ভিডিও)মেট্রোরেল নতুন সূচিতে সেবা, ট্রেন পাওয়া যাবে সোয়া ৪ মিনিট পরপর

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম ((ভিডিও),ঢাকার মেট্রোরেল প্রতিনিধি,বুধবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ||  আশ্বিন ৯ ১৪৩২ :

সকাল সকাল অফিসে পৌঁছাতে হবে, অথচ বাসস্ট্যান্ডে নেই কোনো যানবাহন। বিকেলে কাজ শেষে ক্লান্ত দেহ নিয়ে ফিরতে চাওয়া, কিন্তু রাস্তায় জ্যামে আটকে থেকে চলে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তবে এবার সেই চিত্র বদলে যাচ্ছে। ঢাকার মেট্রোরেল বদলে দিচ্ছে রাজধানীর যাতায়াত ব্যবস্থাকে।আর এবার সময় বাড়ছে, সেবা বাড়ছে, কমছে অপেক্ষার ক্লান্তি।

Advertisement

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবার মেট্রোরেল চালু হচ্ছে ভোর থেকে রাত অবধি, আর পিক আওয়ারে ট্রেন পাওয়া যাবে মাত্র ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পরপর। শুধু তাই নয়, এখন যেসব ট্রেন অলস পড়ে থাকত, সেগুলোও নামছে লাইনে। বলা যায়। ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় এটি একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন।

Advertisement

আবশ্যক

প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

 

সময় বাড়ছে
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রী চাহিদা পূরণে মেট্রোরেলের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন সূচি অনুযায়ী: উত্তরা থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে (বর্তমানে ৭:১০)। সর্বশেষ ট্রেন ছাড়বে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে (বর্তমানে রাত ৯টা)।

 

মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টায় (বর্তমানে ৭:৩০)। সর্বশেষ ট্রেন ছাড়বে রাত ১০টা ১০ মিনিটে (বর্তমানে ৯:৪০)। শুক্রবারে ট্রেন চলাচল শুরু হবে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে, যা আগে ছিল ৩টা।

নতুন সূচি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হচ্ছে ২৬ সেপ্টম্বর থেকে এবং দুই সপ্তাহ পর (৬ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে। পরীক্ষামূলক চলাচলের সময়ও যাত্রী পরিবহন করা হবে অর্থাৎ কোনো ট্রেন খালি যাবে না।

 

কমবে অপেক্ষার সময়
নতুন সূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি আরো ঘন হচ্ছে।

বর্তমানে ব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ারে) ট্রেন পাওয়া যায় প্রতি ছয় মিনিটে। নতুন সূচিতে এটি কমে আসছে ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে। অফ পিক আওয়ারে ট্রেন পাওয়া যাবে প্রতি ৬ থেকে ৮ মিনিটে, যেখানে এখন অপেক্ষা করতে হয় ৮-১০ মিনিট।

 

এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ট্রেনের সংখ্যা ও সময় বাড়ানো দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পনায় ছিল। লোকবল সংকট ছিল বড় বাধা। এখন আমরা প্রস্তুত। যাত্রীদের জন্য অপেক্ষার সময় কমবে, সড়কেও চাপ কমবে।

বেশি যাত্রী পরিবহনের প্রস্তুতি
বর্তমানে প্রতিদিন মেট্রোরেলে যাতায়াত করে গড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার যাত্রী। এর মধ্যে ৬ আগস্ট সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৬ জন যাত্রী চলাচল করেছে। নতুন সময়সূচি চালু হলে এই সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

প্রকল্প পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ লাখ যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে। আর কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ শেষ হলে দৈনিক যাত্রী সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজারে।

অব্যবহৃত ট্রেন নামছে লাইনে
লাইন-৬ রুটের জন্য মেট্রোরেলের হাতে রয়েছে ২৪ সেট ট্রেন, যার মধ্যে বর্তমানে নিয়মিত চলাচল করে মাত্র ১৩ সেট। তিনটি ট্রেন রাখা হয় জরুরি প্রয়োজনে, আর একটি চলে পরীক্ষামূলকভাবে অর্থাৎ ৭ সেট ট্রেন কার্যত অলস পড়ে থাকে।

 

নতুন সময়সূচিতে ২০ সেট ট্রেন ব্যবহৃত হবে, ফলে অলস ট্রেন কমবে, সময়মতো ট্রেনের ঘন ঘন চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এদিকে, শুরুতে পরিকল্পনা ছিল অব্যবহৃত ট্রেন থেকে দুটি কোচ এনে জোড়া দিয়ে যাত্রী চাপ সামলানো। কারণ, প্রতিটি ট্রেনে রয়েছে ৬টি কোচ, এবং প্রকল্পে বলা ছিল ২টি কোচ বাড়ানো যাবে। কিন্তু কারিগরি জটিলতা ও ব্যয়ের কারণে এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে ডিএমটিসিএল। এর পরিবর্তে সিদ্ধান্ত হয়, ট্রেন চালানোর সময়সীমা বাড়ানো এবং দুই ট্রেনের মাঝে সময় কমিয়ে আনা হবে। এজন্য নতুন জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়। শুরুতে চালু ছিল উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ। ধাপে ধাপে স্টেশন ও রুট বাড়িয়ে ২০২৩ সালের শেষ দিন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সম্পূর্ণ চালু হয়। বর্তমানে চলছে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ।

এই রেললাইনের মাধ্যমে ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা পেয়েছে এক নতুন রূপ।নির্দিষ্ট সময়ের ট্রেন, নির্ভরযোগ্য যাতায়াত ব্যবস্থা, নিরাপদ ভ্রমণ। সব মিলিয়ে মেট্রোরেল হয়ে উঠেছে নগরবাসীর প্রিয় বাহন।

Advertisement

রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিলে আসেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হক বলেন, “নতুন সময়সূচি শুধু ট্রেনের সময় বাড়ানোর ঘোষণা নয়। এটি ঢাকার নাগরিক জীবনের গতি ও মানোন্নয়নের এক নতুন ধাপ। কমে যাবে ভোগান্তি, সহজ হবে যাতায়াত, সময়মতো পৌঁছানো যাবে গন্তব্যে। আরো বেশি ট্রেন, আরো ঘন ফ্রিকোয়েন্সি, আর দীর্ঘ সময় ধরে চলাচলের সুযোগ।সব মিলিয়ে মেট্রোরেল এখন কেবল একটি বাহন নয়, বরং নগর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে।”

মেট্রোরেল। ফাইল ছবি

: