ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজধানীর মোহাম্মদপুর প্রতিনিধি, সোমবার ১১ আগস্ট ২০২৫ || শ্রাবণ ২৭ ১৪৩২ :
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগী এক সাংবাদিকের অভিযোগ আমলে নিয়ে চার পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। একই সঙ্গে পুলিশের অসদাচরণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে বাহিনীটি।
Advertisement
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই দুঃখ প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘‘আহমাদ ওয়াদুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস ‘মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সঙ্গে এক ঘণ্টা’ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এতে বর্ণিত অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট চার পুলিশ সদস্য—এসআই জসিম, এএসআই আনারুল, কনস্টেবল নুরুন্নবী ও কনস্টেবল মাজেদুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ডিপিএস অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।’’
পোস্টে আরও বলা হয়, ‘পুলিশ সদস্যদের অসদাচরণের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং এই ঘটনায় জড়িত তিন জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ে ছিনতাইয়ের শিকার হন এক সাংবাদিক। তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ এবং কিছু টাকা ছিনতাই করে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত। ঘটনার সময় তিনি চাপাতির আঘাতে আহত হন, তবে গুরুতর নয়। এসময় তার স্ত্রী সঙ্গে থাকলেও দূরে থাকায় নিরাপদে ছিলেন। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা মোহাম্মদপুর থানায় পাঁচ মিনিটের মধ্যে উপস্থিত হন উল্লেখ করে তিনি তার ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। এরপর মুহূর্তের মধ্যেই তার পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার ৩ যুবক
ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে ওই সাংবাদিক লিখেছেন, ‘থানায় পৌঁছে ডিউটি অফিসার এসআই জসিমকে ছিনতাইয়ের ঘটনা জানান। কিন্তু তাৎক্ষণিক সহায়তা না করে, উল্টো একজন সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্য তার পোশাক নিয়ে মন্তব্য করে ও হুমকির সুরে কথা বলেন।’
তিনি আরও লেখেন, “অভিযোগ লিখে দেওয়ার জন্য কলম চাওয়ায় জানিয়ে দেওয়া হয়, থানায় ‘অতিরিক্ত কলম নেই’। তার স্ত্রী ব্যাগ থেকে কলম বের করে দিলে, তিনি নিজেই অভিযোগ লিখে দেন। কিন্তু অভিযোগের কোনও কপি দেওয়া হয়নি। বরং একটি ফোন নম্বর ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়, এই ঘটনার দায়িত্বে আছেন এএসআই আনারুল, তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে।’
আহমাদ ওয়াদুদের দাবি, তিনি পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে যেতে অনুরোধ করলে এসআই জসিম তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলেন, ‘আপনার কমন সেন্স নাই? ছিনতাইকারী আপনার জন্য বসে থাকবে?’
এরপর তিনি ওসি ইফতেখার হাসানের কক্ষে গিয়ে অভিযোগ করলে তিনিও দায়িত্ব এড়িয়ে বলেন, ‘আমি ওসি হয়েও এই কম দামের ফোন ব্যবহার করি, আপনি দামি ফোন নিয়ে ঘুরবেন, ছিনতাই তো হবেই!’
এরপর ওসি এএসআই আনারুলকে ফোনে বিষয়টি জানিয়ে ভুক্তভোগীকে রাস্তায় অপেক্ষা করতে বলেন। পরে পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গেলে আহমাদ ওয়াদুদ নিজ চোখে ছিনতাইকারীদের সেখানে বসে থাকতে দেখেন। দূর থেকে দেখিয়ে দেওয়ার পরও এএসআই আনারুল সেই জায়গায় না গিয়ে পাশের একটি জায়গায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরও আহমাদ ওয়াদুদ ছিনতাইকারীদের পুনরায় চিহ্নিত করলে পুলিশ কোনও তৎপরতা না দেখিয়ে বলে, ‘এখন তো আর পাওয়া যাবে না, রাতে অভিযান চালানো হবে। আপনি বাসায় চলে যান।’
এই পুরো ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিবাগত রাত ৩টা ২৪ মিনিটে ফেসবুকে পোস্ট করেন আহমাদ ওয়াদুদ। মুহূর্তেই পোস্টটি ভাইরাল হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার পর পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টি আমলে নেয়।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইসঙ্গে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট চার পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে।
ওসির অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসানের অপসারণ দাবিতে থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন একদল লোক। শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকালে ‘ঐক্যবদ্ধ মোহাম্মদপুর’-এর ব্যানারে এই বিক্ষোভ করা হয়। এসময় বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, থানার ওসি চাঁদাবাজ, চোর চক্র ও ছিনতাইকারীদের সঙ্গে আঁতাত করে চলছেন এবং এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ তিনি।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অভিযোগ, ওসি আলী ইফতেখার হাসান থানায় সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। কেউ যদি আইনি সহযোগিতা চাইতে আসে, তাকে অপমান বা ভয়ভীতি দেখানো হয়। বরং অপরাধীদের প্রতি তার অদ্ভুত নমনীয়তা লক্ষ করা যায়। এ কারণে মোহাম্মদপুরে ছিনতাই, সন্ত্রাস, মাদক ও চাঁদাবাজির ঘটনা বাড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ হাসান সুমন বলেন, ‘মোহাম্মদপুরের মতো স্পর্শকাতর একটি থানায় ওসি আলী ইফতেখার হাসান দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তিনি শুধু ব্যর্থ নন, বরং সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত করে চলেন। যারা তার অপসারণ দাবি করছেন, তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, কিন্তু পুলিশ সদর দফতর এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা ওসি সাহেবের দ্রুত অপসারণ চাই।’
আরেক বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘ওসি ইফতেখার দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের সঙ্গে অসদাচরণ করে চলেছেন। ডিএমপি কমিশনার, পুলিশ সদর দফতরসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষ থানায় গিয়ে সেবা না পেয়ে হতোদ্যম হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতি আর চলতে দেওয়া যায় না।’
Advertisement
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘কিছু মানুষ এসেছিল বিক্ষোভ করতে। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে থানার সামনে থেকে চলে যেতে বলেছি। আমরা তাদের বলেছি, ওসির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে কাল ডিসি অফিসে এসে লিখিত অভিযোগ দেওয়া জন্য। তারা বলেছে, কাল লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন। আমরাও বিষয়টি অফিসিয়ালি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’