ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),চাঁদপুর প্রতিনিধি, বুধবার ০৪ জুন ২০২৫ || জ্যৈষ্ঠ ২১ ১৪৩২ :
চাঁদপুরে এক বাগানে ৫৭ জাতের বিদেশি আম ফলিয়ে চমক সৃষ্টি করলেন কৃষি উদ্যোক্তা সিনিয়র সাংবাদিক হেলালউদ্দিন। তার বাগানে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে নানা আকার আর রঙবেরঙের আম। ছোট্ট ছোট্ট আম গাছের মাঝে আবার রয়েছে পোকা মাকড় দমনে ব্যবহৃত পট ও প্লাস্টিক। মূলত আমকে বিষমুক্ত ও নিরাপদ রাখতেই এমন ব্যবহার শুরু করে সাড়া ফেলেছেন তিনি।
সরেজমিনে কাঁটা তারে বেষ্টনী দেয়া ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোতে গেলে চোখে পড়বে, বাগানের গাছে ঝুলছে নানা আকারের আম। কোনো প্রকারের কীটনাশক ব্যতীত ডাকাতিয়া নদীর তীরে চাঁদপুর সদরের শাহাতলীতে পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিত্যক্ত ইটভাটায় বালির ওপর মাটি ফেলে ৫৭ জাতের বিদেশি উচ্চ মূল্যের আম চাষ করে সবার নজর কেড়েছেন উদ্যোক্তা মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন।
Advertisement
পরীক্ষামূলক গবেষণাধর্মী এই আম চাষাবাদের স্থানটির তিনি নাম দিয়েছেন ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো। যেখানে বর্তমানে ২৫০০ এর অধিক নানা জাতের নামি-দামি বিদেশি আম গাছের চারা রয়েছে। তবে ভালো ফলন হচ্ছে কিনা এবং ফলন লাভজনক কিনা? সেটাই এখানে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে দেখছেন এই উদ্যোক্তা।
এরইমধ্যে তার আম বাগান ঘুরে দেখেছেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন, পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবু তাহের, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকতসহ আরও অসংখ্য দর্শনার্থী। তারা দেশের মাটিতে এমন ব্যতিক্রমধর্মী এবং দুর্লভ জাতের আম ও বাগান দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বাগানের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন বলেন, ‘এখানে ভ্যালেন্সিয়া প্রাইড, লেমনযেস্ট, বেইলি মার্বেল, রোসারোসা, সানসেট, আতাউল্ফ, কারাবাও, আলফানসো, গ্লেইন, হাডেন, মায়া, সেনসেশান, অস্টিন, অস্টিন গোল্ড, আর-টু ই-টু, ক্যাংসিংটন প্রাইড, ঝিইল, টমি এ্যাটকিনস, রেড আইভরী, কিং অব চাকাপাত, মিয়াজাকি, জাম্বো রেড চাকাপাত, ব্ল্যাকস্টোন, থ্রিটেস্ট, কেন্ট, কেইট, পালমার (ফ্লোরিডা), চিলি ম্যাংগো, কেষার, পুষা আম্বিকা, পুষা অরুনিমা, পুষা সুরাইয়া,মল্লিকা, তোতাপুরি, হানিডিউ, নামডকমাই, নামডকমাই সিমওয়াং, গোল্ডেন নামডকমাই, আপেল ম্যাংগো, মহাচানক, চিলতাখাস, ক্যারিই, ওকরংথন (চায়নিজ), এসআর ম্যাংগো, কাটিমন, হানিডিউ, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, ফ্রাংসিস, থাই কাঁচামিঠা, বারি-৪, গৌরমতি ইত্যাদি আমের জাতের চাষাবাদ করে সফল হচ্ছি।’
মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন আরও বলেন, ‘বিদেশে আম রফতানিতে প্রধান শর্ত ফ্রুট ব্যাগিংয়ের ব্যবহার করা হচ্ছে এখানে। আম ফ্রেশ রাখতে ৫০ গ্রাম ওজনের সময় থেকেই এখানে ফ্রুট ব্যাগিং করা হচ্ছে। খরচ কমিয়ে কীভাবে আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে উচ্চ মূল্যের বিদেশি আম চাষে লাভবান হওয়া যায় সে তথ্য ছড়িয়ে দিতেই আমি কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘গত বছরে ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো হতে ৪৭ জাতের এই আম বিক্রি করে প্রায় ৬ লাখ টাকা আয় করেছি। তবে এবার আরও ১০ জাতের আমের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ বাড়িয়ে মোট ৫৭ জাতের আম এখানে উৎপাদন করে বিক্রির টার্গেট রেখেছি প্রায় ৮ লাখ টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে ২৭ জাতের সাইট্রাস (কমলা, ম্যান্ডারিন, মাল্টা, লেমন), ২১ প্রজাতির আঙ্গুর, ১৪ প্রজাতির লংগান ফল, ৪ প্রজাতির রাম্বুতান, ম্যাগোস্টিন, ৭ প্রজাতির ড্রাগন ফল, ৭ প্রজাতির লিচু, ৭ প্রজাতির এভাকাডো, ৬ প্রজাতির আতা ফল, ৫ প্রজাতির আপেল ছাড়াও আছে ক্যান্সার প্রতিরোধক করোসল, এপ্রিকট, মাম্মি সাপুটে, ব্ল্যাক সাপুটে, পামেলো, নতুন জাতের বরই, পেঁপে, কলা, খেজুরসহ আরও ৩৭ প্রজাতির ফল ফলাদি চাষাবাদ করছি। এগুলো যে কেউ এখানে চাষাবাদ সম্পর্কে জেনে চারা কিনে নিজেও চাষাবাদ করে সফল হতে পারবেন। এমনটাও জানান তিনি।
ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর বেশ কয়েকজন কর্মচারী জানান, আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা, কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক ছাড়াই ৯ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত আম সংরক্ষণ করা, বৃষ্টিতে আমের গায়ে ছত্রাক দমন এবং চারা উৎপাদন পরিচর্যাসহ ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে এখানে কাজ করা হয়। দূর-দূরান্তের মানুষ এখানে এসে ফল প্রদর্শনী দেখে কিনে খায় ও বাড়িতে নিয়ে যায় যা দেখে ভালো লাগে।
আমবাগান দেখতে আসা রুবেল হোসেন নামের একজন জানান, অনেকেরই অপরিচিত অথচ নানা আকারের সুমিষ্ট এখানে রয়েছে। এই আম দেখতে এবং সংগ্রহ করতে এখানে এসেছি। আগেও একবার এখান থেকে আমের চারা ক্রয় করে বাড়িতে লাগিয়ে ভালো ফলন পেয়েছি। আলোচিত বিষয় হচ্ছে, এখানে ৪/৫ লাখ টাকা দামেরও আমের চারা গাছ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন বলেন, ‘চাঁদপুরে এমন একজন উদ্যোক্তা সারা দেশের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। কারণ, পরিত্যক্ত ইটভাটার পতিত জমি কাজে লাগিয়েছেন মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন।’
Advertisement
পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, ‘অর্গানিক পদ্ধতিতে এভাবে চাষাবাদ করলে মানুষ রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে পারবে।’
এ বিষয় বিস্তারিত আরও জানতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চাঁদপুরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবু তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন নামের এই উদ্যোক্তার ৫৭ জাতের পরীক্ষামূলক বিদেশি আমের চাষাবাদকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে তাকে কৃষি গবেষণার সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে করে দেশব্যাপী এই আমের জাত ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের উপকার করতে পারেন।
