মুরাদনগরে আলোচিত ‘ধর্ষণকাণ্ড’ ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনের নেতৃত্বে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও করা হয়

SHARE

কুমিল্লার ঘটনায় গ্রেফতার সুমনসহ (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়) আসামিরা। ছবি: সংগৃহীত

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কুমিল্লার মুরাদনগর প্রতিনিধি,রোববার   ২৯ জুন ২০২৫ ||  আষাঢ় ১৫ ১৪৩২ :

কুমিল্লার মুরাদনগরে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণকাণ্ডের মূল রহস্য ধীরে ধীরে উদঘাটিত হচ্ছে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে। রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সুমনের নেতৃত্বে নারীকে ওইদিন বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করা হয়। স্থানীয় লোকজন, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের ওই নারীর স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী। তার সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল স্থানীয় যুবক ফজর আলীর। সেই সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করেন ফজর আলী। তাকে ধরতে ছাত্রলীগ নেতা সুমনের নেতৃত্বে কয়েকজন ফাঁদ পাতে। পরে পরিকল্পনামাফিক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, এটা স্রেফ একটা পরকীয়ার ঘটনা। ফজর আলীর সঙ্গে ওই নারীর দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়ার সম্পর্ক চলছিল। বৃহস্পতিবার ফজর আলী ওই বাড়ির দিকে রওনা করলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে হাতেনাতে ধরার জন্য ফাঁদ পাতে। এ সময় ফজর আলী ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করলে ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনসহ তার সঙ্গীরা তাদেরকে হাতেনাতে আটক করে। প্রথমে ফজর আলীকে বেধড়ক পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। এসময় ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে পরিকল্পিতভাবে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আমরা এ ঘটনায় জড়িত সুমনসহ সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। পরকীয়ার ঘটনায় জড়িত ফজর আলীর বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

Advertisement

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল করিম বলেন, আমরা আগে থেকেই জানি ফজর আলীর সঙ্গে ওই নারীর পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি সেদিন রাতে মূলত ফজর আলী এবং ওই নারী পারস্পরিক সম্মতিতে ওই ঘরে ছিলে। কিন্তু তাদেরকে হাতেনাতে ধরার জন্য নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন ফাঁদ পেতে থাকে। তার সঙ্গে আরো ১০-১২ জন নেতাকর্মী ছিল। পরিকল্পিতভাবে ওই নারীকে বিবস্ত্র করা, নির্যাতন করা সব কিছুর নেপথ্যের নায়ক ছাত্রলীগ সভাপতি সুমন। আমরা শুনেছি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। তার নেতৃত্বে যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা তাদের শাস্তি দাবি করছি। পাশাপাশি ফজর আলীর বিরুদ্ধেও বিচার দাবি করছি।

আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনকে ফুল দিচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতা সুমন (ডানে)। ফাইল ছবি

Advertisement

https://www.facebook.com/share/p/1NT3RTcPAN

স্থানীয় বাহেরচর এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ছাত্রলীগ নেতা সুমনের নেতৃত্বে একদল বখাটে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নানা অপকর্ম করে আসছে। তারা রাতের অন্ধকারে গ্রামের অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে শুধু এসব খুঁজে বেড়ায়। কার ঘরে কে প্রবেশ করছে এবং কে পরকীয়ায় লিপ্ত হচ্ছে এসব ধরার জন্যই তারা ফাঁদ পেতে থাকে। এগুলোকে ফিটিং কেস বলা হয়। এসব করে তারা মানুষকে জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

তবে এ বিষয়ে স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললেও তারা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।