সরাসরি: ইসরায়েলে ছোড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করছে মার্কিন সেনাবাহিনী (ভিডিও)

SHARE

https://www.youtube.com/live/FRbFJkQuwuQ?si=i2zuXbxlSMqp4lYS

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি, রোববার   ১৫ জুন ২০২৫ ||  আষাঢ় ১ ১৪৩২ :

ইসরায়েলে ছোড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করছে মার্কিন সেনাবাহিনী

Advertisement

 

 

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, শনিবার রাতভর ইসরায়েলের দিকে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।

ইসরায়েলি সামরিক সূত্র ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছে, তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক নেতৃত্বের ওপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পাল্টা হামলা মোকাবিলায় মার্কিন বাহিনী আকাশে, সমুদ্রে এবং স্থলে অভিযান পরিচালনা করছে।

 

সূত্র অনুসারে, ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরান চারটি পৃথক ব্যারেজে প্রায় ২০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, সেই সাথে ২০০টিরও বেশি ড্রোনও নিক্ষেপ করেছে।

 

ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর আগেই, সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকার লক্ষ্যে মার্কিন বাহিনী ইতিমধ্যে এই অঞ্চলে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী জাহাজ এবং স্থল-ভিত্তিক বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনী ও স্থাপনাগুলোকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

 

তবে, গত বছর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময়ও ইসরায়েলকে একই রকম সহায়তা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

বর্তমানে, এই পর্যায়ে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেনি। তবে পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে যে, ইসরায়েলে ইরানের সর্বশেষ পাল্টা হামলার সময় বেশ কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন বাহিনী ভূপাতিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়টসহ স্থল-ভিত্তিক একাধিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় ভূমিকা রাখছে। এই ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উপসাগরীয় রাজ্য জর্ডান এবং ইরাকসহ এই অঞ্চলজুড়ে একাধিক স্থানে স্থাপন করা হয়েছে।

 

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ইসরায়েলকে দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসকারী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘থাড’ দিয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার পর বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করে। ইসরায়েল তাদের ‘অ্যারো’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে একত্রে ‘থাড’ ব্যবহার করে থাকে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজগুলোও ইসরায়েলে ছোড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। গত বছর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময়ও ভূমধ্যসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইসরায়েলের সুরক্ষায় একই রকম পদক্ষেপ নিয়েছিল।

 

পেন্টাগনের মতে, মার্কিন বাহিনীর ভূপাতিত করা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা এখনও মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

ইরানের বেসামরিক নাগরিকদের হুমকি দিল ইসরায়েল

 

ইসরায়েল এবার ইরানের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার হুমকি দিয়েছে। আজ রবিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে বলেছে, ইরানের জনগণকে অস্ত্র উৎপাদনকারী কারখানা ও ‘সহায়তা প্রতিষ্ঠান’ থেকে দূরে থাকা উচিত।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ফার্সি ভাষার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের পোস্টে ইরানের নাগরিকদের এই হুমকি দিয়েছে।

পোস্টে বলেছে, “সব ইরানি নাগরিকের প্রতি জরুরি সতর্কতা: বর্তমানে বা নিকট ভবিষ্যতে সামরিক অস্ত্র উৎপাদনকারী কারখানা এবং তাদের সহায়তা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে থাকা সকল ব্যক্তিদের অবিলম্বে এই এলাকাগুলো ছেড়ে যাওয়া উচিত এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ফিরে আসা উচিত নয়।”

ইরানকে পরমাণু আলোচনার প্রস্তাব জার্মানি-ফ্রান্স-যুক্তরাজ্যের

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাৎক্ষণিক আলোচনা করতে জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য প্রস্তুত। খবর ওয়াইটি নিউজের

মধ্যপ্রাচ্য সফরে থাকা জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত কমাতে অবদান রাখার চেষ্টা করছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ইরান এর আগে গঠনমূলক আলোচনায় যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানালেও, তিনটি ইউরোপীয় শক্তি তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।

শনিবার রাতে জার্মান টিভি এআরডিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াদেফুল বলেন, “আমি আশা করি এটি এখনও সম্ভব। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জার্মানি প্রস্তুত। আমরা ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাৎক্ষণিক আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছি। আমি আশা করি প্রস্তাবটি গৃহীত হবে।”

