
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,মো. ইব্রাহীম খলিল মোল্লা, মেঘনা (কুমিল্লা),সোমবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ || পৌষ ৭ ১৪৩২ :
কুমিল্লার মেঘনায় ভাটেরচর থেকে উপজেলা বাসস্ট্যান্ড কিংবা মানিকারচর বাজারের এই ব্যস্ত রুটে দিবারাত্রি সিএনজি ও অটোরিকশার ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ মানুষ। শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী মানুষ, নারী, বয়স্ক- এমনকি সরকারি কর্মকর্তারাও এই যানবাহনের ওপর নির্ভরশীল। অথচ রাত ৮টা বাজার পর থেকেই শুরু হয় এক ধরনের নীরব জিম্মি দশা।
Advertisement
অভিযোগ রয়েছে, ভাটেরচর নতুন রাস্তার স্ট্যান্ড থেকে যাত্রীরা নিয়মিত বাসে ওঠতে পারছেন না। গুলিস্তান-উপজেলা রুটে চলাচলকারী মেঘনা রূপান্তর বাস সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ভাটেরচর নতুন রাস্তা থেকে যাত্রী ওঠাতে অনীহা দেখাচ্ছে। যাত্রী কম দেখিয়ে লাইনের সিএনজি ও অটোরিকশা চালকরাও গাড়ি ছাড়তে চান না। এতে সাধারণ মানুষ পড়ে যায় এক ধরনের দ্বিমুখী ফাঁদে। বাসেও ওঠা যায় না, আবার সিএনজিও ছাড়ে না। ফলে, যাত্রীদের অমূল্য সময় নষ্ট হয়, বাড়ে ভোগান্তি। বিশেষ করে রাত আটটার পর ‘পর্যাপ্ত যাত্রী নেই’-এই অজুহাতে সিএনজি ও অটোরিকশাগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকে।
দীর্ঘ অপেক্ষায় যাত্রীরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে চালকদের পক্ষ থেকে শুরু হয় অতিরিক্ত ভাড়ার প্রস্তাব। তখন কার্যত কোনো বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়েই যাত্রীরা সেই অতিরিক্ত ভাড়া দিতে সম্মত হন।
ভুক্তভোগীরা জানান, একদিকে ইচ্ছাকৃতভাবে সিএনজি দেরিতে ছাড়া হয়, অন্যদিকে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে রাত একটু বেশি হয়ে গেলে অটোচালকেরা যাত্রীদের জিম্মি করে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নারী, বয়স্ক ও অসুস্থ যাত্রীরা। এছাড়াও বাস ও সিএনজি চালকদের মধ্যে একটি অঘোষিত সমঝোতা রয়েছে।
বাসে যাত্রী না তুলে সিএনজি নির্ভরতা বাড়ানো এবং পরে রাতের সময় বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুযোগ তৈরি করাই এই সমঝোতার মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এতে একটি পুরো জনগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে রাতের অন্ধকারে জিম্মি হয়ে পড়ছে।
Advertisement
প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

স্থানীয়দের মতে, এই সংকটের সমাধান জটিল নয়। ভাটেরচর নতুন রাস্তা থেকে বাসে যাত্রী ওঠার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রী থাকুক বা না থাকুক, লাইনের সিএনজি কমপক্ষে ২০ মিনিট পরপর ছাড়ার বাধ্যবাধকতা কার্যকর করতে হবে। একই সঙ্গে রাতের সময়ের জন্য নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা প্রকাশ ও তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন জরুরি।
কুমিল্লা দায়রা ও জজ কোর্টের আইনজীবী এবং স্থানীয় বাসিন্দা আবির হাসান সোহেল বলেন, “বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় দণ্ডনীয় অপরাধ। একইভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যাত্রী পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করা কিংবা নির্দিষ্ট পরিবহনে উঠতে বাধ্য করাও আইন লঙ্ঘনের শামিল। অথচ এসব ঘটনা নিয়মিত ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।’’
উপজেলা পর্যায়ের সরকারি এক কর্মকর্তা জানান, রাতে কুমিল্লা থেকে ফিরলে তিনিও একই সমস্যার মুখে পড়েন। লোক না হলে সিএনজি ছাড়ে না, আবার বাসেও ওঠতে দেওয়া হয় না। বিষয়টি তিনি আইনশৃঙ্খলা সভায় তুলেছেন। তার একটি বক্তব্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ-,‘‘আমাদেরও তো একটা জীবন।” এই কথাটিই আসলে পুরো উপজেলার মানুষের অনুভূতি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজি চালক জানান, রূপান্তর বাস সার্ভিস অধিক যাত্রী বহন করায় তাদের যাত্রী তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এ কারণে পাঁচজন যাত্রী না হলে তারা সিএনজি ছাড়েন না। কারণ, কম যাত্রী নিয়ে গাড়ি ছাড়লে তা তাদের পক্ষে আর্থিকভাবে পোষায় না।
এ বিষয়ে মেঘনা রূপান্তর বাস সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। তিনি বাস কর্তৃপক্ষ এবং সিএনজি-অটোরিকশা মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করবেন।
একই সঙ্গে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যেন কোনোভাবেই চলতে না থাকে, সে বিষয়ে থানা প্রশাসন সজাগ থাকবে।
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী আক্তার বলেন, বিষয়টি তিনি এই প্রথম শুনেছেন। আগে এ ধরনের কোনো অভিযোগ তাঁর কাছে আসেনি। পরে তাকে জানানো হলে তিনি স্মরণ করেন যে, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন।
ইউএনও জানান, মেঘনা রূপান্তর বাস সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন এবং সংশ্লিষ্ট স্থান থেকে যাত্রী উঠাতে তাদের কোনো বাস্তব সমস্যা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবেন।
উভয় পক্ষের সঙ্গে একান্তভাবে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।
Advertisement

মৌসুমী আক্তার বলেন, ‘‘কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা আইনগত অপরাধ। এ ধরনের অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



