ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি, রোববার ১৫ জুন ২০২৫ || আষাঢ় ১ ১৪৩২ :
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে “ঘরের ইঁদুর বেঁড়া কাটে।” অর্থাৎ, বিপদে পাশে দাঁড়ানোর কথা যাদের, তারাই অনেক সময় আঘাত করে সবচেয়ে গভীরে। মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনীতিতে এবার যেন হুবহু সেই প্রবাদটাই বাস্তব হয়ে দেখা দিল। ইরান যখন ইসরায়েলের সঙ্গে এক ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি, ঠিক তখনই পেছন থেকে ছুরির ঘা মারে এক সময়ের মুসলিম প্রতিবেশী-জর্ডান।
Advertisement
যখন ইরান-ইসরায়েল হামলা-পাল্টা-হামলার এক ভয়ঙ্কর দিকচক্রবাল শুরু হয়েছে, তখন জর্ডান তার আকাশপথ খুলে দিয়েছে ইসরায়েলের জন্য! হ্যাঁ, ভুল শোনেননি। আরব বিশ্বের এক সময়ের সহমর্মী দেশ, এবার দাঁড়িয়েছে পুরোপুরি বিপরীত মেরুতে।
এর আগেও বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে জর্ডান, কখনো ফিলিস্তিনে ত্রাণ পাঠানো পরিবহন থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, কখনো ইসরায়েলকে ছায়াসঙ্গীর মতো সহায়তা। এবার তো প্রকাশ্যেই, ইরানের দিক থেকে আকাশ বন্ধ করে রেখে, ইসরায়েলকে দিয়েছে সরাসরি সামরিক সুবিধা। আর এখন যখন ইসরায়েল চাইছে, তখনই খুলে দিয়েছে আকাশপথ- যেন একদম সাজানো নাটকের দৃশ্য।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানায়, জর্ডানের বেসামরিক বিমান চলাচল কমিশন ১৪ জুন সকালে জানিয়েছে, তারা আবারও আকাশপথ উন্মুক্ত করেছে। অথচ এর ঠিক আগের দিনই ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার জেরে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল তারা।
অথচ, জর্ডানের সরকারি মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-নোমানি বলেছিলেন, আমাদের আকাশ কারও যুদ্ধক্ষেত্র হবে না। কাউকে আকাশপথ লঙ্ঘন করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। আকাশের উপর দিয়ে উড়ে গেছে যুদ্ধবিমান, ছুটেছে ক্ষেপণাস্ত্র…আর জর্ডান ছিল নীরব দর্শক, নয়তো নীরব সমর্থক।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইসরায়েল প্রায় ২০০ যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানের ১০০টির বেশি স্থাপনায় হামলা চালায়। এ হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের সেনাপ্রধান, বিপ্লবী গার্ডের প্রধান, ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং অর্ধশতাধিক সাধারণ মানুষ। হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, সামরিক ইনস্টলেশন ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার হৃদয়স্থল।
Advertisement
পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি ইরান। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামে চালায় ভয়াবহ প্রতিশোধ। প্রায় ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায়। বহু সামরিক ঘাঁটি, ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং বসতবাড়ি ধ্বংস হয়। বেসামরিক হতাহতের সংখ্যাও বেড়ে চলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন আর যুদ্ধ শুধু ফ্রন্টলাইনে নেই। রাজনৈতিক আকাশপথেও শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশের নতুন খেলা। আর সেই খেলায় যারা ছিল ভাইয়ের মতো, তারাই আজ ছুরির মতো ধারালো।