তিনি আরো বলেন, “ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বন্ধ করা এই অঞ্চলকে শান্ত করার জন্য এবং ইরান যাতে ইসরায়েল বা ইউরোপের জন্য কোনো হুমকি তৈরি না করে, তা নিশ্চিত করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত তীব্র হওয়ার মধ্যে আলোচনার এই আহ্বান জানানো হলো।

ইসরায়েলের ‘বর্বর’ হামলার কথা উল্লেখ করে ইরান ওমানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এমন একটি পরমাণু আলোচনা বাতিল করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ইতিমধ্যে বলেছেন, দেশটি হামলার মুখে থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের আলোচনা এগোতে পারে না।

৩ ইউরোপীয় শক্তির প্রস্তাবের বিষয়ে ইরান এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

এবার ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হুতিরা

ইরানের সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি। শনিবার (১৪ জুন) রাতভর ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হুতিরা। আক্রমণের ফলে ইসরায়েলিরা বারবার আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যেতে বাধ্য হয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনের তথ্যমতে, শনিবার (১৪ জুন) ইরানজুড়ে দ্বিতীয় দিনের মতো সামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। জবাবে রাতভর ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যেই শনিবার রাতে ইসরায়েলে হামলা চালায় ইয়েমেনের হুতিরা।

হুতির হামলার কথা নিশ্চিত করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলোকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইয়েমেন থেকে ছোড়া হয়েছে। হুতি বিদ্রোহীরাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আল মাসিরাহ টিভিতে প্রচারিত এক বিবৃতিতে হুতি জানিয়েছে, ইরানি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে এই হামলা চালানো হয়েছে এবং এতে বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিন-২ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, লক্ষ্যবস্তুগুলো ‘অধিকৃত জাফা অঞ্চলে ইসরায়েলি শত্রুর’ ‘সংবেদনশীল’ স্থান ছিল।

টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, শনিবার রাতভর ইসরায়েলে হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো প্রায় ২০০ জন।

ইরানে আবারো হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের বাহিনী ‘পশ্চিম ইরানে আরো একটি আক্রমণ সম্পন্ন করেছে’। গত এক ঘণ্টায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা ও অন্যান্য সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে। খবর আল জাজিরার।

ইরানের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

এর আগে শনিবার রাতে ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ভবন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, শাহরান তেল ডিপো ও একাধিক গ্যাসফিল্ডে বিমান হামলা সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানায় ইসরায়েল। এসব হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাতভর ইসরায়েলজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান।

রবিবার ইরানের সামরিক বাহিনী সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রাখলে ইরানের পাল্টা হামলা আরো ‘কঠোর’ হবে।

মূলত এরপরপরই ইরানে নতুন করে ইসরায়েলি হামলার এই খবর এলো।

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের মধ্যে কানাডায় জড়ো হচ্ছেন জি-৭ নেতারা

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে কানাডায় জড়ো হচ্ছেন গ্রুপ সেভেন বা জি-৭ এর সদস্য দেশগুলোর নেতারা। এই সম্মেলনে সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধাবস্থা।

জি-৭ নেতাদের মধ্যে কানাডায় প্রথম পৌঁছেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাজ্যের সামরিক সরঞ্জাম আরো বাড়ানো হচ্ছে।

এটি মূলত যুক্তরাজ্যের ওই অঞ্চলে উপস্থিতি পাকা করার উদ্দেশ্যে, যদিও তাদের উপস্থিতি খুব বড় নয়, তবুও মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে তাদের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।

আলজাজিরা লিখেছে, এটি থেকেই বোঝা যায় জি-৭ দেশগুলোর সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো, এই সংঘাত আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে, আরো তীব্র হতে পারে। এটি শুধু সামরিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে; কারণ এই অঞ্চলেই বিশ্বের প্রধান তেল ও গ্যাস মজুদের উৎস রয়েছে।

তবে এই বৈঠকে শুধু জি-৭ নেতারাই উপস্থিত থাকবেন না, আরো আটটি আমন্ত্রিত দেশের নেতারাও থাকছেন। এসব দেশের মধ্যে ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউরোপীয় দেশগুলো বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়, বরং তারা ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে আসছে। ফলে বৈঠকের টেবিলে বিভিন্ন ধরনের মত থাকবে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠকে সবাই যাকে প্রভাবিত করতে চাইবে, তিনি হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ এই বৈঠকে উপস্থিত একমাত্র ব্যক্তি ট্রাম্প, যিনি বাস্তব পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনতে পারেন।

অবশ্য ইসরায়েল ও ইরান কোনো দেশই এই সম্মেলনে থাকবে না।

কিন্তু চাইলে ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারেন। এমনকি তিনি ব্যক্তিগত বা প্রকাশ্যভাবে নেতানিয়াহুকে ইরানে বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলতে পারেন। অবশ্য বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আদৌ কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কথা শুনবেন?

