(ভিডিও) ঘুমের সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ে কেন, ভয়াবহ রোগ নয় তো? রইল সমাধান

SHARE

https://youtu.be/2n7ImOR93BI?si=HrcGFMePcV3MGdZ_

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (ভিডিও),স্বাস্থ্য প্রতিনিধি, রোববার   ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩২ :

দিনে বা রাতে ঘুমের সময় অনেকেরই মুখ দিয়ে লালা পড়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাদের অজান্তেই ঘুমের সময় লালা পড়ে। এ ক্ষেত্রে বাসা-বাড়ির বাইরে গেলে বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঘুমানো খুবই লজ্জার বিষয় হয়। আবার বিষয়টি পরিবার ব্যতীত জানাজানি হলেও বিড়ম্বনার শেষ থাকে না।

Advertisement

ঘুমের সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ার বিষয়টি অনেকেই স্বাভাবিক মনে করেন। কিন্তু এটি মোটেও ঠিক নয়। মুখ দিয়ে লালা পড়া অনেক ক্ষেত্রেই স্ট্রোক ও মস্তিষ্কের মতো ভয়াবহ রোগের jকারণে হয়ে থাকে। মুখ দিয়ে লালা পড়া বন্ধ করতে ঘুমের অভ্যাস ও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনার কথা বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এ সংক্রান্ত ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত পরামর্শ প্রদানকারী প্ল্যাটফর্ম ভেরি ওয়েল হেলথ

ঘুমের সময় লালা পড়ে কেন:
সাধারণত ঘুমের সময় শরীরের সব পেশীগুলো শিথিল হয়, বিশেষ করে রেম। ঘুমানোর সময় মুখ খোলা থাকলে মুখ দিয়ে লালা ঝরে। আবার আপনি যদি পাশ ফিরে বা পেটে ভর করে ঘুমান, তাহলে ঘুমের সময় মুখের পাশ দিয়ে লালা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ঘুমের ভঙ্গির কারণে মুখ দিয়ে লালা ঝরলে পিঠের ওপর ভর দিয়ে ঘুমালে সমস্যা সমাধান হতে পারে।

মুখের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা থেকেও লালা ঝরতে পারে:
অনেক ক্ষেত্রে মুখের সমস্যা যেমন- গর্ত, মাড়ির রোগ ও মুখের আলসারের কারণে অতিরিক্ত লালা উৎপাদন হতে পারে। মুখের জ্বালা বা সংক্রমণের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীর অধিকতর লালা উৎপাদন করতে পারে। ঘুমের সময় দাঁত, মাড়ি বা মুখের সমস্যার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মুখের ব্যথা, চিবানোর সময় দাঁত ব্যথা, দাঁতের সংবেদনশীলতা, মাড়ি ফোলাভাব, মাড়ি থেকে রক্তপাত, মুখে ঘা, দুর্গন্ধ, শুষ্ক মুখ ও আলগা দাঁত।

ঘুমের সময় যেসব কারণে লালা পড়তে পারে:
কখনো কখনো রাতে লালা পড়ার বিষয়টি অন্তর্নিহিত চিকিৎসা সংক্রান্ত অবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে। অথবা নাক দিয়ে টেনে নেয়া বা শ্বাস নেয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এ অবস্থায় লালা উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে, যাকে সালোলোরিয়া বলা হয়।

স্লিপ অ্যাপনিয়া:
এ রোগ হলে ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া বন্ধ হয় এবং লালা পড়া শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে প্রায় সময়ই দেখা যায় মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়া হয় এবং অতিরিক্ত লালা বের হয়। বিশেষ করে ঘুমের সময় যদি নাক ডাকার সমস্যা থাকে বা শ্বাস নেয়া বন্ধ হয়। এ অবস্থায় দিনের বেলায় বেশ ক্লান্তবোধ হতে পারে।

গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইআরডি):
জিইআরডি হলে গলা জ্বালা-পোড়া করতে পারে এবং খাওয়ার সময় বা কিছু গেলার সময় অসুবিধা হতে পারে। অ্যাসিড রিফ্লাক্স অতিরিক্ত লালা এবং শ্বাসরোধের অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে শুয়ে থাকার সময় মুখ দিয়ে লালা পড়তে পারে।

স্ট্রোক:
স্ট্রোক হলে খাবার খাওয়া নিয়ন্ত্রণকারী পেশীগুলোকে দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে মুখে লালা ধরে রাখা কঠিন হয়, বিশেষ করে দিনে বা রাতে ঘুমের সময়।

পার্কিনসন রোগ:
মস্তিস্কের এই রোগ হলে খাবার খাওয়ার আগ্রহ কমে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মুখে লালা জমা এবং মুখ থেকে তা বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সেরিব্রাল পালসি:
এ অবস্থায় নড়াচড়া ও পেশী নিয়ন্ত্রণকে বেশ প্রভাবিত করে। সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্তদের অনেকেরই খাবার খেতে এবং মুখ বন্ধ করতে সমস্যা হয়। ফলে মুখ দিয়ে লালা পড়ে।

Advertisement

প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

হান্টিংটন রোগ:
এ রোগ মস্তিষ্কের কোষগুলোকে প্রভাবিত করে, যা নড়াচড়া ও সমন্বয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ কারণে কিছু গিলতে এবং লালা নিয়ন্ত্রণকে ব্যাহত করতে পারে।

মস্তিষ্কের আঘাত:
মস্তিষ্কের মুখের পেশী নিয়ন্ত্রণকারী অংশগুলোর ক্ষতি হওয়ার কারণে মুখ দিয়ে লালা ঝরার সম্ভাবনা থাকে। এ ক্ষেত্রে খাবার খেতে সমস্যা বা বিলম্ব হতে পারে।

নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের কারণেও লালা ঝরতে পারে:
এমন কিছু ওষুধ রয়েছে, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে মুখ দিয়ে লালা ঝরার সম্ভবনা থাকে। এ ধরনের ওষুধের মধ্যে রয়েছে- প্রশমক বা অস্থিরতা, উদ্বেগ, উত্তেজনা কমাতে এবং মানসিক শান্তির জন্য সেবন করা ওষুধের কারণে মুখ দিয়ে লালা পড়তে পারে। এছাড়া অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ, আলঝাইমার রোগের চিকিৎসার জন্য সেবন করা ওষুধ, ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগের (NSAIDs) কারণেও লালা ঝরে।

মুখ দিয়ে লালা ঝরা বন্ধের উপায়:
ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তন করা:

বুক বা পেটে ভর দিয়ে ঘুমানোর পরিবর্তে পিঠে ভর দিয়ে ঘুমানোর অভাস করুন বা উচু বালিশ ব্যবহার করুন। এতে মুখে লালা জমা ও বেরিয়ে যাওয়া রোধ হবে।

অন্তর্নিহিত অবস্থার চিকিৎসা:
অ্যাসিড রিফ্লাক্স, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা সাইনাস সংক্রান্ত রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন। এতে উল্লেখযোগ্যভাবে লালা পড়া কমতে পারে।

সেবন করা ওষুধ নিয়ে বিবেচনা করা:
কিছু ওষুধ রয়েছে, যা সেবনের পর লালা পড়া শুরু হয় বা লালা বৃদ্ধি হয়। কিছু ক্ষেত্রে পেশী নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে থাকে। সেসব ওষুধের কারণে যদি লালা পড়া শুরু হয়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

 

স্পিচ থেরাপি:
একজন স্পিচ থেরাপিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখুন। মুখ ও গলার পেশী শক্তিশালী করার জন্য থেরাপিস্ট আপনাকে কিছু ব্যায়াম শেখাতে পারেন, যা আপনাকে ভালোভাবে গিলতে ও লালা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

Advertisement

বোটক্স ইনজেকশ বিবেচনা করা:
বোটক্স এমন চিকিৎসা পদ্ধতি, যা লালা তৈরির গ্রন্থিগুলোকে সাময়িকভাবে শিথিল করে লালা উৎপাদন কমাতে পারে। বিশেষ করে স্নায়ুর কারণে যদি লালা পড়ে থাকে। আর সবশেষ যেকোনো অবস্থায় সমস্যা বাড়তে থাকলে বা জটিল আকার ধারণ করলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।