ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজধানীর মিরপুর প্রতিনিধি,রোববার ০৩ আগস্ট ২০২৫ || শ্রাবণ ১৯ ১৪৩২ :
সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আব্দুস সালাম মিয়ার নামে রাজধানীর মিরপুরে বহুতল ভবন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্লট, খুলনায় স্ত্রীর নামে ফ্যাক্টরি, মাদারীপুরে নামে-বেনামে কয়েক একর জমি, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। তিনি পুলিশে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে যোগদান করেছিলেন। পদোন্নতি পেয়ে এএসপি হন। এ পদে থাকা অবস্থায় দুই বছর আগে অবসরে যান।
Advertisement
চাকরিকালীন আব্দুস সালাম মিয়া পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। র্যাব, বিআরটিএ এবং শেখ হাসিনার আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিরাপত্তায় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নে (এসপিবিএন) দায়িত্ব পালন করেন। তিনি র্যাবে থাকা অবস্থায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন। ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় ২০২৩ সালে অবসরে যান তিনি। ওই বছরই জানুয়ারিতে পরিদর্শক থেকে এএসপি হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।
বিভিন্ন দপ্তরে থাকাকালীন ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন বলে আব্দুস সালাম মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ পেয়ে তা অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকে আসা ওই অভিযোগে বলা হয়, আব্দুস সালাম মিয়ার বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে। তিনি সাধারণ একজন কৃষকের ছেলে। পুলিশে যোগ দিয়ে ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গড়েন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। তিনি পুলিশে এসআই পদে নিয়োগ গ্রহণেও অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বিগত সরকারের আমলে পুলিশ ও র?্যাবে এবং গণভবনে চাকরি করা অবস্থায় স্ত্রী-সন্তানদের নামে, এমনকি নিকটাত্মীয়দের নামে ও বেনামে ঢাকা, খুলনা ও মাদারীপুর অঢেল সম্পত্তি করেন।
খুলনার ফুলবাড়ি গেট এলাকায় তার প্রথম স্ত্রীর নামে একটি বিশাল ফ্যাক্টরি স্থাপন, র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদের নেকনজরে থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে প্রচুর টাকা ও সম্পত্তি গড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
Advertisement
আরও জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বরে কাফরুল থানা এলাকায় সেকশন-১৩ এর হাজী জব্বার হোসেন রোডের ১/১ ডি, পূর্ব বাইশটেকীতে অবস্থিত ১২তলা ভবনে আব্দুস সালাম মিয়ার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের এন ব্লকে তার ২০ কাঠা জমি রয়েছে। বারিধারা ডিওএইচএসে দেড় হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের ফ্ল্যাট, বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকাতেও আরও ফ্ল্যাট থাকার অভিযোগ রয়েছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর থানায় ভদ্রাসন ইউনিয়নের বিভিন্ন ব্যক্তির নামে মামলা করে তৎকালীন গণভবনের ভয় দেখিয়ে তাদের সম্পত্তি দখল করেছেন।
ভদ্রাসনের এক বাসিন্দা আমাদের সময়কে বলেন, আব্দুস সালামের বাবার তেমন কোনো সহায়-সম্পত্তি ছিল না। পুলিশে চাকরি করার দরুণ তিনি আজ বিত্তবৈভবের মালিক।
আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শিবচরে ‘ছবদের মোল্লা ও আছিরুননেছা ফাউন্ডেশন’ গড়ে তুলেছেন তিনি; কিন্তু ফাউন্ডেশন গড়তে সাধারণ মানুষ এবং অন্য ওয়ারিশদের ঠকিয়ে সম্পত্তি দখল করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাবেক এএসপি আব্দুস সালামের তিনটি মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়। এসব নম্বরে গত তিন দিন অনেকবার ফোন করে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। যে কারণে তার কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। ওই তিনটি নম্বরই তিনি বিভিন্ন সময় ব্যবহার করেছেন বলে জানা গেছে।
তবে তার এক নিকটাত্মীয় আমাদের সময়কে জানান, আব্দুস সালাম ঘন ঘন মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করেন। বহু মানুষের সঙ্গে তিনি প্রতারণা করেছেন। সেসব মানুষদের থেকে দূরে থাকতে তিনি এমন কৌশল নিয়েছেন। একই কারণে তিনি ঢাকায় ঘন ঘন বাসা বদল করেন।
এদিকে আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ পেয়ে চলতি বছর মে মাসে অনুসন্ধানে নামে দুদক। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান এ অনুসন্ধান করছেন। ১০ জুলাই সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেন তিনি। প্রাথমিক অবস্থায় আব্দুস সালাম এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট (যদি থাকে), আয়কর রিটার্ন ও টিন সার্টিফিকেটসহ সমস্ত তথ্য তলব করা হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের আইন-বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান বা তদন্তের বিষয়ে কোনো কিছু বাইরে প্রকাশ বা অন্য কারও কাছে শেয়ার করা যাবে না। অনুসন্ধানের দায়িত্বে থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য আমি দিতে পারি না।’
Advertisement
https://www.youtube.com/live/E9fMBkbJ3-M?si=k2Ro-HFkcInWkNQ
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, যে কোনো অনুসন্ধান বা তদন্ত কাজে কর্মকর্তা স্বাধীনভাবে কাজ করে থাকেন। তিনি আইন ও বিধি অনুযায়ী তদন্ত করে নির্ধারিত সময়ে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তার কাজে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। তদন্তে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হলে আইন অনুযায়ী আবেদন করলে সময় বাড়ানো হয়। অনুসন্ধান বা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু বলা যাবে না।