Advertisement

ইরানের আকাশে বিমান চলাচল বন্ধ বেলা ৩টা পর্যন্ত

ইরানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ তাদের দেশের আকাশসীমা বিমান চলাচলের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত রবিবার (১৫ জুন) বেলা ৩টা পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ বলেছে, যাত্রীদের ইরানের বিভিন্ন বিমানবন্দরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে এবং সর্বশেষ তথ্যের জন্য সংস্থার ওয়েবসাইটে নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ইসরায়েলে দ্বিতীয় দিনের মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। ইসরায়েলও ইরানে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, শনিবার সারা রাতই ইসরায়েল ও ইরান পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা-পাল্টা হামলা চালিয়েছে। রবিবার (১৫ জুন) ভোরে ইরান তেল আবিব, জেরুজালেম, বাত ইয়াম, রেহোভট ও হাইফা শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে।

ইসরায়েলও দাবি করেছে যে, রবিবার তারা তেহরানের একটি পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।

শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত যা যা ঘটেছে:

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৩৯ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৩৯) জানায় যে, তারা তেহরানে বিমান হামলা চালিয়েছে। ওই হামলায় তারা ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের সাথে জড়িত একটি ভবন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে আঘাত করার দাবি করে।

শনিবার রাতে এক দফা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর পর রবিবার ভোরে ইসরায়েলের কয়েকটি শহরে আবারো হামলা করেছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, এই দফায় ইরান ‘ব্যাপক ড্রোন হামলা’ চালিয়েছে। মধ্য ইসরায়েলের বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি তাদের খবরে জানিয়েছিল যে, ইসরায়েলের তেল আবিব ও হাইফা শহরে ‘একশোর বেশি ক্ষেপণাস্ত্র’ হামলা করা হয়েছে।

ইরানের তেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শাহরান তেল ডিপোতে ইসরায়েল হামলা করেছে।

ইসরায়েল দক্ষিণ ইরানের দুটি গ্যাসফিল্ডেও বিমান হামলা চালানোর দাবি করেছে।

শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত ইরানের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ৮ জন মারা গেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের হামলায় ইরানে কতজন মারা গেছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে না জানা গেলেও ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমের ইস্ট আজারবাইজানের গভর্নর ৩০ জন সেনা সদস্যসহ মোট ৩১ জনের মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।

রাতভর ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় নিহত ১০, আহত ২০০

ইসরায়েলজুড়ে শনিবার মধ্যরাত ও রবিবার ভোরে দুই দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো প্রায় ২০০ জন।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, শনিবার রাতে উত্তর ইসরায়েলে ইরানের প্রথম দফার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চারজন নিহত এবং কমপক্ষে ২৪ জন আহত হয়েছেন। উত্তর ইসরায়েলের বাড়িতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সরাসরি আঘাতে ২০ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

দমকলকর্মীরা উত্তর ইসরায়েলের একটি তিনতলা ভবন থেকে চারজনকে উদ্ধার করেছেন, তবে তাদের মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

রবিবার ভোরে ইরানের দ্বিতীয় দফার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় মধ্য ইসরায়েলে আরো ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন মধ্য ইসরায়েলের বাত ইয়াম, রেহোভট, তেল আবিব এবং জেরুজালেমে সরাসরি আঘাত হেনেছে।

ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মেগান ডেভিড আদম জানিয়েছে, বাত ইয়ামে একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর ৩৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

ইরানি হামলায় বাণিজ্যিক রাজধানী তেলআবিব এবং রামাত গানেও বেশ কিছু অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে সেখানকার হতাহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি।

ইসরায়েলি বাহিনী তেহরানে হামলা অব্যাহত রাখলে আরো কঠোর পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান।

