ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (ভিডিও),আইন আদালত প্রতিনিধি,মঙ্গলবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ :
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড ও রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। তবে ট্রাইব্যুনালের এই রায়ে ক্ষুব্ধ শেখ হাসিনা-কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, এই রায়ে আমি কষ্ট পাচ্ছি। এজন্য আমি ক্ষুব্ধ, আমার ভেতরে কষ্ট লালন করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার আসামির সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। এটা আমার জন্য কষ্টকর। আমার পক্ষে এই মামলায় আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার ক্লাইন্টরা এসে ট্রাইব্যুনালে স্যারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করবেন অথবা তারা কোনোভাবে গ্রেপ্তার হবেন। এর আগ পর্যন্ত অ্যাপিলিয়েট ডিভিশনে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রায় ঘোষণার জন্য এজলাসে ওঠেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বিচারিক প্যানেল। এর ২ মিনিট পর মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানানো হয়। পরে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রথম দিকে এ মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। চলতি বছরের ১৬ মার্চ এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।
Advertisement
প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে এই তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগগুলো হলো- গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে নির্মূল করার নির্দেশ প্রদান, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পোড়ানোর অভিযোগ। এই পাঁচ অভিযোগে তিন জনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। আর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার রয়েছেন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের দিন (১০ জুলাই) গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন সাবেক আইজিপি মামুন। ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন। গত ১২ অক্টোবর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়। যুক্তিতর্ক শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড চান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
Advertisement
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি যুক্তিতর্কে এ মামলা থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের খালাস আবেদন করেন। রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনেরও খালাস আবেদন করেন তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে শেখ হাসিনা-কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। ছবি : ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম


