ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (ভিডিও),বিশেষ প্রতিনিধি, শনিবার ০১ নভেম্বর ২০২৫ || কার্তিক ১৭ ১৪৩২ :
১৩ বছর বয়সে নরসিংদীর বাঁধন (ছদ্মনাম) বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন রাজধানীতে।
Advertisement

এরপর ‘গুরুমা’ বাঁধনকে হিজড়াদের দলে ঢুকিয়ে দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলার কাজে ব্যবহার করছেন।
বাঁধনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, “হিজড়াদের ভাষায় লিঙ্গ কর্তনের বিষয়টিকে বলা হয় ‘ছিঁবড়ানো’। যে ডাক্তার এসব অপারেশন করেন তাঁর নাম হাদীউজ্জামান। তিনি ঢাকার মালিবাগ এলাকায় একটি বিউটি পার্লারে বসেন। যেসব পুরুষ হিজড়া হতে চায় তারা ওই ডাক্তারের কাছে যায়।’
হিজড়া নয়, কিন্তু হিজড়া সেজে রাস্তাঘাটে হাত পাতছে, টাকা তুলছে এমন একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া যায় ভৈরবে।
Advertisement
প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

কল্পনার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভৈরব গিয়ে জানা যায়, এই উপজেলায় অন্তত পাঁচজন পুরুষ রাতারাতি নকল হিজড়া বনে গেছে। তাদের একজন উপজেলার পিরিজপুর বাজারের আনোয়ার। স্থানীয়রা জানায়, এই আনোয়ার নকল হিজড়া সাজার পর নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আনোয়ারা। তিনি বিয়েও করেছিলেন। সেই ঘরে ছয় বছরের একটি ছেলেসন্তানও রয়েছে তাঁর।
এনজিওকর্মীর পরিচয়ে আনোয়ারের বাড়িতে গেলে দেখা হয় তাঁর সঙ্গে। কথোপকথনের এক পর্যায়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি কোন লিঙ্গের? কৌশলে প্রশ্ন এড়িয়ে আনোয়ার বলেন, ‘যখন জাতীয়পরিচয়পত্র তৈরি করা হচ্ছিল তখন আমি দেশে ছিলাম না। দিল্লিতে ছিলাম। কলকাতায়ও আমার নামে কার্ড আছে। সেই কার্ডে আমার লিঙ্গ মেয়ে। বাংলাদেশে তো ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে আমাদের নাম।’
লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়ে আনোয়ারের মা সরলা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে আগে ভালো ছিল। আমি ওকে খতনা করাইছি। এই এলাকায় সুজন নামে এক হিজড়া আছে তার সঙ্গে মিশে ও ঘর ছাড়ে।’
আনোয়ারের প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, গ্রামে এক শ্রেণির ছেলেপেলে আছে, যারা কামচোর। এরা ছোটবেলা থেকে ইনকামের সহজ রাস্তা খোঁজে। আনোয়ার তাঁদের একজন। ইনকামের সহজ রাস্তা বের করতে আনোয়ার হিজড়া সেজেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৈরবে পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত অপরাধীর মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছে, যারা হিজড়া সেজে ফাঁকি দিচ্ছে পুলিশের চোখ। এমন ব্যক্তিদের একজন সুমন ওরফে বড় সুমন ওরফে মাইগ্যা সুমন। দুই মামলার আসামি হয়েও হিজড়া সেজে তিনি পুলিশের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওই সুমন এখন এলাকায় সুবর্ণা নামে বেশি পরিচিত। হিজড়া সেজে তিনি উপজেলার ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে নিয়মিত হাত পেতে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন।
হিজড়া সেজে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘আমি আগে থেকে হিজড়াদের সঙ্গে ছিলাম। আমার মন তো হিজড়াদের মতোই।’ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার নামে মামলা ছিল, এখন নেই। মামলার ঘটনায় আমি জড়িত ছিলাম না।’
তবে ভৈরব থানায় গিয়ে জানা গেল দুটি মামলা আছে সুমন ওরফে সুবর্ণার বিরুদ্ধে। তবে তাঁর হিজড়া সেজে ঘুরে বেড়ানোর তথ্য পুলিশ জানে না।
ভৈরব থানার ওসি গোলাম মোস্তফা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুমন ওরফে মাইগ্যা সুমনকে আমরা খুঁজছি। সম্প্রতি তাঁর কোনো তৎপরতা আমাদের চোখে পড়েনি। তিনি যে হিজড়া সেজেছেন, তা আমাদের নজরে আসেনি। সম্ভবত নিজের পরিচয় গোপন করতে ও এই কৌশল নিতে পারেন।’
স্বেচ্ছায় লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়ে নিশ্চিত হতে ভুয়া চিকিৎসক হাদীউজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় মোহাম্মদপুরের তৃতীয় লিঙ্গের প্রিয়াঙ্কার সাহায্যে। তাঁর মাধ্যমে হাদীউজ্জামানের কাছে গেলে তিনি জানান, এক লাখ টাকা দিলে তিনি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করে দেবেন। জানা গেছে, যেসব পুরুষের মধ্যে কিছুটা মেয়েলি স্বভাব রয়েছে, কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সঙ্গে মেলামেশা করে, এমন লোকেরাই লিঙ্গ পরিবর্তন করতে ভুয়া চিকিৎসক হাদীউজ্জামানের কাছে যেত। এরই মধ্যে ওই ভুয়া চিকিৎসক শতাধিক পুরুষের লিঙ্গ পরিবর্তন করেছেন।
ডিবির হাতে গ্রেপ্তারের সময় হাদীউজ্জামান নিজের অপরাধ স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার লেজার সেন্টারে হিজড়া হতে এলে পুরুষাঙ্গ কেটে ক্যাথেড্রাল স্থাপন করে দিতাম। আমি ডাক্তার না, খুলনায় এক ডাক্তারের সঙ্গে কাজ করতাম। তাঁর কাছ থেকে এই কাজ শিখেছি।’
Advertisement
ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি খুলনা, যশোরেও এ ধরনের পার্লারের আড়ালে অস্ত্রোপচার করে লিঙ্গ পরিবর্তন করা হচ্ছে। বগুড়া ও কিশোরগঞ্জ থেকেও অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
শিশুদের লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী ও লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিকের (লিডো) নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সমাজে অনেক পথশিশু আছে, যাদের বয়স ১২ বছরের ঊর্ধ্বে। এদেরই কাউকে কাউকে প্রলোভন দেখিয়ে কোনো কোনো চক্র কৌশলে লিঙ্গ পরিবর্তন করে রাস্তায় নামিয়ে টাকা আয় করছে। সময় এসেছে, এই শিশুদের যেন আর ব্যবহার করতে না পারে সে উদ্যোগ নেওয়ার।