রাতভর ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা, নির্ঘুম দুই দেশ

ইরানে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার জবাব দিচ্ছে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শিয়াপ্রধান দেশটি। হামলা ও পাল্টা হামলায় চরম পরিস্থিতি বিরাজ করছে দুই দেশে, সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। শনিবার রাতভর দুই দেশ পরস্পরের মাটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান থেকে বোমা হামলা চালিয়েছে। দুই দেশের উৎকণ্ঠিত কয়েক কোটি মানুষ পার করেছে নির্ঘুম এক অনিশ্চয়তার রাত।

বিবিসি, আলজাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সর্বশেষ খবরে বলা হচ্ছে, হামলা ও পাল্টা হামলা অব্যাহত রয়েছে। শনিবার রাতে (১৫ জুন) ইরানের হামলায় ইসরায়েলে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে।

শনিবার রাতে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ পারমাণবিক প্রকল্পের স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালানোর পর ইরান পাল্টা হামলা চালায় এবং এরপর থেকে তেল আবিব ও জেরুজালেমে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন, বিস্ফোরণের শব্দ এবং প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা জোরদার করেছে ইসরায়েল।

তেল আবিবে হামলার পর আগুনে জ্বলতে থাকা ভবনের ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ছে। এসব ভিডিও যথাযথভাবে যাচাই করা যায়নি বলে খবরে লিখেছে দ্য গার্ডিয়ান। তবে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কিছু দৃশ্য তেল আবিবের পরিচিত রাস্তায় ধারণ করা।

ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ‘বহুবার আঘাত’ করেছে। ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, তেল আবিবে রকেট ও এর খণ্ডাংশ পড়ে কিছু ক্ষতি হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ইরানের দুটি তেল পরিশোধনাগারে আগুন লেগেছে, যার একটি শাহরানে এবং অন্যটি দক্ষিণ তেহরানে; এই দুই স্থানে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে।

এক বিবৃতিতে ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী জানিয়েছে, তাদের অভিযান “আরো তীব্র ও ব্যাপক হবে, যদি এই নৃশংসতা ও হামলা অব্যাহত থাকে।”

এর আগে ইসরায়েল উত্তরাঞ্চলে ‘শত্রু বিমান অনুপ্রবেশের’ সতর্কতামূলক সাইরেন বাজিয়েছিল।

ইরানের আগের হামলায় ইসরায়েলের তামরায় নিহত চারজন নারী একই পরিবারের সদস্য ছিলেন বলে নিশ্চিত হয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

জেরুজালেম পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, নিহতরা ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিক; তারা হলেন- মানার আল-কাসেম আবু আল-হেইজা খতিব, তার দুই মেয়ে হালা (১৩) ও শাদা (২০) এবং তাদের আত্মীয় মানার দিয়াব খতিব।

ইরানের সর্বশেষ হামলায় তেল আবিবের অন্তত দুটি স্থান ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর ইসরায়েলের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষ এবং আহতদের উদ্ধার করতে জরুরি সেবাগুলো কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম বলছে, আহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং এখন পর্যন্ত ৬০ জনের বেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঢেউয়ে ইসরায়েলে অন্তত একজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন।

জরুরি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা জানিয়েছে, তেল আবিবের দুটি এলাকা- রেহোভোট ও বাত ইয়াম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেখানেই ‘বিভিন্ন মাত্রায়’ ২০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম বলছে, বাত ইয়ামে এক ষাটোর্ধ্ব নারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ।

একটি ছবি বর্তমানে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা ইসরায়েলি গণমাধ্যম ‘মধ্য ইসরায়েল’ বলে বর্ণনা করেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান মুখপাত্র এফি ডেফ্রিনকে উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে,  “এই মুহূর্তে বিমানবাহিনীর পাইলটরা ইরানের বিভিন্ন এলাকায় ভয়ানক ও তীব্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।”

তিনি বলেছেন, ইরানে ৪০ ঘণ্টা ধরে অভিযান চলছে। একের পর এক হামলা চলছে এবং ১৫০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্‌টায় হামলার কেন্দ্রবিন্দুতে তেহরান রয়েছে।

Advertisement

ডেফ্রিনের একটি ভিডিও বার্তা ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যেখানে তাকে বলতে শোনা গেছে, ইসরায়েলের বাহিনী পশ্চিম ইরানের একটি ভূগর্ভস্থ স্থানে আঘাত করেছে। ডেফ্রিনের দাবি, এই স্থানটি ভূমি থেকে ভূমিতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণ ও নিক্ষেপের জন্য ব্যবহার করে ইরান।