১১১ ফুট নিচ দিয়ে যাবে ঢাকার পাতাল রেল

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম এন্ড টিভি,ষ্টাফ রিপোর্টার,১০ জুলাই : মাত্র ১০ বছর। এরপরই পাল্টে যাবে ঢাকার চিত্র। ২০৩০ সালের মধ্যেই কমপক্ষে ৫০ লাখ লোককে সাবওয়ে আর উড়ালপথে যাতায়াতের সুবিধা এনে দেবে মেট্রোরেল

২০২১ সালের ডিসেম্বরে মেট্রো যুগে প্রবেশ করবে রাজধানী ঢাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সাল পর্যন্ত নির্মিত হবে আরও পাঁচটি মেট্রো লাইন। উড়াল-পাতাল (মাটির নিচে) মিলিয়ে মোট ১২৮ দশমিক ৭৪১ কিলোমিটার রেলপথ তৈরি করা হবে ঢাকায়। মোট স্টেশন থাকবে ১০৪টি। পুরো রেলপথ নির্মাণ চলবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত।

মূলত রাজধানী ঢাকার যানজট কমানো, মানুষের যাতায়াতকে নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা এবং সময় ও কর্মঘণ্টা বাঁচাতে মেট্রোরেলের মোট ছয়টি লাইন স্থাপন করবে সরকার, যার মধ্যে একটির (লাইন-৬) কাজ চলছে। এ ছাড়া বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট নামে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে গাজীপুর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত।

এমআরটি লাইন ৬: এটি এমআরটি প্রকল্পের প্রথম ধাপ। এটি হচ্ছে পুরোপুরি উড়ালপথে। ২০২১ সালের মধ্যেই এই লাইনের কাজ শেষ হবে এবং ট্রেন চলা শুরু করবে। এটি উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প (দিয়াবাড়ী) থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে। মোট ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ের অন্তত আড়াই বছর আগেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

লাইন-১ যাবে ১০ থেকে ৩৭ মিটার নিচ দিয়ে: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলের সাবওয়ে লাইন বা পাতালরেল নির্মাণ হবে লাইন-১-এ। এই রুট দুই ভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, অন্যটি নতুনবাজার থেকে পূর্বাচলের পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত। এই লাইনের দৈর্ঘ্য ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রথম অংশের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার। এ অংশটি হবে পুরোপুরি সাবওয়ে (পাতাল)। এ পথে মোট স্টেশন হবে ১২টি। এই রুটের ইন্টারচেঞ্জ হবে নতুনবাজারে। এখান থেকে মেট্রো চেঞ্জ করে যাতায়াত করা যাবে বিমানবন্দর, কমলাপুর, পূর্বাচল ও পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত। এই রুটে মাটির ১০ মিটার অর্থাৎ ৩০ ফুট নিচ দিয়ে মেট্রো লাইন হবে। মাটির নিচে নির্মাণযজ্ঞ চলবে, তাই ওপরে কিছুই টের পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ নির্মাণের কারণে নগরবাসীকে ভুগতে হবে না।

এই রুটেই নগরবাসী স্বাদ পাবেন ১১১ ফুট নিচ দিয়ে চলাচল করার। সেটি হবে মালিবাগ এলাকায়। এখানে যেহেতু ফ্লাইওভার বিদ্যমান, সে কারণে অনেক দূর পর্যন্ত রেলপথটি ১১১ ফুট নিচ দিয়ে নির্মিত হবে।

সাবওয়ের এই অংশে ১২টি স্টেশন হবে। এগুলো হচ্ছে- বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুনবাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল পূর্ব, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর।

দ্বিতীয় অংশে নতুনবাজার থেকে পিতলগঞ্জ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার। এ অংশের পুরোটাই হবে উড়ালপথ। স্টেশন হবে ৯টি। নতুনবাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা-পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি (পিওএইচএস), মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল ও পিতলগঞ্জ ডিপো।

লাইন-১-এর এই দুটি রুট বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে বিস্তারিত স্টাডি, সার্ভে ও বেসিক ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ডিটেইল ডিজাইনের কাজ। ডিপোর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৫২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা।

