করে। এক বছরে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে চক্রটি।

এছাড়া তিনদিনের জন্য বিনিয়োগে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, সাতদিনের জন্য বিনিয়োগে ২ দশমিক ৮ শতাংশ, ১৫ দিনের জন্য বিনিয়োগে ২ দশমিক ৯ শতাংশ, ২৮ দিনের জন্য বিনিয়োগে ৩ শতাংশ, ৪৫ দিনের জন্য বিনিয়োগে ৩ দশমিক ১ শতাংশ দৈনিক মুনাফার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। গ্রাহক বা ইউজার বেশি মুনাফায় আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগ করে।

Advertisement

অনলাইন জুয়া বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কবার্তা
অনলাইন জুয়া, বেটিং, ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন বিদ্যমান আইনে নিষিদ্ধ হলেও বিভিন্ন সংবাদপত্রে এর বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। লেনদেন করতে বিভিন্ন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি এমএফএস প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বৈঠকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়। বৈঠকে বিকাশ, রকেটসহ ১৩টি এমএফএস প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়।

অনলাইন জুয়ার প্রচারণার অভিযোগে ইউটিউবার হিরণ প্রত্যয়সহ তিনজন গ্রেফতার/ফাইল ছবি

বৈঠকে জানানো হয়, এ ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও অর্থ পরিশোধে বৈধ চ্যানেল ব্যবহার হচ্ছে। দেশে এমএফএসে সক্রিয় হিসাব পাঁচ কোটি ৫৫ লাখ। এজেন্ট রয়েছে ১৫ লাখ ২২ হাজার। বিপুলসংখ্যক হিসাবের কারণে কিছু অসাধু চক্র অনলাইন জুয়ার লেনদেনে এমএফএস ব্যবহার করলেও অনেক সময় ধরা যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে বিষয়টি ধরার পর অনেক অ্যাকাউন্ট এরইমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের অবৈধ লেনদেনে কোনো এমএফএস হিসাব ব্যবহারের বিষয়টি নজরে এলে তাৎক্ষণিক তা বন্ধ করতে হবে।

টিভিতে অনলাইন জুয়ার ‘রমরমা’ বিজ্ঞাপন
বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন বন্ধে বেসরকারি টিভি চ্যানেল টি-স্পোর্টসকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার ও ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী ইসমাতুল্লাহ লাকী তালুকদার। আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার বলেন, টি-স্পোর্টসে ‘ওয়ানএক্সব্যাটস্পোটিং ডটকম’-এর বিজ্ঞাপন ও লোগো প্রচার, প্রকাশ, সম্প্রচার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতেও টি-স্পোর্টসে সব ধরনের জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচার, প্রকাশ তথা সম্প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য তিনদিনের সময় দিয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

জুয়ার প্রচারণায় ইউটিউবাররাও
২৩ ফেব্রুয়ারি জুয়ার প্রচারণার অভিযোগে ইউটিউবার প্রত্যয় হিরণকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তার সঙ্গে দুই সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আন্তর্জাতিক জুয়ার সাইটের প্রচারণা করে ইউটিউব ভিডিও বানাতেন তারা। এজেন্টের মাধ্যমে তারা বিদেশি জুয়ার প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞাপনও চালাতেন। এ নিয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। এরপর তাদের গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি বলছে, প্রত্যয় হিরণ জুয়ার সাইট ওয়ানএক্স বেট, বাবুএইটিএইট, ক্রিকেক্সের প্রচারণা চালাতেন। এজন্য তিনি ভিডিওপ্রতি নিতেন এক লাখ ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও’র ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞাপনী সংলাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ। বিশেষ করে ইউটিউব-ফেসবুকের ভিডিওতে নতুন এ ধারার প্রচলন শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে জুয়ার বিজ্ঞাপনও প্রচার করছেন অনেকে। এরমধ্যে ‘আজাইরা লিমিটেড’ নামে একটা ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। যাদের সাবস্ক্রাইবার প্রায় সাড়ে চার মিলিয়ন।

বিশ্বকাপ ফুটবল সম্প্রচারকালে জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে রুল
বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলার সময় অনলাইন বেটিং প্ল্যাটফর্মে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। টেলিভিশন; বিশেষ করে খেলার চ্যানেল, নিউজ পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ দৃশ্যমান স্ক্রিনে খেলা অথবা খবরের ফাঁকে অবৈধ ডিজিটাল-অনলাইন বাজি বা জুয়ার বিজ্ঞাপন সম্প্রচার, প্রচার বন্ধ-অপসারণ প্রশ্নে রুল জারি করেন আদালত।

চার সপ্তাহের মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বিটিআরসির চেয়ারম্যান, রেসপন্স কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বেটিং কোম্পানির সঙ্গে জড়িয়ে ‘ফাঁসছেন’ ম্যাককালাম
আইপিএলের বেটিং কোম্পানির সঙ্গে জড়িয়ে বিপাকে পড়েছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও ইংল্যান্ড টেস্ট দলের প্রধান কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। নিউজিল্যান্ডের অভ্যন্তরে বিজ্ঞাপন বন্ধ হওয়ার পর এবার বিষয়টি ‘খতিয়ে’ দেখার কথা বলেছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। বিবৃতিতে ইসিবি জানিয়েছে, জুয়ার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ম্যাককালাম বোর্ডের দুর্নীতিবিরোধী আইনভঙ্গ করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তেমন কিছু ঘটলে ইংল্যান্ড দলের কোচের পদ থেকে সরে যেতে হতে পারে তাকে।

অনলাইন জুয়ায় জড়িত অভিযোগে গ্রেফতাররা/ফাইল ছবি

সাইপ্রাসে নিবন্ধিত কোম্পানি ২২বেট ইন্ডিয়ার সঙ্গে ম্যাককালামের চুক্তি হয় গত বছরের নভেম্বরে। এর ছয়মাস আগে তিনি ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের কোচের দায়িত্ব নেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে ২২বেট ইন্ডিয়ার বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে ম্যাককালামকে। এখানে নিজেকে তিনি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে উল্লেখ করেন। বিজ্ঞাপনটি নিয়ে নিউজিল্যান্ডে আপত্তি উঠলে গুগল কর্তৃপক্ষ দেশটি থেকে ইউটিউবের বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নেয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঘরে-বাইরে কিংবা দোকানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অনলাইনে জুয়া খেলা হচ্ছে। দিনমজুর থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী-চাকরিজীবীরাও জড়িয়ে পড়ছেন জুয়ার নেশায়। কেউ একবার এ পথে পা বাড়ালে সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন। তবে অনলাইন জুয়া নির্মূলে ডিএমপির একাধিক ইউনিট কাজ করছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করে এরইমধ্যে অনেককে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।

সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রেজাউল মাসুদ জাগো নিউজেক বলেন, অনলাইন জুয়া মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এই অনলাইন জুয়া। অনেক জুয়ার সাইটে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট নম্বর ব্যবহার করা হয়। টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে যদি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট নম্বর ব্যবহার না হয়, তাহলে অনেকাংশে অনলাইন জুয়া বন্ধ হয়ে যাবে। সীমান্তবর্তী জেলা ছাড়াও মেহেরপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও উত্তরবঙ্গের কিছু জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি অনলাইন জুয়া পরিচালনা করা হয়।

তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা জাগো নিউজকে বলেন, অনলাইন জুয়া বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল মনিটরিং ইউনিট আছে। তবে ওপেন সোর্স ইন্টিলিজেন্স টুলস নামের একটি টুলস তাদের কাছে না থাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংবাদ সংগ্রহ সাপেক্ষে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে। ওপেন সোর্স ইন্টিলিজেন্স টুলস দিয়ে অনলাইন জুয়াকে সঠিকভাবে মনিটর করতে হবে।

তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে গ্রেফতারের পর জামিনে বেরিয়ে এসেও তারা পুনরায় একই কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। অল্প টাকায় দ্রুত ধনী হওয়া যায় বলে জুয়া খেলা অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়েছে বাংলাদেশে। সেক্ষেত্রে আইনের দুর্বলতাও আছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী এম এম তানজিমুল হক বলেন, আইনের ৩ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিনমাস কারাদণ্ড অথবা ২০০ টাকা অর্থদণ্ড, ৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি একমাস কারাদণ্ড অথবা ১০০ টাকা অর্থদণ্ড এবং ১১ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি একমাস কারাদণ্ডসহ ৫০ টাকা অর্থদণ্ড করার বিধান রয়েছে, যা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জুয়াড়িরা জুয়া থেকে যে লাভ করে, তা শাস্তির সঙ্গে সমানুপাতিক নয়। জুয়াড়িরা জুয়া খেলে লাখ লাখ টাকা জিততে পারে, তাদের ১০০-২০০ টাকা জরিমানা করা খুব একটা বড় কথা নয়।’

তিনি বলেন, ‘এ আইনে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। গেমিং হাউজ হিসেবে অনলাইন জুয়া খেলার সাইটগুলোর সংজ্ঞা অনির্ধারিতই থেকে গেছে। যেহেতু প্রায় সব অনলাইন জুয়া সাইট বিদেশভিত্তিক, সেগুলো বাংলাদেশি আইনের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। এতে অনলাইন জুয়াড়িরা সহজেই শাস্তি থেকে বাঁচতে পারে। আর শাস্তি খুব কম হওয়ায় তারা শাস্তিকে ভয় পায় না।

জুয়াসংক্রান্ত বিদ্যমান আইন
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে জুয়া খেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিচারিকভাবে প্রয়োগযোগ্য নয়। এ অনুচ্ছেদটি শুধু রাষ্ট্রকে আইন প্রণয়নের নির্দেশ দেয় এবং দেশে জুয়া খেলাকে নিরুৎসাহিত করে।

বাংলাদেশে প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭ প্রচলিত রয়েছে। আইনটিতে ধারা-১(ক) সন্নিবেশ করার মাধ্যমে ১৯৭২ সালে অন্য অনেক আইনের মতো ১৮৬৭ সালের আইনটি গ্রহণের সময় ঘোড়দৌড়ের ওপর বাজি ধরাকে বৈধতা দেওয়া হয়। এজন্য ১৯২২ সালের বিনোদন ট্যাক্স আইনে বেটিং ট্যাক্স এখনো বহাল আছে।

অনলাইন জুয়ায় জড়িত অভিযোগে গ্রেফতাররা/ফাইল ছবি

১৯৭৬ ও ১৯৭৮ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ দুইবার সংশোধন করার মাধ্যমে দেশের সব মহানগর এলাকা প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭-এর আওতামুক্ত করা হয়। ফলে প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭-এর ধারা-১ অনুয়ায়ী দেশের মহানগরীগুলোতে জুয়া খেলার পথ খুলে যায়।

প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭-এ ‘কমন গেমিং হাউজ’ সংক্রান্ত অপরাধের জন্য ধারা-৩ অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি তিনমাস কারাদণ্ড অথবা ২০০ টাকা অর্থদণ্ড এবং ৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি একমাস কারাদণ্ড অথবা ১০০ টাকা অর্থদণ্ড। আবার ধারা ১১ অনুসারে রাস্তায় পাখি বা প্রাণী দিয়ে জুয়া খেলার সর্বোচ্চ শাস্তি একমাস কারাদণ্ডসহ ৫০ টাকা অর্থদণ্ড করার বিধান রয়েছে। ১৯১৩ সালে প্রকাশ্য জুয়া আইন, ১৮৬৭-এর ধারা ১১(ক) সন্নিবেশিত করা হয়। ধারাটিতে বলা রয়েছে, ‘যে খেলায় দক্ষতা থাকবে, সেখানে এই আইন প্রযোজ্য হবে না।’