লাইন-৫ নর্দার্ন রুট: এমআরটি প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত হবে লাইন-৫ নর্দার্ন রুট। হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত। পাতাল ও উড়াল মিলিয়ে এ পথের মোট দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাবওয়ে থাকবে ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার আর উড়ালে ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। স্টেশন হবে সাবওয়েতে ১৪টি ও উড়ালপথে পাঁচটি।

এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদনও পেয়ে গেছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২৮ সাল পর্যন্ত। এ প্রকল্পে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে জাইকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হয়েছে।

এই রুটের স্টেশন- হেমায়েতপুর, বালিয়ারপুর, বিলামালিয়া, আমিনবাজার, গাবতলী, দারুস সালাম, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২, নতুনবাজার ও ভাটারা। এখানেও ইন্টারসেকশন থাকবে নতুনবাজার। এখান থেকে মেট্রো বদল করে যাওয়া যাবে কমলাপুর, বিমানবন্দর ও পূর্বাচলে।

সাউদার্ন রুট, লাইন-৫: মেট্রোরেল প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে রাজধানীর গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত নির্মিত হবে ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার মেট্রোরেল। এর মধ্যে সাবওয়ে হবে ১২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। উড়ালপথ ৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার। এই রুটে মোট স্টেশন হবে ১৬টি। সরকার এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এ প্রকল্পে প্রস্তাবিত বাজেট ৩৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদে প্রায় ৪০৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে গেল ৯ ডিসেম্বর এটি অনুমোদিত হয়েছে।

ইতিমধ্যে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে প্রজেক্ট রেডিনেস ফাইন্যান্সিং (পিআরএফ) ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের লক্ষ্যে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) ইস্যু করা হয়েছে। চলতি জুলাই থেকে এ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ শুরু হওয়ার কথা।

এর আগে সাউদার্ন রুটের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। এ রুটের অ্যালাইনমেন্ট হচ্ছে- গাবতলী, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজ গেট, আসাদ গেট, রাসেল স্কয়ার, পান্থপথ, সোনারগাঁও, হাতিরঝিল পশ্চিম, নিকেতন, রামপুরা, আফতাবনগর পশ্চিম, আফতাবনগর সেন্টার, আফতাবনগর পূর্ব ও দাশেরকান্দি।

এমআরটি লাইন-২ : এই লাইনটিও হবে তৃতীয় ধাপে। এটি হবে সাবওয়ে বা পাতাল ও উড়াল মিলিয়ে ২৪ কিলোমিটার। বাস্তবায়নে জি টু জি ভিত্তিতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতি অনুসরণ করার চেষ্টা করছে ডিএমটিসিএল। এজন্য ইতিমধ্যে জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ সালের ৭ জুন ও ২০১৯ সালের ২১ মার্চ জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে মোট তিনটি প্লাটফরম সভা হয়েছে। এ লাইন বাস্তবায়নে অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রীসভা কমিটি ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।

এমআরটি লাইন-২-এর সম্ভাব্য রুট গাবতলী, অ্যামবাঙ্কমেন্ট রোড, বসিলা, মোহাম্মদপুর বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড, সাতমসজিদ রোড, জিগাতলা, ধানমন্ডি ২ নম্বর রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, আজিমপুর, পলাশী, শহীদ মিনার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, গোলাপ শাহ মাজার, বঙ্গভবনের উত্তর পাশের সড়ক, মতিঝিল, আরামবাগ, কমলাপুর, মুগদা, মান্ডা, ডেমরা হয়ে চট্টগ্রাম রোড।

২০৩০ সালের মধ্যে লাইন-৪ : এই লাইন নির্মিত হবে ২০৩০ সালের মধ্যে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে ট্র্যাকের পাশ দিয়ে। প্রায় ১৬ কিলোমিটার এ লাইনের পুরোটাই হবে উড়ালপথে। এ লাইন নির্মাণের উদ্যোগ একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে।